যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে হতাশ তারা এই লেখাটি পড়ুন

“জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলাপাইন আর কি করবে, ওরা পুরাই ব্যাকডেটেড।”

“কলেজ থেকে অনার্স করে আবার ভাল চাকুরী? পাশ করে বের হতে পারাটাই তো এক যুগের ব্যাপার।”

“যেখানে পাবলিক ভার্সিটির ছাত্রছাত্রীদেরই চাকুরী নাই সেখানে
ন্যাশনালের ওরা আর কি করবে।”

“পাবলিক ভার্সিটি, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে চান্স পাও নাই? তোমার ক্যারিয়ার এখানেই শেষ।”

কথাগুলো আমাদের সমাজে মোটামুটি খুব জনপ্রিয়। ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রী এবং যারা ভর্তি পরীক্ষার্থী, তাদের এইগুলো প্রায়ই শুনতে হয়। বিশেষ করে কোথাও চান্স না পেলে এবং নামীদামী প্রাইভেটে পরার সামর্থ্য না থাকলে কেউ যখন ন্যাশনালে পড়ার জন্যই বাধ্য তখন তার সামনে এই কথাগুলো আরো বেশী শোনানো হয়।

আচ্ছা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মানেই কি খারাপ? সেখানে যারা পড়ে তারা কি স্টুডেন্টের কাতারে পরে না? ওরা কি এসএসসি-এইচএসসি পাশ করে, ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ন্যাশনালে ভর্তি হয়নি?
…নাকি যারা এইচএসসি তে ফেইল করে শুধু তাদেরই ন্যাশনালে ভর্তি করানো হয়?
আচ্ছা একটা জিনিস ভাবুন তো-
ধরুন দুইটা ছেলে বা মেয়ে একটি পাবলিক ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিল যেখানে আসন সংখ্যা এক হাজার !

তারা দুজন একই কলেজ থেকে পাশ করা, দুজনই গোল্ডেন পাওয়া, দুজনই ভালোমতো প্রস্তুতি নিয়েছে।

ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেল একজন ১০০০ তম আরেক জন ১০০১ তম।

হয়তো দুজনের ভর্তি পরীক্ষার স্কোরের ব্যাবধান একটি প্রশ্নের মানের সমান ও হবে না।
অর্থাৎ ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো, সকালেও যারা পরীক্ষার হলে দুজন সমকক্ষ বা প্রতিদন্দ্বি ছিল রাতে রেজাল্ট দেওয়ার পর তাদের একজন হয়ে গেল পাবলিক ভার্সিটির মেধাবী (!) ছাত্র আরেকজন ন্যাশনালের বা প্রাইভেটের থার্ড ক্লাস (!) ছাত্র। তাইনা?

…ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট দেওয়ার সাথে সাথেই কি চান্স না পাওয়া ছাত্রটির সব মেধা হারিয়ে যায়? নাকি তার মেধাকে দমিয়ে রাখা হয় আমাদের নীচু মানের কথার আঘাতে। সবার বিবেকের কাছে প্রশ্ন রইলো।

আসলে মেধা কমে যায় না বরং মেধাকে বিকশিত হওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে চান্স না পাওয়া ছাত্র ছাত্রীরা হতাশার কারণে নিজেই নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে জীবনের চরম ভুলটা করে।

…পাবলিক ভার্সিটির সাথে পার্থক্যটা এই জায়গায়ই থাকে, যেখানে ভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীরা নিয়মিত পড়াশুনার মধ্যে থাকে, ন্যাশনালের স্টুডেন্টরা তেমন না আর ওদের টাইম ডিউরেশনটা বেশি হওয়ার ফলে নিজের স্পৃহাটা ধরে রাখতে পারেনা আর পড়াশুনার প্রতি অবহেলা করে।
যেহেতু ন্যাশনালে পাশ করে বের হতে সময় বেশী লাগে তাই চাকুরীর প্রস্তুতি নেওয়ার সময়টাও বেশী পাওয়া যায়, তাই আমার বিশ্বাস ন্যাশনালের ছাত্রছাত্রীরা যদি ”কোথাও চান্স পাই নি” ভেবে নিজেকে ছোট মনে না করে ”শুধু আসন সংখ্যার স্বল্পতায় চান্স পাইনি তাই বলে আমি একেবারে ফেলনা না, সময় মত দেখিয়ে
দিবো আমিও পারি” এই মানসিকতা নিয়ে ভর্তি পরীক্ষার আগে যেই স্পৃহা নিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছে সেভাবেই ভর্তির পর থেকেই নিজেকে তৈরী করে তাহলে ওরাও কোথাও ঠেকবে না এটা নিশ্চিত।

কারন,

…আমি দেখেছি যেখানে বুয়েট থেকে পাশ করেও বিসিএস দিয়ে ব্যার্থ হয় সেখানে বগুড়ার ”আজিজুল হক কলেজ” থেকে বিসিএস এ ফার্স্ট হয়।

…আমি দেখেছি যেখানে পাবলিকের স্টুডেন্ট বেকার ঘুরে সেখানে ন্যাশনালের স্টুডেন্ট সরকারী ব্যাংকে চাকুরি পায়।
বিশ্বাস না হলে বাংলাদেশের প্রশাসন, পুলিশ এবং বিভিন্ন সরকারি বেসরকারী কোম্পানি ও ব্যাংক গুলোতে খবর নিয়ে দেখ। সেখানে ভাল ভাল পদে ন্যাশনালের ছাত্র-ছাত্রীদের পরিমানটা দেখে হয়তো অবাক হয়ে যাবেন।

…আচ্ছা বাংলাদেশে পাবলিক ভার্সিটির গুলোর আসন তো মাত্র কয়েক হাজার কিন্তু ভাল চাকুরীর পদসংখ্যা এর কয়েক গুন বেশী তাহলে এ বাকি পদ গুলোতে কারা কাজ করবে?

তার মানে বুঝাই যায় যে পাবলিকে বা মেডিকেলে পড়লেই চাকুরী হবে আর বাকিরা ঘাস কাটবে, ব্যাপারটা মোটেও
তেমন না।

একটা জিনিস দেখ… কয়েকদিন আগেও সবাই জিজ্ঞাস করতো “রেজাল্ট কি?” এখন জিজ্ঞাস করে? করেনা। এখন
জানতে চায় “কোথায় চান্স পাইছো।”
তেমনি কয়েক বছর পর জিজ্ঞাস করবে “কি চাকুরী কর?”

কোথা থেকে পাশ করেছে এইটাও খুব একটা বিবেচ্য বিষয় হবে না।
এমনকি বিয়ের সময় ও যদি কেউ পাবলিকে পড়ে বেকার থাকে আর কেউ ন্যাশনালে পড়ে বিসিএস ক্যাডার হয়। নিশ্চিত করেই বলা যায় বিয়ের বাজারে ন্যাশনালে পড়া বিএসসি ক্যাডারের মূল্যই বেশি থাকবে।
…………
…………

তাই কোথাও চান্স না পাওয়া ছোট ভাই-বোনেরা ভেঙ্গে না পরে নিজেকে উজ্জীবিত কর। তোমার ভার্সিটির সুনামে
তুমি কেন চলবে বরং তোমার নিজের কারণে তোমার সাধারণ কলেজটিও

পরিচিতি লাভ করাবে।
নিজেকে অবহেলা কর না। নিজেকে যদি
নিজেই সম্মান দিতে না জান তাহলে অন্যের কাছে দাম পাবে না।

…হ্যা পিছনে টেনে রাখার মত কথা বলার অনেক মানুষই পাবে, তাই বলে সেগুলো কেয়ার করবে না!

এখন যে যা বলে বলুক, কর্ণপাত না করে নিজের অবস্থান থেকেই চুড়ান্ত যুদ্ধের প্রস্তুতি নাও এবং দেখিয়ে দাও আর যারা কিছু বলে তাদের বলে দাও-

”Keep calm and let me run according to my way, you don’t
have to think about me. Just oil your own machine now.
I know well about my potential and i’ll show my
excellence at the ultimate time.”

…দেখা হবে বিজয়ে।
গুটিয়ে নয়, চুটিয়ে বাঁচো।

সৌজন্যেঃ নাজমুল হোসেন





About লেখাপড়া বিডি ডেস্ক 1519 Articles
লেখাপড়া বিডি বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা বিষয়ক বাংলা কমিউনিটি ব্লগ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*