উপকূলে বেহাল দশায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো, স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী

কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, টিকাদান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করে থাকে। তবে অযত্ন-অবহেলা, অনিয়ম আর জরাজীর্ণ ভবনের কারণে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা বঞ্চিত হচ্ছে উপকূলবাসী।

কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্র জানা গেছে, উপজেলায় কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ৩০ টি। এগুলোর অধিকাংশই জরাজীর্ণ ও বেহাল দশা। কোন কোনটির ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। বর্ষাকালে ওই সব ক্লিনিকে বসে সেবা প্রদান করা সম্ভব হয় না। আবার কোনটির পলেস্তারা খসে পড়েছে। অনেকে ভয়ে ক্লিনিকে সেবা নিতেই যান না। এর মধ্যে অধিকাংশ কমিউনিটি ক্লিনিকেই রোগীদের প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা নেই।

অন্যদিকে উপজেলার ৩০ টি ক্লিনিকের মধ্যে শুধুমাত্র ২টি ব্যতীত বাকি সবগুলোতেই সিএইচসিপি (কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার) রয়েছেন। প্রতিটি ক্লিনিক সপ্তাহে ৬দিন খোলা থাকার কথা এবং সিএইচসিপির পাশাপাশি ৩ দিন করে একজন স্বাস্থ্য সহকারী ও একজন পরিবার পরিকল্পনা সহায়কের সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের কথা। তবে বাস্তবে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র।

সরেজমিনে উপজেলা সদর দক্ষিণ বেদকাশি, উত্তর বেদকাশী, মহেশ্বরীপুরের ঘড়িলাল, আংটিহারা, হড্ডা, কাটমারচর কমিউনিটি ক্লিনিকসহ কয়েকটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায় সেগুলো তালাবদ্ধ। স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্লিনিকের সিএইচসিপিরা সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিনের বেশি আসেন না। সকাল ১০টা থেকে ১১টায় এলেও নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই ক্লিনিক বন্ধ করে চলে যান।

এদিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর মদিনাবাদ কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ ও বেহাল দশা ভবনে সেবাপ্রত্যাশী নারীদের ভিড়। সেখানে সিএইচসিপির কাছে সমস্যার কথা বলে ঔষধপত্র নিচ্ছেন তারা। তবে সঙ্কটের কারণে ঔষধ পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ তাদের। কেউ কেউ বলছেন, ঔষধ দিলেও খুবই সামান্য ।

স্থানীয় আমেনা বেগম ও কুলসুম আরা বলেন, তারা সাধারণ অসুখ-বিসুখে এ ক্লিনিক থেকে ওষুধ নেন। তবে মাসের শেষের দিকে ওষুধ পাওয়া যায় না । সরকার ওষুধের বরাদ্দ বাড়ালে আমাদের জন্য ভাল হইতো।

মহারাজপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের শ্রাবণী বলেন, গোবিন্দপুর কমিউনিটি ক্লিনিকটা ভাইঙা চুইরে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে সেবা নিতে হয় আমাদের। বিল্ডিংটা ঠিক করা দরকার। নাইলে কোন দিন জানি ভাইঙা পড়ে যাব।

দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ঘড়িলাল গ্রামের আব্দুল আহাদ জানান, সিএইচসিপি প্রতিদিন ঠিকমতো আসেন না। মাঝে মাঝে আসেন। আসলেও দুপুরের আগেই ক্লিনিক বন্ধ করে চলে যান।

উত্তর মদিনাবাদ কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি প্রকৃতি গাইন বলেন, ক্লিনিকে ২৭ প্রকারের ওষুধ দেওয়া হয়। ২ মাসের জন্য সেগুলো দেওয়া হলেও তা ৬ হাজার মানুষের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এজন্য মাসের শুরুতেই তা শেষ হয়ে যায়। বিশেষ করে বাচ্চাদের সর্দি-জ্বর ও পাতলা পায়খানার সিরাপের চাহিদা বেশি থাকলেও তা পরিমাণে কম পাওয়া যায়। বরাদ্দ আর একটু বাড়ালে আমাদের জন্য ভালো হতো।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ মদিনাবাদ কমিউনিটি ক্লিনিকে যাতায়াতের রাস্তার না থাকাসহ অধিকাংশ ক্লিনিকে কাঁচা হওয়ায় বর্ষাকালে সেবা নিতে ভোগান্তিতে পড়েন। তাই ক্লিনিকে যাতায়াতের রাস্তা দ্রুত পাকা করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সালমা, মরিয়ম, আমেনা, আফিয়া একাধিক নারী বলেন, দুপুর না হইতেই তো ক্লিনিক বন্ধ হইয়া যায়। আমরা দুপুরে গেলে কখনও ক্লিনিক খোলা পাইনা। ১২ টায় বন্ধ হয়ে যায়। আর ঔষধ যা দেয়, তা খুবই সীমিত।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলেন, আমি এখানে সদ্য যোগদান করছি। খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহম্মেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরি করা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবার মান আরও বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। এতে সেবার মান আগের চাইতে অনেক ভালো হয়েছে। আশা করছি, সেবার মান আরও বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, জরাজীর্ণ ভবনগুলো মেরামতযোগ্য, ঝুঁকিপূর্ণ ও অতি ঝুঁকিপূর্ণ- এ তিন ক্যাটাগরিতে তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, এ বিষয়েও শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর বর্তমানে ওষুধের কোন সঙ্কট নেই। তবে সরকার যদি বরাদ্দের পরিমাণ আরও বাড়ায়, তাহলে জনগণকে আরও বেশি পরিমাণে ওষুধ দেওয়া সম্ভব হবে।





Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*