অনলাইন পরীক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে কঠিন কিছু কি ?

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের খামখেয়ালি আচরণ নতুন কিছু নয়। উনারা নিজ স্বার্থ আছে এমন কাজ ছাড়া চুপ থাকেন,কিন্তু শিক্ষক ,শিক্ষক সমিতি ,বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই জায়গাগুলোতে যখন উনারা রোল প্লে করেন,তখন সেইটা যে ব্যাক্তিগত ,প্রফেশনাল স্বার্থের ঊর্ধ্বের বিষয় – এই মোরাল সেন্স টুকু না থাকলে উনাদের শিক্ষক না বলে অন্য কোনো খারাপ কিছু নিশ্চই বলা ভালো ! সেসবও সবাই বলে দিনরাত ,তাতে উনাদের চামড়া কোনোদিন খসে পরে যায়নি আর যাবেওনা। সেই আলাপ মূল বিষয়বস্তু না হওয়া সত্ত্বেও কিছুটা দুঃখবোধ থেকেই এই বিষয়ে আসা।


ইউজিসি র অনলাইন এক্সাম সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকে ভেবেছিলাম স্ব স্ব বিশ্ববিদ্দালয়গুলো নিজ দায়িত্বে কোন ভাবে পরীক্ষা নেয়া যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে। কিন্তু উনাদের সেই সদিচ্ছা ,আগ্রহ,ভাবনাচিন্তা কখনো দেখিনাই। কিন্তু উনারা চাইলেই পারতেন আপা আর ঢাবির দিকে হা করে তাকিয়ে না থেকে। মায়ের বুক খালি হওয়া থেকে শুরু করে ক্লাস্টার এর বন্যায় ভেসে যাওয়া করোনার লাশ এর পর বিশ্ববিদ্যালয় খোলা বন্ধ হওয়া গ্রুপ এর এক বছর পর যখন ইউ জিসি অনলাইন এক্সাম এর একটা সিদ্ধান্ত জানাতে পারলো তখন “”এতোদিন তাহলে কি ছিঁড়লেন “‘ না বলে আমার মধ্যে একটু শান্তির বাতাস লেগেছিলো যে যাক অন্তত একটা সিদ্ধান্ত ত জানাইলো ! এদেশে এ বা কম কি

সে প্রেক্ষিতে –

২০২০ থেকে ২০২১ এই সময়ে যেই অনলাইন এক্সাম সফটওয়্যারগুলো টপ রাঙ্কেড ,টপ রিভিউড সেগুলোর একটা তালিকা দেয়া হলো –

১. টেস্ট ইনভাইট ( https://www.testinvite.com/)
২.পেপারশালা ( https://papershala.com/)
৩.স্পিড এক্সাম ( https://www.speedexam.net/)
৪.কন্ডাক্ট এক্সাম ( https://www.conductexam.com/)
৫.থিঙ্কএক্সাম (https://www.thinkexam.com/)
৬.প্রপ্রফস কুইজ মেকার (https://www.proprofs.com/quiz-school/)
৭.EOA (http://www.yoctel.com/online-exam-software)
৮.স্কিল ইভ্যালুয়েশন ল্যাব ( https://www.epractizelabs.com/index.html)
৯.স্কুলজপ্রো (https://schoolzpro.com/)

এগুলোর প্রত্যেকটিরই ড্যাশবোর্ডের ফীচার,সুবিধা বেশ ভালো মানের এবং বেশ কিছু ফ্যাসিলিটি মোটামোটি সবগুলোই প্রোভাইড করতে পারে কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া। কমন ফিচার গুলো একটু দেখে নেয়া যাক –

১.সফটওয়্যার রান হলেই এবং ক্যান্ডিডেট লগইন করলে আপনার ফোন ,কম্পিউটার এর ব্রাউসার অটো লক হবে,ফুলস্ক্রিন মোড চালু হলেই আপনার পিসি বা ফোন লক হয়ে যাবে।

 

২.এক্সামিনার যেকোনো প্রকারে প্রশ্ন তৈরী করতে পারবে ,প্রশ্ন আগে থেকেই আপলোড করে কস্টিং ব্যাঙ্ক আকারে রাখা যাবে। মাল্টি স্টেজ এসেসমেন্ট এর সুবিধাও পাওয়া যাবে বেস্ট কয়েকটি অর্থাৎ প্রথমে MCQ পরে গিয়ে ডেস্ক্রিপটিভে কিছু কিংবা অন্য কোনোভাবে( যেভাবে প্রশ্নকর্তা চায়) ,অডিও ভিডিও কোয়েশ্চন সোহো নানা কিছু। যেভাবে প্রশ্নকর্তার সুবিধা।

 

৩.মনিটরিং এর জন্য বেশিরভাগ সফটওয়্যার গুলোই লাইভ এক্সাম নেবে,অনস্ক্রিন মনিটরিং সহ ১০০% এক্সাম ও ডাটা সিকিউরিটি নিশ্চয়তা দেবে। বেশিরভাগ ই এখান আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বেসড।

 

৪.ক্যান্ডিডেট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম,রেজাল্টস ,রুটিন ,এলার্টস সিস্টেমস,আনলিমিটেড স্টোরেজ (অবসসই প্রিমিয়াম ,প্রফেশনাল একাউন্ট ) সহ নানা এনালিটিক্স অটো জেনারেট হবে (শিক্ষকদের খাতা কাটাকাটির পেমেন্ট অবশ্য এ জায়গায় মারা খায় )

এগুলার প্রাইসিং মাসিক ২৫-৭০ ডলার মাত্র ( ১০ থেকে ১৬ জন পরীক্ষাথীর এক্সাম ফী দিয়েই এগুলার সব ফীচার কেনা যায়) , এনুয়ালী প্রিমিয়াম একাউন্ট নিলে কিংবা লাইফটাইম এক্সেস নিলে টোটাল এর উপর ৩০-৫০% কমে নেয়া যায়। তাছাড়া প্রত্যেকটিতেই ফ্রি ট্রায়াল দিয়ে দেখে নেয়ার সুযোগ আছে।

এরকম আরো অনেক আছে নানান ফীচার সহ। এগুলো বিভিন্ন কোম্পানি এইচ আর দের মাধ্যমে অনলাইন এসেসমেন্ট করে থাকে , বিভিন্ন অর্গানাইজেশন স্কিল নানান ভার্চুয়াল কম্পেটিশন এখন এগুলোতেই করে,ইন্ডিয়া মালয়েশিয়া থাইল্যান্ড সহ নানান দেশের ইউনিভারিসিটি এদের ভেন্ডর হিসেবে লাইফটাইম মেম্বারশিপ নিয়ে নিয়েছে। আর নামীদামি এ গ্রেড বিশ্ববিদ্দালয়গুলো নিজেরাই সফটওয়্যার বানিয়ে রেখে বসে আছে।

এসব আমি কিছুই জানটাম না তেমন ,অনলাইন এক্সাম এর সিদ্ধান্ত যেদিন হয় সেদিন একটু গুগলে ঢু মেরে নিয়েছিলাম। অপেক্ষা করছিলাম কতৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ,ভাবনাচিন্তা কি হয় দেখার। উনাদের অনলাইন লাইভে প্রক্টর আর রেজিস্টার স্যার এর কথা শুনে মনে হয়েছিল উনারা পরীক্ষা নেয়া কথা ভাবছে শুধু আর কিছু না। ঠিকঠাক মতো ভাববার জন্য একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং এ পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানানো হয়। ভেবেছিলাম উনারা হয়তো খুঁজে বের করবে কিভাবে কত প্রকারে আজকাল অনলাইন এক্সাম নেয়া যায়। এইটা চাইলে যে কেউ খুঁজে বের করতে পারে ,উনাদেরও না পাড়ার কথা না। কিন্তু শুনতেসি ডিন্স মিটিং ,এরপর নেক্সট একাডেমিক মিটিং করে তারপর সিদ্ধান্ত জানাতে পারবে !! কি বুঝেন এনারা আমার জানা নেই

আরো দেড় বছর আগে থেকেই এই দেশের প্রতিটা কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত ছিলো অনলাইন লার্নিং এবং এক্সাম সিস্টেম ডেভেলপ করা কিংবা ভেন্ডরশিপ নেয়া।
কিন্তু আমাদের টিপিক্যাল কতৃপক্ষ এসব নিয়ে কিছু ভাবেও নাই,বরং দেড় বছর পর এসে ঢাবির উপাচার্যের মুখে শুনতে হয় –“‘বেঁচে থাকলে পড়াশোনা হবে, এখন ধৈর্য”

এই বেচে থাকা মরে যাওয়া ,মায়ের বুক খালি হওয়া ক্যাম্পাস খুললে অনেক কিছু বলা হয়ে গেছে ,আর কিছু বলার নাই।

একটাই আলাপ – এসাইনমেন্ট হোক ,ও এম আর দিয়ে হোক,অনলাইন সফটওয়্যার দিয়ে হোক ,অনলাইন এক্সাম দ্রুত বাস্তবায়ন করুন। ভেড়ার পালদের বুদ্ধিতে ক্যাম্পাস খুলে এক্সাম নেয়া যেহেতু হয়নি বিগত দেড় বছরে ,আর হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। অনলাইন এর দিকেই যান.আখেরে সবার লাভ।





Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*