সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আরেকটি শ্রেণি বাড়ছে। কিন্ডারগার্টেনের মতো ‘প্লে গ্রুপ’-এর আদলে নতুন এ শ্রেণির নাম হবে ‘শিশু শ্রেণি’। ‘নার্সারি’ পড়ে প্রথম শ্রেণিতে উঠবে শিশুরা। ফলে এক বছরের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা হবে দুই বছরের। আগামী বছর সারাদেশের দুই হাজার ৫৮৩ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি চালু করা হবে।
পরীক্ষামূলক এ কার্যক্রমে সফলতা এলে ২০২৩ সাল থেকে সব বিদ্যালয়েই শিশু শ্রেণি চালু করা হবে। এতে ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন করে শিক্ষক ও একজন করে আয়া
নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হবে। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সংক্রান্ত সারসংক্ষেপে অনুমোদন দিয়েছেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আকর্ষণীয় করতে দুই বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজন ছিল। জাতীয় শিক্ষানীতিতেও সে কথা বলা আছে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত সারসংক্ষেপে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। প্রাক-প্রাথমিকের দুটি শ্রেণির জন্যই কারিকুলাম প্রণয়ন করা হচ্ছে। আগামী বছর থেকেই পাইলটিং হিসেবে কিছু স্কুলে শিশু শ্রেণি চালু হবে।
বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণির আগে এক বছরের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু আছে। তবে আগামী বছর থেকে যেসব বিদ্যালয়ে দুই বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হবে, সেখানে শিশুদের চার বছর বয়সে ভর্তি হতে হবে। তবে প্রাক-প্রাথমিকের মেয়াদ বাড়াতে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন করা সারসংক্ষেপে যার উল্লেখ রয়েছে। এ জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে একটি করে নতুন শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করতে হবে যা চার বছর বয়সী শিশুদের উপযোগী হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী অনুমোদিত সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, সরকারিভাবে দুই বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু না থাকায় শহর ও গ্রামে বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রসার ঘটছে। এতে অসম প্রতিযোগিতা ও বৈষম্য দেখা দিচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার ব্যয়ও বাড়ছে। প্রাথমিক স্তরে ২০১০ সালে ঝরে পড়ার হার ছিল ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৯ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ।
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে ঝরে পড়ার হার কমে যাওয়ার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালুর পর প্রথম শ্রেণিতে নিট ভর্তি, শিক্ষাচক্র সমাপনী, উপস্থিতি ও সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার বেড়েছে। অন্যদিকে অনুপস্থিতি এবং পুনরাবৃত্তির হার কমেছে।
সারসংক্ষেপে আর্থিক সংস্থানের ব্যাপারে বলা হয়, ইতোমধ্যে গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন থেকে ৫৩ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে যা এ ক্ষেত্রে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। ৬৫ হাজার ৬২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৪ হাজার ৭৯৯টিতে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির জন্য নির্ধারিত শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। ৩৭ হাজার ৬৭২টি বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিকের একজন করে সহকারী শিক্ষক রয়েছেন। ২৬ হাজার ৩৬৬ বিদ্যালয়ে একজন করে সহকারী শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে যা শিগগিরই নিয়োগ করা হবে।
Leave a Reply