আপনি কি জানেন বিশ্বব্যাংক এর মতে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ১৪.২%। বর্তমান দৈনন্দিন জীবনের দিকে যদি আমরা তাকাই, তাহলে আমরা দেখতে পাই যে আমাদের জীবন ব্যবস্থা খুবই অসহনীয় হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, সামাজিক অবক্ষয়, অর্থনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি সবই যেন আমাদের ঘিরে রেখেছে আবদ্ধ করে।
Giveaway: জিতে নিন iPhone 12 Pro Max LiteFinance এর সাথে
এই পরিস্থিতিতে আমাদের যুব সম্প্রদায়ের জন্য কি আছে কোনো বার্তা, যা যোগ করতে পারে এক নতুন মাইলফলক?
কারণ যদি আমরা আজ আবরার হত্যা মামলার মত ঘটনাগুলো রোধ করতে পারি, তাহলে আমরা ফিরিয়ে দিতে পারব দেশকে এই অমূল্য সম্পদগুলো। আজকে দেশের এই কিশোরদের যদি আমরা অপরাধ থেকে দূরে নিয়ে এক আশার আলো দেখাতে পারি, তাহলে আমরা আগামির এই দুশ্চিন্তা থেকে একটু হলেও মুক্ত থাকতে পারব।
এবার আসা যাক আসল কথায়, আপনারা অনেকেই আছেন যারা আসলেই কিশোর বয়স বা মোটামুটি যুবক হওয়ার সাথে সাথে কিছু করতে চান যাতে আপনার ভবিষ্যতে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়।
কিন্তু আসলে খুজে পাচ্ছেন না কোন বিষয়টি আপনার জন্য সঠিক এবং কোনটি সঠিক নয়। তবে আমার আজকের ব্লগে যুব স্পম্প্রদায়ের জন্য কিছু ফিন্যান্সিয়াল টিপস শেয়ার করব যেটি অবলম্বনে সুদূর ভবিষ্যতে তারা উন্নত জীবনযাত্রার মান উপভোগ করতে পারবে। চলুন তবে শুরু করা যাকঃ
১) একমুষ্টি দক্ষতা জোগাড় করুন
জীবনে চলার পথে আমরা অনেক ভাবেই পরিক্ষা দিয়ে থাকি, তবে আমরা জানি না যে কোন পরিস্থিতিতে আমাদের অবস্থা কেমন হবে। তাই, যদি আপনি বিভিন্ন ধরণের দক্ষতার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে প্রস্তুত করতে পারেন তাহলে আপনি যে কোন পরিস্থিতিতে যেভাবেই হোক নিজেকে ঠিক সামলে নিতে পারবেন।
উদাহরণ হিসেবে মনে করুন, আপনি একজন গৃহশিক্ষক তবে আপনি একটি দোকানে কাজের দক্ষতাও রাখেন এবং পাশাপাশি মার্কেটিং এর কাজও পারেন। এতে হবে কি কোনো খারাপ পরিস্থিতিতে আপনি নিজে এবং আপনার উপর নির্ভরত পরিবারকে সাহায্য করতে পারবেন।
২) বিনোদনের সস্তা উপায় খুজে বের করুন
আপনার অর্থ বাঁচাতে চান? বিনোদনের সস্তা উপায়গুলো একে একে বের করে ফেলুন। মানুষ সামাজিক জীব হওয়ার পাশাপাশি অনেকটা হিংসুক মনোভাবের হয়ে থাকে।
যদি এই কথাটি অবিশ্বাস হয় তাহলে একটি পুরনো স্মৃতিতে একটা ডু মেরে এসে দেখুন তো, কখনও কারোর কোন জিনিসের উপর বা কোনোও কিছুর উপর হিংসা জন্মেছে? যদি হয়ে থাকে তাহলে আজকেই এই অভ্যাসটি বদলে ফেলুন।
কারণ, আপনি চিন্তা করতে পারবেন না যে এই বিষয়টি আপনার অর্থ রক্ষায় কতটা ভূমিকা রাখে! ধরে নেই আপনার বন্ধুর দেখা-দেখি আপনি একটি নতুন মোটর গাড়ি কিনতে চান, তবে আপনার সেই বস্তুটির উপর তেমন কোনো প্রয়োজন নেই।
আপনি শুধুমাত্র তাকে ছোট দেখানো বা তার সাথে নিজের প্রতিযোগিতা করে এই মোটর গাড়িটি কিনতে চাচ্ছেন। কিন্তু আপনি যদি তার একটি ব্যতিক্রম খুজে বের করেন তাহলে দেখবেন আপনি অনেকটাই অর্থ বাঁচানোর পাশাপাশি একটা মানসিক সুখ খুঁজে পেয়েছেন। এইভাবেই নিজের বিনোদনগুলোর একটি সুন্দর এবং সস্তা উপায় খুঁজে বের করুন।
৩) কেনাকাটার পর অবশ্যই অবশ্যই ক্রয় রসিদটি সংরক্ষণ করুন
প্রতিদিন আমরা কতকিছুই না কেনা-কাটা করে থাকি তবে আমরা ক্রয় রসিদ নিয়ে বেশি একটা মাতামাতি করি না। কারণ, আমরা তেমন জানি না যারা তাদের ব্যয় নিয়ে খুব একটা ভাবি।
আমাদের বরাবরই একটা স্বভাব বিদ্যমান, আর তা হল “আজকে চলে যাচ্ছে, তাহলেই বেশ!”। তবে এই মনোভাব নিয়ে চললে আমরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পরব। তাই অবশ্যই আমাদের ব্যয়গুলো চিহ্নিত করে রাখতে হবে।
৪) ব্যয়গুলো খুঁজে বের করুন
আয়ের পাশাপাশি আপনাকে জানতে হবে, আপনি কিভাবে আপনার ব্যয়গুলো হ্রাস করতে পারবেন। যেমন ধরুন আপনি আপনার সারা মাসের ব্যয়ের হিসাবটি আগেই কষে ফেললেন এবং কিভাবে সারা মাস এই ব্যয়ের তালিকা থেকে নিজের প্রয়োজন মিটাবেন তার প্রস্তুতি নিলেন।
যদি আপনি এমনটি করতে সক্ষম হন তাহলে বলতে পারি আপনি একটি নির্দিষ্ট রুটিনের মধ্যে দিয়ে আপনার ব্যয়গুলো নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এইভাবেই আপনি আপনার অর্থ সংরক্ষন করতে পারবেন এবং পরবর্তীতে তা বিনিয়োগের একটি মাধ্যম পরিণত করতে পারবেন।
৫) বিনিয়োগে মনোনিবেশ করুন
একটি রিপোর্টে দেখা যায় পৃথিবীর বেশিরভাগ সাফল্যবান ব্যাক্তিদের বয়স ৪৫ এর আসে পাশে, যারা ২০ বছর বয়স থেকে তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য কাজ করে চলেছে।
ঠিক তেমনই আপনিও কি চান যে আপনার ৪০-৪৫ এ সাফল্যের একদম চূড়ায় অবস্থান করি। হ্যাঁ, তাহলে আপনাকেও এখন থেকেই বিনিয়োগের প্রতি আগ্রহী হতে হবে।
আপনি কোনো ছোটখাটো অংশীদারি ব্যবস্যা দিয়ে শুরু করতে পারেন যেখানে স্বল্প বিনিয়োগে শুরু হতে পারে আপনার স্বপ্নের ছোট ছোট টুকরো। এছাড়া আপনি ফরেক্স ট্রেডিং এ ছোট ছোট বিনিয়োগ করে ভবিষ্যতে একটি ভাল অবস্থান নিজের জন্য করতে পারেন।
৬) নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন
আপনি যখন ছোট ছিলেন আপনার বাবা-মা কি আপনাকে কখনও শিখিয়েছে, যে টাকা কিভাবে খরচ করতে হয়? যদি আপনার উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে আপনি অবশ্যই একজন ভাগ্যবান।
ছোটবেলা থেকে এই শিক্ষা থাকা জরুরি যে আপনার অর্থের উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ কতখানি। আপনি হয়ত এমন পরিবারে জন্মগ্রহন করে থাকতে পারেন যেখানে আপনি যা চান তা মুহূর্তের মধ্যে হাজির হয়ে যায়। কিন্তু যদি আপনি একজন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করে থাকেন, তাহলে আপনার অর্থ কিভাবে ব্যবহার করবেন তা আপনাকে ভালই ভালই জানতে হবে।
ঠিক প্রতিটা কিশোর যদি তাদের অর্থ সঠিক মত ব্যবহার করতে পারে তাহলে সুদূর ভবিষ্যতে তার অর্থনৈতিক দিক থেকে বেগ পেতে হবে না।
৭) জরুরী তহবিলের প্রয়োজন বিদ্যমান
ধরে নিলাম আপনি প্রতিমাসে টিউশনি করে বা ফ্রিল্যান্সিং করে কিছু টাকা আয় করেন। এই প্রতি মাসে আপনি যদি আপনার আয় থেকে কিছু পরিমান একটি জরুরী তহবিল এ রাখা শুরু করেন তবে বছর শেষে আপনার একটি বড় অংকের টাকা থাকবে এবং তা দিয়ে আপনি হয়ত আপনার কোনো সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবেন বা আপনার কোনো প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হবেন।
এই জরুরী তহবিলটি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হতে পারে বা হতে পারে ডি,পি,এস বা আপনার নগদ বা বিকাশ অ্যাকাউন্ট।
৮) অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ উন্নত করুন
ধরে নিচ্ছি আপনার পূর্বপুরুষের কিছু সম্পদ রয়েছে এবং আপনি সেইগুলো পরিচালনা করেন বা আগামী ভবিষ্যতে করবেন। তাহলে আপনার করনীয় কি?
অবশ্যই সেই সম্পদগুলো রক্ষা করা। আপনার অর্থ পরিচালনা ক্ষমতা আপনার সাফল্যের উপর নির্ভর করবে। আপনাকে শিখতে হবে কিভাবে আপনি আপনার সম্পদ পরিচালনা করবেন এবং সেগুলোর উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবেন।
আপনাকে হয়ত আপনার পরিচিত অনেকেই সু-বুদ্ধি দিতে পারে, তবে তারা আপনার পরিস্থিতি না জেনেই আপনাকে নানা উপদেশ দিবে যা পরবর্তীতে সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই ভাল হয় এখন থেকেই সেগুলোর প্রতি যত্নশীল হন এবং পরিচালনা করতে শিখুন।
তাহলে একজন উঠতি বয়সী হিসেবে আপনার কর্তব্য কি?
অবশ্যই উপরের উল্লেখিত আর্থিক টিপসগুলো মনোযোগ সহকারে পালন করার চেষ্টা করা। পাশাপাশি ক্যারিয়ারে ভাল কিছু করতে পড়াশুনা করতে হবে যাতে একজন উন্নত মানুষের পাশাপাশি সাফল্যবান ব্যাক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়।
Leave a Reply