তারুণ্যে উদ্দীপ্ত বরেণ্য প্রবীণ বিদগ্ধজন ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ সংবর্ধনাগ্রন্থ, সম্পাদনা: মুহম্মদ মাহবুব আলী, ফোরকান আহমদ, উপদেষ্টা: শফি আহমেদ, পালক পাবলিশার্স, ঢাকা স্কুল অব ইকোনোমিক্স (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত প্রতিষ্ঠান (আয়োজন: ঢাকা স্কুল অব ইকোনোমিকস- এর উদ্যোক্তা অর্থনীতি বিভাগ, প্রথম প্রকাশ: মার্চ, ২০২২ খ্রি. মূল্য: এক হাজার দুইশত টাকা। পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৪৪৮।
মূলত: ঢাকা স্কুল অব ইকোনোমিকস উদ্যোক্তা অর্থনীতি ক্লাবের মডারেটর রেহানা পারভিন এবং উপদেষ্টা সারা তাসনীমসহ ছাত্র-ছাত্রীরা স্যারের জন্মদিন উপলক্ষে গ্রন্থটি প্রকাশনায় উদ্যোগী হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. কাজী খালীকুজ্জামান আহমদের বর্নাঢ্য কর্মজীবনের ওপর রচিত ‘তারুণ্যে উদ্দীপ্ত বরেণ্য প্রবীণ বিদগ্ধজন’ গ্রন্থের প্রকাশনা করে পালক পাবলিশার্স, ঢাকা স্কুল অব ইকোনোমিক্সের উদ্যোক্তা অর্থনীতি প্রোগ্রাম।
গ্রন্থে রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ ‘একজন কর্মবীর জ্ঞানতাপস’ নামে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সমূহ নির্ধারণে এই সব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পরিকল্পনা ও কর্মপন্থা নির্ধারণ জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণের অভিঘাত মোকাবিলা ও নারীর ক্ষমতায়নে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতি প্রণয়নে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বজন স্বীকৃত ভূমিকা রেখেছেন (পৃ:১৩)। তার বক্তব্যের মাধ্যমে ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ স্যারের সংক্ষিপ্ত কর্মকাণ্ডের বার্ড আই ভিউ ধরা পড়েছে। মো. আব্দুল করিম তার প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক এনজিও কার্যক্রম পরিদর্শন করছি তার সাথে। … তিনি গুণী ব্যক্তিদের সম্মান মর্যাদা অক্ষুণ্ন্ন রাখতে সচেষ্ট থাকতেন (পৃ: ১৭)।” অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান ধীমান ও প্রগতিশীল চিন্তাবিদ, জনকল্যাণে নিবেদিত মাঠের মানুষ, ব্যতিক্রমী অর্থনীতিবিদ, প্রতিষ্ঠান নির্মাতা, প্রিয়জন খলিক ভাইয়ের দীর্ঘজীবন ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি।’ তার এ কথা সর্বত: সত্য এ কারণে যে লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিক্স থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে বিদেশে চাকরি পি-৫ গ্রেডে পেয়েও না করে দেশের টানে, নাড়ির টানে ফিরে আসেন এবং দেশের নিঃস্ব, দরিদ্র মানুষের আত্ম উন্নয়নে সচেষ্ট হোন। দেশের উদ্যোক্তা মো. সবুর খান মন্তব্য করেছেন, ‘তিনি শুধু দেশটা স্বাধীন করার জন্যই যুদ্ধ করেননি, যুদ্ধ করেছেন এবং এখনও করছেন স্বাধীন দেশের অর্থনীতিকে শৃঙ্খলমুক্ত করতে (পৃ: ২৪)।’ শেখ ইকরামুল কবীর তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন যে, ‘সমাজ, পরিবেশ, দারিদ্র্য নিরসন ও সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য, কর্মসূচি গ্রহণ করার ব্যাপারে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। (পৃ: ৪০) তার এ উক্তি সর্বত: সত্য-মানবকেন্দ্রিক উন্নয়ন, গ্রামীণ-শহুরে অর্থনীতির উন্নয়ন এবং শিক্ষা-প্রশিক্ষণের বিস্তারে তার জুড়ি মেলা ভার। মো: ফজলুল কাদের মন্তব্য করেছেন, ‘সৃষ্টিশীল এ মানুষটি সম্প্রতি কবি ও গীতিকার হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেছেন (পৃ: ৪৫) তার রচিত গীতগুলোর চিত্রকল্প হচ্ছে মানুষকে ঘিরে, দেশপ্রেম উজ্জীবিত এবং এদেশের উন্নয়নের জন্যে একটি বার্তা বহন করে চলে। মো. জসীম উদ্দীন তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন যে, ‘তিনিই দেশের একমাত্র অর্থনীতিবিদ, যিনি একাধারে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ‘জাতীয় পরিবেশ পদক’ ‘একুশে পদক’ এবং জনসেবা ও সমাজসেবায় কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার- এ ভূষিত। তার বক্তব্য যথার্থ। ইমদাদুল হক তার প্রবন্ধে মন্তব্য করেছেন ‘সমৃদ্ধ অর্থনীতির পথে ধাবমান বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নতি, দেশ ও জনগণের কল্যাণের লক্ষ্যে আমরা ড. কাজী আতিক পারিবারিক পরিচয় তুলে ধরতে যেয়ে লিখেছেন, ‘তার যে পেশাদারী দায় দায়িত্ব এবং কর্মকাণ্ডের ব্যাপকতা, এমন মহাব্যস্ত একজন মানুষ হয়েও কতোখানি নিবেদিত প্রাণ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার এই বৃহত্তর পরিবারের খোঁজ খবর রাখা সম্ভব। তিনি তা করে যাচ্ছেন এবং নিরলসভাবেই (পৃ: ৮৮)।’
রেহানা পারভীন মন্তব্য করেছেন যে, ‘জটিল কোনো বিষয়কে সহজভাবে চিন্তা করা এবং সহজভাবেই তার সমাধান কীভাবে করা যায় তার চেষ্টা করার শিক্ষা আমি স্যারের কাছ থেকেই পেয়েছি (পৃ: ১১৮)।’
সাদিয়া ইসলাম ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ যথার্থ অর্থ ‘বাংলাদেশে একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র’ হিসাবে অভিহিত করেছেন।
সারা তাসনীম স্যারের একটি প্রকাশিত গ্রন্থের সমালোচনা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘দেশের আর্থ-সামাজিক সমস্যা চিিতকরণ, সমস্যার প্রকটতা বিশ্লেষণ, তৎকালীন উন্নয়ন কৌশল এবং ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রায় উল্লিখিত সমস্যার নিরসনকল্পে প্রস্তাবিত উন্নয়ন নীতিমালার আলোকে গ্রন্থটি শতভাগ কার্যকর ও সফলতার দাবিদার।’
মুহম্মদ নাজিম উদদৌল্লাহ তার প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘তার-চিন্তা চেতনার সবটুকু উজাড় করে দিতে থাকে বাংলাকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে (পৃ: ১৪৪)। তাইফুল হাসান তার কবিতায় লিখেছেন, ‘লিখে রাখে পরিচয় বঞ্চিত বর্গের ইতিহাস।’ এত প্রেম ছড়ায়নি ঈশ্বরের চোখের প্রদীপ (পৃ: ১৬২)। আবু সাঈদ খান লিখেছেন, ‘প্রভু তোমার অশেষ কৃপায় পুষ্পিত হোক/ আসমুদ্র-হিমাচল, হোক মঙ্গল এ ধরায়…।’
কবিতাটি অত্যন্ত চমৎকার। এম আসাদুজ্জামান তার প্রবন্ধে লিখেছেন যার ভাবার্থ করলে দাঁড়ায় যে, মানুষের ভাষ্য অনুযায়ী খলিক ভাইয়ের বয়স ক্রমশ প্রবীণের দিকে ধাবিত হচ্ছে। কিন্তু তার মন, চিন্তার জগৎ ও মনন এখনো কার্যকর এবং তারুণ্যে ভরপুর। অর্থনীতিবিদ, আনিসুল এম ইসলাম তার ইংরেজি প্রবন্ধে লিখেছেন যে, তিনি যেভাবে ছাত্র, শিক্ষক এবং বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্যে কাজ করে চলেছেন, তাতে দীর্ঘ জীবন পাওয়া উচিত। সাংবাদিক উম্মেল নীহার আজমী ঢাকা স্কুল প্রতিষ্ঠায় ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদের অকৃত্রিম ও গঠনমূলক কার্যক্রমের বিবরণী তুলে ধরেছেন।
গ্রন্থে ২০১৯ খৃ: ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ এর স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার পর ৪ঠা মে ২০০৯ খৃ: বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সংবর্ধনায় দেয়া বক্তব্য প্রথিত হয়েছে। তার অগণিত সাক্ষাৎকার থেকে মাত্র সাতটি সাক্ষাৎকার বেছে নেয়া হয়েছে- এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে এম এ খালেক এর।
ড. কাজী খলীকুজ্জামান এর ১০টি কবিতা এ গ্রন্থে আমরা গ্রন্থিত করেছি। এগুলোর চিত্রকল্পে দেশপ্রেম, মানব উন্নয়ন ও দেশের উন্নয়ন, অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমুজ্জ্বল। এছাড়া তার আটটি অসাধারণ সংগীত এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। গানের মাধ্যমে করোনাকালে মানুষকে উজ্জীবিত করার জন্যে তিনি লিখেছেন, ‘দরিদ্র অল্প আয়ের মানুষ আছে যারা/ কারোনায় দারিদ্র বাড়ছে আরও তারা/ দিনমজুর কৃষি-শ্রমিক প্রান্তিক কৃষক যারা/কায়িক শ্রমে জীবন টেনে দিন কাটাচ্ছে তারা।
সম্পাদনা করার সময়ে বিজয় দিবস স্মারক বক্তৃতা ২০০৮ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে- তিনি লিখেছেন যে, ‘দীর্ঘ অপশাসন দুর্নীতি ও নব্য উদারতাবাদের লেজুড়বৃত্তির ফলে সেই পথ আরও কণ্টকাকীর্ণ হয়েছে (পৃ: ৩১৪)।’ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দৈনিকে লেখা তার পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রচিত লেখা এ গ্রন্থে যুক্ত করা হয়েছে যাতে তার দেখানো পথ ধরে মানুষের মধ্যে সুকুমার বৃত্তির উন্মেষ ঘটে এবং যাপিত জীবনে সৎ থাকার পথ খুঁজে পাওয়া যায়। জীবন যেন প্রগতিময়, সাম্যভিত্তিক, অংশীদারিত্বমূলক, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও গ্রাম যেন শহরে পরিণত হয় এবং মানুষ যেন আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠে।
‘কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ: চলতে চলতে’ তে তার বিশাল কর্মযজ্ঞের সামান্য ছাপ মাত্র। গ্রন্থটিকে সাধারণ পাঠকদের কাছে বটবৃক্ষের মতো বিশাল ব্যক্তিত্বকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য নির্বাচিত কিছু আলোকচিত্র এর সংযোজন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমার ছেলে নাওয়াঝিশ মুহম্মদ আলী’র একটি উক্তি স্মর্তব্য। সে বলেছে, একটি আলোকচিত্র হাজার শব্দের ব্যাখ্যা দেয় -বিমূর্ত হয়ে উঠে মানুষের ভেতরের সকল ধরনের যাপিত জীবনের চালচিত্র।
গ্রন্থটি মূলত: সম্পাদনায় হাত দিয়েছিলাম আমরা এক অকৃত্রিম ও নির্ভেজাল এবং নির্লোভ দেশপ্রেমিককে ভালবেসে শ্রদ্ধা জানানোর জন্যে। আমার সাথে আমার সহকর্মী ও ছাত্র-ছাত্রীরা উৎসাহ যুগিয়েছে। পরে যখন দেশের বরেণ্য ও প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের কাছে লেখার জন্য গিয়েছি তখন কেউ নিরাশ করেননি। আমরা সবার কাছ থেকে যে সাহায্য পেয়েছি তা অকৃত্রিম। বস্তুত: গণমানুষের অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ দেশের মানুষের আত্মিক উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন। তার এ উন্নয়নের প্রয়াস সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা। অনেকেই সাড়া দিয়েছেন। আমার প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশকে স্মরণ করছি: ‘সব ছেড়ে একদিন আমিও স্থবির/হয়ে যাব, সেদিন শীতের রাতে সোনালী জরির কাজ ফেলে/ প্রদীপ নিভায়ে বর বিছানায় শুয়ে/ অন্ধকারে ঠেস দিয়ে জেগে রব/বাদুড়ের আঁকাবাঁকা আকাশের মতো/ স্থবিরতা, কবে তুমি আসিবে বল তো।’ নিজের অজান্তেই হয়ত এই প্রবীণ বয়সেও কিশোরের প্রাণচাঞ্চল্যে দেশ ও জাতির উন্নয়নে একের পর এক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করেছেন। ঢাকা স্কুল অব ইকোনোমিক্সে তাঁর যে কর্মকাণ্ড তা মানব তৈরির পাথেয়। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তা অর্থনীতি, পরিবেশ ও সম্পদ অর্থনীতি এবং উন্নয়ন অর্থনীতির চার বছর মেয়াদী স্নাতক, নয় মাস মেয়াদী পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্ট এবং উদ্যোক্তা অর্থনীতিতে মাস্টার্স, পরিবেশ ও সম্পদ অর্থনীতিতে মাস্টার্স ও উন্নয়ন অর্থনীতিতে মাস্টার্স ডিগ্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেয়া হচ্ছে। অতি সহজ ভাষায় মানুষের জন্যে অর্থনীতির ব্যবহার তার একটি উল্লেখযোগ্য দিক। জীবন-জীবনের জন্যে এ দর্শনে তিনি বিশ্বাসী। তার স্ত্রী একজন প্রথিতযশা ইতিহাসবিদ।আমি ধন্যবাদ জানাই আমার সম্মানিত সহকর্মী রেহানা পারভীন ও সারা তাসনিম।
গ্রন্থটি একটি অমূল্য আকরগ্রন্থ।অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমৃত্যু কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এবং মানব উন্নয়নের জন্য ঢাকা স্কুল অব ইকোনোমিক্স- এর মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরি, পরিবেশবিদ ও উন্নয়ন কর্মী তৈরিতে নিরলস কাজ করে যাবেন বলেও জানান এই বিশ্বব্যাপী সমাদৃত অর্থনীতিবিদ।সমাজকে যদি এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় তাহলে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ মানুষদের সম্মান করতে হয়। যে সমাজ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ মানুষের শ্রদ্ধা করে না সে সমাজে গুণী মানুষ তৈরি হয় না।
Leave a Reply