সুফিয়া খাতুন একজন চল্লিশোর্ধ্ব বিধবা নারী। পেশায় গৃহিণী এবং খুলনার জেলার কয়রা উপজেলার বাসিন্দা। তিন ছেলে-মেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে লবণ পানি আর দারিদ্র্যতার সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। হঠাৎ স্বামীর মৃত্যু, করোনা ভাইরাসের আবির্ভাব এবং আম্পান লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে তার সংসার। না খেয়ে, রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, নোনা পানিতে হাবুডুবু খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে ওই বিধবা নারী সুফিয়া খাতুন।
বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ পড়ুয়া তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে দারিদ্র্যতার নিম্নসীমায় বসবাস করছে সে। গত বছর জুনে স্বামী মারা যায়। স্বামীর মৃত্যুর পরে কেউ নেয়নি তার সংসারের ভার। এদিকে নেই কোন গচ্ছিত সম্পদ বা অর্থ। ছেলে-মেয়ে টিউশনি-কোচিং করে অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা, সংসার খরচ চালতো। কিন্তু এখন খুঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছে দারিদ্র্য তাদের।
ওই অসহায় বিধবা নারীর বাড়ি ৫নং কয়রা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে। স্বামীর শেষ জমিটুকু বিক্রি করে টাকা সৎ মা, বাপকে দিলেও ঠকিয়েছে তারা। সরকারি খাস জমিতে বসিয়ে বাপ বাড়ির রাস্তা বিক্রি করে দিয়েছে প্রতিবেশীর কাছে। দিনের পর দিন যাতায়াতের পথ বন্ধ থাকায় খাল সাঁতরে পাড়ি দিতে হয় ওই পরিবারকে। তবুও ছেলে-মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হাল ছাড়েনি সুফিয়া খাতুন। দুই ছেলে-মেয়ে স্নাতকে লেখাপড়া করছে। তাদের টিউশনি-কোচিং এর টাকায় জুটতো সুফিয়ার ঔষধ।
কিন্তু অসুস্থ সুফিয়া খাতুন আজ বড়ো নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। করোনা ভাইরাসের অবরুদ্ধ সময়ে ছেলে-মেয়ের কোচিং টিউশনি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। নেই কোন সহায়-সম্পত্তি। এদিকে আম্পানের করাল গ্রাসে ভেসে গেছে মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়টুকুও। রোদ- বৃষ্টি আর অসুস্থতা সুফিয়ার চিরবন্ধু। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন বরাদ্দ থাকলেও আইলা (২০০৯) এবং আম্পানে (২০২০) পরে এগিয়ে আসেনি কেউ তার সাহায্যে। নেওয়া হয়নি সুফিয়া ও তার পরিবারকে পুনর্বাসনের কোন উদ্যোগ।
কান্না জড়িত কণ্ঠে সুফিয়া খাতুন বলেন, “মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ভুমিহীন গৃহহীনদের জন্য যে তালিকা করা হয়েছে। সেখানেও নেই আমার মতো হতভাগা বিধবার নাম। স্বামী মৃত্যুর পরে দিনের পর দিন অর্থাভাব, অবহেলা, লাঞ্চণা আর অসুস্থতায় আমি উদভ্রান্ত, দিশেহারা হয়ে পড়েছি।”
করোনা এবং আম্পানে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা থেকে বঞ্চিত সুফিয়া খাতুন। এদিকে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শেষ হয়নি, নেই কোন আয়ের উৎস। এমতাবস্থায় বেঁচে থাকার স্বপ্নটা যেন সুফিয়ার কাছে মলিন হয়ে গেছে।
অর্থ কষ্টে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সে। মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেও পায়নি কোন সাহায্য সহযোগিতা। ছেলে-মেয়ে নিয়ে নিতান্তই নিদারুণভাবে দিন যাচ্ছে তার। সম্প্রতি পঞ্চাশোর্ধ বিধবা সুফিয়া বেগমের ভাঙা ঘরে বৃষ্টির পানিতে পিছলে পড়ে ডান হাত ভেঙে গেছে। ভাঙা হাত নিয়ে ভাঙা-চুরো ঘরে তার হাহাকার প্রকৃতিতে বিলীন হয়ে যায়।
এমতাবস্থায়, সুফিয়ার খাতুনের দুর্দিনে সরকারি বেসরকারি সাহায্য অতীব জরুরি হয়ে দাড়িয়েছে। অন্যথায় ছেলে-মেয়ে নিয়ে আম্পান ক্ষতিগ্রস্ত কয়রায় দারিদ্র্যতার চরম কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে হারিয়ে যাবে তার পরিবার। ধূলিসাৎ হয়ে যাবে ছেলে-মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্ন।
Leave a Reply