করোনা মহামারীর ফলে সৃষ্ট সেশনজট থেকে উত্তরনের পরিকল্পনা নির্ধারণ সংক্রান্ত আলোচনাসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে মত বিনিময় সভা করেছেন উপাচার্য ড. এ কিউ মাহবুব। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে সেশনজট নিরসন মত বিনিময় শেষে নিজ দপ্তরে ফিরলে উপাচার্যের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে ৩য় বারের মতো উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কর্মরত (মাস্টার রোল) কর্মচারীরা। রবিবার দুপুর ২টায় উপাচার্য কার্যালয়ে তালা দিয়ে আন্দোলন শুরু করেন তারা।
দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার পরে শিক্ষার্থীরা সেশনজট নিরসনে ৪ মাসে সেমিফাইনাল পরীক্ষা নেবার ব্যবস্থা করার বিষয়ে প্রস্তাব দেন। এক্ষেত্রে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীবান্ধব সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন ও যথাযথ বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। একই সাথে পর্যাপ্ত শিক্ষক সংকট, ক্লাসরুম সংকট, যথাযথ ল্যাবের সুবিধা নিশ্চিতকরণের বিষয়ে উপাচার্যের বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করেন। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগ ও অনুষদের শিক্ষা-কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একাধিক প্রস্তাব দেওয়া হয়। এসময় বিভিন্ন ইনস্টিটিউট, অনুষদ ও বিভাগের স্নাতক ১ম বর্ষ থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তর(মাস্টার্স)- এর শিক্ষার্থীরা নানাবিধ সমস্যার কথা উপস্থাপন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান, ছাত্র উপদেষ্টা ড. মোঃ শারাফত আলী, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মোঃ আবু সালেহ, বিলবস এর সহকারী অধ্যাপক ড. হাসিবুর রহমান প্রমুখের উপস্থিতিতে মত বিনিময় সভার সমাপনী বক্তব্যে সেশনজট নিরসন ও শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে রোড ম্যাপ এর বিষয়ে বক্তব্য রাখেন উপাচার্য ড. এ কিউ মাহবুব।
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীদের একাডেমিক রেজাল্ট ও সার্বিক পরিস্থিতি চিন্তা করে সেশনজট নিরসনের ক্ষেত্রে ৬ মাসের স্থলে ৪ থেকে ৫ মাসের ভিতর একটি সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করবার চেষ্টা করব। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই ৩০-৪০ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। এরপরও শিক্ষক সংকট থেকেই যায়। ইতিমধ্যে ইউজিসির নিকট আমরা শিক্ষকের চাহিদা পাঠিয়ে দিয়েছি। এছাড়াও কুয়েট, খুলনা, ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের মাসিক বেতনের ভিত্তিতে অনলাইন ও অফলাইনে সরাসরি কিছু ক্লাস নেবার ব্যবস্থা করবার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
আলোচনা সভা শেষে উপাচার্য নিজ দপ্তরে ফিরলে ৩য় দফায় মাস্টার রোল কর্মচারী কর্তৃক উপাচার্য অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এ সময় মাস্টার রোল কর্মচারীরা বিভিন্ন ভাষায় শ্লোগান দিতে থাকে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থী সহ সকলের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
আন্দোলনকারী অস্থায়ী কর্মচারীরা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে ১৫২ জন কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু চাকরি স্থায়ীকরণ না হওয়ায় অসহায় অবস্থায় রয়েছেন তারা।
এদিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিকাল ৪টায় আগামী রিজেন্ট বোর্ডে অস্থায়ী কর্মচারীদের নিয়োগের বিষয়টি উত্থাপন করা হবে উপাচার্যের এমন আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আন্দোলন প্রত্যাহার করে উপাচার্য কার্যালয়ের তালা খুলে দিয়েছেন আন্দোলরত অস্থায়ী কর্মচারীরা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি খন্দকার নাসিরউদ্দিনের সময়কালে এসব কর্মচারীদের দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে অস্থায়ী নিয়োগ প্রদান করা হয়। এরপর বিভিন্ন সময় অস্থায়ী কর্মচারীরা তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে উপাচার্য কার্যালয় অবরোধ সহ বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করে আসছিলো। উপাচার্য কর্তৃক তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের আশ্বাস দিলেও স্থায়ী কোনো সমাধান না হওয়ায় অস্থায়ী কর্মচারীরা আবারো আন্দোলনে নামে। কিন্তু চাকরী স্থায়ী করণে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অনেকটা বাকরুদ্ধ এবং হিমসিম খাচ্ছে বলে জানা গেছে। তাছাড়া করোনা পরবর্তী সময়ে শিক্ষক সংকট, সেশনজট, অবকাঠামো উন্নয়ন সহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয়টি।
Leave a Reply