কেমন ছিল পর্যটকদের প্রথম মহাকাশ সফর!

কেমন ছিল পর্যটকদের প্রথম মহাকাশ সফর!

মহাকাশে কি গরু আছে? স্পেসএক্সে করে মহাকাশে যাওয়া পর্যটকদের এমনই প্রশ্ন করেছেন পৃথিবী থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হওয়া সেন্ট জুড শিশু গবেষণা হাসপাতালের এক রোগী। একই হাসপাতালের আরেক রোগীর প্রশ্ন, মহাকাশে কি এলিয়েন আছে? আপনারা কি তাদের দেখেছেন?

মহাকাশ  থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের এমন সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগনের পর্যটকরা। এই সফরের মধ্য দিয়ে হাসপাতালের জন্য তহবিল গঠন করতে চান ক্রু সদস্যরা।

তিন দিনের মহাকাশ সফর শেষে পৃথিবীতে ফিরল স্পেসএক্স ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুল। এই প্রথম পৃথিবীর কক্ষপথ ঘুড়ে এল নভোচারী নয় এমন চারজন পর্যটক। কোটিপতি জ্যারেড ইসাকম্যান লাইভ স্ট্রিমিংয়ে স্পেসএক্সকে ধন্যবাদ জানান। চলুন দেখে আসি, কেমন ছিল তাদের এই সফর?

স্পেসএক্সের মহাকাশযানে পর্যটকরা সফরের সময়টায় মুভি দেখেছেন। স্পেসএক্সের এই মহাকাশযানটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় হওয়ায় এর নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা নিয়ে কোনোকিছুই ভাবতে হয়নি তাদের। এই ক্যাপসুলটি ঘ্ন্টায় ১৭ হাজার মাইল গতিবেগে চলেছে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকেই ব্যবহার করেছে নিজের গতিবেগ নিয়ন্ত্রণের জন্য। এই প্রক্রিয়ায় স্পেস ক্রাফটের বাইরের তাপমাত্রা পৌঁছেছিল সাড়ে তিন হাজার ফারেনহাইট।

ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলটি এমনভাবেই তৈরি যেন ভেতরে তাপমাত্রা পৌঁছাতে না পারে। এই ক্যাপসুলের একটি শিল্ড আছে, যেটি তাপ থেকে ভেতরের অংশকে রক্ষা করে। অবতরণের সময় সমুদ্রপৃষ্ঠে যাওয়ায় এই ক্যাপসুলের তাপমাত্রা অনেক বেশি ছিল। এর আগে এই ক্যাপসুলের বিষয়ে জানিয়েছিলেন স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক। স্পেস ক্রাফট নিচে নামার আগে প্যারাশুট ছেড়ে দেয়। এরপর কয়েকটি রিকভারি শিপ এসে ক্যাপসুলটি পানি থেকে সরিয়ে নিয়ে আসে।

এ সফরে ঝুঁকি থাকলেও নাসার সাবেক প্রধান জানান, ক্র ড্রাগন এখন পর্যন্ত মহাকাশে যাওয়া সবচেয়ে নিরাপদ স্পেস ক্রাফট। এর আগে প্রশিক্ষিত নভোচারী নিয়ে দুটি মিশন শেষ করেছে এই যান। এবার নিরাপদে পর্যটকদের নিয়ে সফর শেষ করলো এই ক্রু ড্রাগন।

এই সফরে গিয়েছিলেন ৩৮ বছর বয়সী ইসাকম্যান, যিনি পুরো ট্যুরের খরচ দিয়েছেন। হ্যালে আর্কেনাক্স, যিনি ক্যানসার থেকে বেঁচে ফিরেছেন, বর্তমানে সেন্ট জুড শিশু গবেষণা হাসপাতালের ফিজিশিয়ান সহকারি, সিয়ান প্রক্টর, যিনি বিজ্ঞানী ও শিক্ষক আর ক্রিস সেমব্রোস্কি, যিনি একজন মহাকাশ ভক্ত। এই মিশনের মধ্য দিয়ে তহবিল গঠন করতে চান ইসাকম্যান, যেই তহবিল ক্যানসার হাসপাতালে কাজে লাগাতে চান তিনি।

তাদের যাত্রার নাম দেয়া হয়েছে মিশন ইন্সপিরেশন ফোর। তাদের সফর বেশ গুরুত্বপূর্ণ স্পেস টুরিজমের জন্য কারণ, তাদের সফরের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মহকাশ স্টেশনের কোনো সম্পর্ক বা সহযোগিতা ছিল না।

এর আগের সফরগুলোতে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন সংযুক্ত ছিল। তিন দিনের সফরে এই চারজন মহাকাশের পর্যটক ১৩ ফুট ক্যাপসুলের মধ্যে ছিলেন, ছিলেন পৃথিবী থেকে ৩৫০ মাইল ওপরে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকেও ১০০ মাইল ওপরে। মানবসভ্যতার ইতিহাসে এই প্রথম মহাকাশযানে করে মানুষ পৃথিবী থেকে এত উঁচুতে উঠেছে। এই সফরে মহাকাশে ছোটখাটো গবেষণাও করেছেন তারা। মহাকাশে তাদের শরীর কেমন আচরণ করে সেটি খতিয়ে দেখেছেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন, কুপলা নামের জানালা দিয়ে দেখেছেন মহকাশের অনন্তকাল, শুনেছেন গানও।

লাইভস্ট্রিমিংয়ে শেয়ার করেছেন তাদের কার্যক্রম। এর মধ্যে প্রোক্টর কিছু ছবিও এঁকেছেন, যেগুলো বিক্রি করে অর্থ সেন্ট জুডের তহবিলে দেবেন। ইন্সপিরেশন ফোরের টুইটার অ্যাকাউন্টেও শেয়ার করেছেন আর্কেনাক্স কীভাবে সেন্ট জুডের রোগীদের সঙ্গে কথা বলছেন, ইসাকম্যান কীভাবে শেয়াবাজারের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন। এর আগে স্পেসএক্স ক্রু ড্রাগনের মিশনগুলো নাসার মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছিলো আর নভোচারীদের আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আন্তর্জাতিক মহকাশ স্টেশনে ডক করার আগের সব মুহূর্তই নভোচারীরা শেয়ার করার চেষ্টা করেছেন। মহাকাশে যাওয়ার পর প্রথম দুদিন তারা কোনো তথ্য দেননি। এমনিতেও মহাকাশে গেলে নভোচারী বা পর্যটকরা অস্বস্তিতে থাকেন লাইভে আসতে। নাসার গবেষণা বলছে, এ সময়টায় তাদের মোশন সিকনেস থাকে। আর মহাকাশে নির্বিঘ্নে ঘুমানো বেশ চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু স্পেস এক্সের ক্রু ড্রাগন ফ্লাইট কিছুটা ব্যতিক্রম। এই মহাকাশযান নভোচারী নয়, সাধারণ মানুষ নিয়ে মহাকাশে গেছে।

স্পেসএক্স নভোচারী আর পর্যটকদের মহাকাশে নিতে আরো ৫টি বেসরকারি মিশনের চুক্তি করেছে। সঙ্গে আছে নাসার সঙ্গে আরও চারটি চুক্তি। এর আগে ভার্জিন গ্যালাক্টিকের মহাকাশযানে করে মহাকাশে গেছেন রিচার্ড ব্র্যানসন।  জেফ বেজস মহাকাশে গেছেন নিজের প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিনের তৈরি মহাকাশযানে করে।





Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*