ওয়েবপেজ স্পিডের জন্য সেরা ৮ টি টিপস

মনে করুন, আপনি প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কিনতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাবেন। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য আপনার কাছে তিনটি অপশন আছে। বাস, রেল এবং বিমান। আমরা জানি, এই তিনটি বাহনের মধ্য বিমানের গতি অন্য দুইটা বাহনের চেয়ে ও অনেক অনেক গুণ বেশি।

যদি কখনো এমন হয় যে, গাড়ি এবং রেলের ভাড়ার চেয়েও কম খরচে বিমানে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাওয়া যাবে। তাহলে আপনি কোন্‌ বাহনটি বেছে নিবেন? নিশ্চয় বিমান। ঠিক তদ্রুপ, আপনি যখন ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্রয়োজনে ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন, তাহলে আপনিও নিশ্চয় এমন ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে চাইবেন, যেটা খুব দ্রুত ওপেন হয়।

কারণ, খুলতে অনেক সময় নেয়, এমন ওয়েবসাইট প্রথমত বিরক্তিকর, দ্বিতীয়ত ব্যান্ডউইথ খরচ বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং কচ্ছপ গতিতে চলা ওয়েবসাইট কেউ ভিজিট করতে চায় না। আর ভিজিটর যদি ওয়েবসাইট ভিজিট না করে তাহলে, ওয়েবসাইটের জন্য যত রকম SEO করুন না কেন, কাজের কাজ কিছুই হবে না।

এই কারণে সম্প্রতি গুগলের পক্ষ থেকে পেজ স্পিডকে SEO এর জন্য নতুন ফেক্টর বলে গণ্য করা হয়েছে। গুগলের মতে ৩ সেকেন্ডের মধ্যে যদি একটি ওয়েবসাইট সম্পূর্ণ লোড নিতে সক্ষম না হয়, তাহলে সেই ওয়েবসাইট ৩০% ভিজিটর হারায়। অর্থাৎ লোডিং টাইম ৩ সেকেন্ডের বেশি হলে, প্রতি তিন জনের একজন ভিজিটর বিরক্তবোধ করেন।

সুতরাং SEO এর জন্য লোডিং টাইম অনেক বড় ইস্যু। তাই পেজের লোডিং টাইম দুই এক সেকেন্ডের মধ্য নিয়ে আসুন। গুগলের এলগরিদম এমনভাবে করা হয়েছে, যেখানে একজন ভিজিটর ওয়েবসাইট ভিজিট করার সময় যদি ঢুকতে না পারে তাহলে সেটা ব্ল্যাকলিষ্টিং করে সার্চে পেছনের দিকে নিয়ে যায়।

ফলে অনেক ভালো কন্টেন্ট থাকা স্বত্বেও আপনার ওয়েবসাইট সার্চ ইঞ্জিনে আসে না এবং জনপ্রিয় হয় না। আমি এখানে সেরা এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস সম্পর্কে আলোচনা করেছি, যে গুলির যথাযত প্রয়োগ আপনার পেজ স্পিডকে সময়ের গতিতে নিয়ে যাবে ইনশা-আল্লাহ।

১. ওয়েবসাইটের গতি পরিক্ষা করুন

একজন ভাল ডাক্তারকে যেমন ঔষুধের ডেসক্রিপশন লেখার আগে পরিক্ষা নিরিক্ষা করে রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হয়, ঠিক তেমনি ওয়েবসাইটের কোন একটি সমস্যা সমাধান করার জন্য সর্ব প্রথম সমস্যা গুলো কি কি আগে সেটা জানা একান্ত জরুরী। তাই, আগে আপনার ওয়েব পেজকে পরিক্ষা করে দেখুন কোথায় কি কি সমস্যার কারণে ওয়েব পেজের গতি কম হচ্ছে।

অনলাইনে ওয়েব পেজের গতি নির্ণয় এবং সমস্যাগুলো দেখার জন্য অনেক টুল বা ওয়েবসাইট আছে। যার মধ্যে প্রায় অনেক টুলসই আপনি বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন। এগুলো আপনার ওয়েবসাইটের স্পীড সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেবে। যা যাচাই করে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের স্পীড সম্পর্কিত দুর্বলতা খুঁবে বের করতে পারবেন।

২. উন্নত হোস্টিং ব্যবহার করুন

অনেকেই আছেন যারা সস্তা দামে হোস্টিং কিনে কষ্ট পাচ্ছে। কারণ, কমদামী ওভারলোড হোস্টিং ব্যবহারে ওয়েবসাইটের স্পিড স্লো হয়ে যায়। ফলে ভিজিটর বিরক্ত হয়ে এসব ওয়েবসাইটে আর ভিজিট করে না।

এ করে আপনার ওয়েবসাইট ধীরে ধীরে SEO রেংকিং পেছনে চলে যায়। তাই, হোস্টিং কেনার সময় সতর্ক থাকুন। মূল্য কিছুটা বেশি হলেও উন্নত মানের হোস্টিং ক্রয় করুন। বিশেষ করে শেয়ার হোস্টিং ক্রয় না করাই উত্তম।

৩. সকল কোড ফাইল মিনিফাই করুন

আমরা যখন ওয়েব ডিজাইন করার জন্য কোড লিখি, তখন সকল কোডের মাঝে অপ্রয়োজনীয় বেশ কিছু স্পেস বা খালি জায়গা থেকে যায়। স্পেস রাখা হয় মুলত কোড গুলোকে স্পষ্ট দেখার জন্য। যদি কোথাও এডিট করার প্রয়োজন হয় সহজে কোড খঁজে পাওয়ার জন্য।

কিন্তু, এসব স্পেস আপনার ওয়েব পেজের গতি কমিয়ে দেয়। সুতরাং যখন আপনার ওয়েব ডিজাইন যখন শেষ করবেন, তখন কোডের মাঝে থাকা সকল স্পেস গুলোকে তুলে সব কোডকে একত্রিত করে নিবেন। কোড বলতে এইচটিএমএল, সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্টসহ যতগুলো কোড আপনার ওয়েব পেজে ব্যবহার হয়েছে, সবগুলোকে মিনিফাই করে নিবেন।

৪. ইমেজকে অপটিমাইজ করুন

প্রথমত অপ্রয়োজনে ওয়েবসাইটের যেখানে সেখানে ছবি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। কারণ, ছবি ওয়েবসাইটের গতি অনেক গুণে কমিয়ে দেয়। প্রয়োজনীয় ছবিগুলোকে অবশ্যই অপটিমাইজ করুন। অনলাইনে ইমেজ অপটিমাইজেশনের বিভিন্ন টুলস রয়েছে। ইমেজের সাইজ বড় হলে এই টুলসগুলো ইউজ করে আপনি খুব সহজে ইমেজ অপটিমাইজ করতে পারবেন।

আর ইমেজ যথসম্ভব jpg ফরমেটের রাখতে পারলে ভাল হয়। কারণ ওয়েবসাইটের জন্য আইডিয়াল ছবির ফরমেট হচ্ছে jpg ফরমেট। অল্প কিছু ছবি png ফরমেটে হলেও তেমন কোন সমস্যা নেই, কিন্তু gif ফরমেটের ছবি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।

তবে কোন gif ফরমেটের ছবি ব্যবহার করার একান্ত প্রয়োজন হলে GIF to JPG converter এই টুলের মাধ্যমে আগে সেটাকে JPG ফরমেটে কনভার্ট করে নিন। gif ফাইল এনিমেশন হলে এনিমেশনের জন্য ব্যবহৃত সব ছবি gif ফরমেট থেকে jpg ফরমেটে নিতে পারেন। আর যদি কোথাও এনিমেশন gif ফাইল ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় তাহলে এই টুলের মাধ্যমে সেটাকে অপটিমাইজ করে নিন।

৫. লিভারেজ ব্রাউজার ক্যাশিং ফিক্স করুন

আপনি যখন পেজ স্পিড পরিক্ষা করবেন তখন কি কি কারণে পেজ স্পিড কম হচ্ছে সেটার কয়েকটি কারণ দেখানো হবে, তার মধ্য অন্যতম একটি হচ্ছে Leverage browser caching. এখানে সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্ট, ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদীর লিংক দেখতে পাবেন। এগুলি হয়তো আমাদের ওয়েব পেজের প্রয়োজনীয় কিছু কন্টেন্ট।

তাই এগুলোকে মুছে দেওয়া যাবে না। কিন্তু এগুলোর কারণে যে পেজ লোডিং টাইম বেশি হচ্ছে, সেটাকে কিভাবে মোডিফাই করা যায় তার একটি সেরা উপায় এখানে দেখানো হল। এই ফাইলে লেখা কোডগুলো কপি করে যে আপনার ডোমেইন ডিরেক্টরির .htaccess .htaccess নামে ফাইলে পেষ্ট করে সেভ করে দিন।

৬. Gzip compression অ্যাকটিভ করুন

প্রথমে Gzip Compression টুলটি ব্যবহার করে আপনার ওয়েবপেজের জেজিপ কম্প্রেশন অ্যাকটিভ আছে কিনা যাচায় করে দেখে নিন। যদি না থাকে তাহলে এই কোডগুলো কোড কপি করে যে ফোল্ডারে আপনার ওয়েবপেজ আছে সেই একই ফোল্ডারে .htaccess নামে একটি ফাইল বানিয়ে পেষ্ট করে সেভ করে নিন।

আর আগে থেকে যদি অন্য একটি .htaccess ফাইল থাকে তাহলে সেখানে এই কোড কপি করে পেষ্ট করে দিন। Gzip compression সক্রিয় থাকলে পেজ লোডিং সময়ে সার্ভারের উপর লোড কম পড়ে বলে আপনার পেজ দ্রুত লোড হবে।

৭. অপ্রয়োজনীয় প্লাগিন সরিয়ে নিন

ওয়ার্ডপ্রেস থিম ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা অপ্রয়োজনীয় কিছু প্লাগিন ইনষ্টল করে ফেলি, যা পরে হয়তো মনেও থাকে না। তাই আপনার ওয়ার্ডপ্রেস পানেলে গিয়ে সকল প্লাগিন পুনরায় আরেকবার দেখে নিন। যদি মনে হয় কোন একটি প্লাগিন আপনার তেমন কোন কাজের নয় তাহলে সেটাকে আনইনষ্টল করে নিন।

কারণ প্লাগিন যত বেশি থাকবে পেজ স্পিড তত কমে যাবে। আর আপনার পেজের যত সিএসএস লিংক থাকবে সকল লিংক হেড সেকশনে রাখুন, অথবা ইন্টারনাল কোন সিএসএস থাকলে সেটাকে হেড সেকশনে রাখুন। যত জাভাস্ক্রিপ্ট বা জাভাস্ক্রিপ্ট লিংক থাকবে সব কিছুই ফুটার সেকশনে রাখুন।

৮. সম্ভব হলে CDN ব্যবহার করুন

CDN বলতে Content Delivery Network বোঝানো হয়। অর্থাৎ এটি এমন একটি নেটওয়ার্ক যা আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্টকে ভিন্ন ভিন্ন দেশের নেটওয়ার্কের সাথে সংযোগ ঘটিয়ে খুবই দ্রুত ডেলিভারী দিতে সহয়তা করে।

ফলে আপনার ওয়েব পেজ অতি দ্রুত লোড হয়। তবে, CDN ফ্রিতে পাওয়া যায়। তবে যদি সম্ভব হয় তাহলে কিনে CDN ব্যবহার করুন। তবে আপনার ভিজিটর যদি শুধুমাত্র বাংলাদেশ বা এশিয়া ভিত্তিক হয় তাহলে CDN ব্যবহার না করলে ও চলবে।

আমার ওয়েবসাইটটি ঘুরে আসতে পারেন: অ্যাডসিভ.কম

Photo: Social Media Week





Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*