আজ ৩০ নভেম্বর ফিলিপ হিউজের জন্মদিন। বয়স ছাব্বিশ ছোঁয়ার আগেই খেলার মাঠে মাথায় বলের আঘাতে ২৭ নভেম্বর লোকান্তরিত হন এই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার। হিউজের জন্ম ১৯৮৮ সালের ৩০ নভেম্বর। তিনি ২৬ টেস্টে তিনটি সেঞ্চুরিসহ ১৫৩৫ রান, ওডিআইতে ২৫ ম্যাচে দুটি সেঞ্চুরিসহ ৮২৬ রান আর ৩৪টি টি-টোয়েন্টিতে ১১১০ করেছেন। হিউজ ২০০৯ সালে ব্র্যাডম্যান ইয়াং ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন। অকালপ্রয়াত এই ক্রিকেটারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই লেখাটি প্রকাশিত হলোঃ
খেলার মাঠে মনঃসংযোগ ধরে রাখা বেশ কঠিন। যত বয়স বাড়ে ততই ক্রিজে মনঃসংযোগ ভালোভাবে করা সম্ভব। আমার মনে হয় আমি ধীরে ধীরে বড় হচ্ছি। সাবেক খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, ২৮-২৯ বছর বয়সে পরিণত ক্রিকেটার হওয়া যায়। আমার পরিণত ক্রিকেটার হতে আরও সময় লাগবে। আমি চার বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছি। নিজেকে ভাগ্যবানই বলতে হয়। আমার মনে হয় এই চার বছরে আমার খেলা অনেকটাই বদলে গেছে। খেলার মাঠে হোক বা মানসিকভাবে হোক সময় বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে খেলার অনেক ভেতরে আমি প্রবেশ করে চলেছি। ধীরে ধীরে আমি নিজেকে পরিণত ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
অ্যাশেজের মতো বড় খেলার আসরে আমরা ভীষণ চাপে থাকি। এমন সময় নিজেদের শান্ত রাখা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে আমাদের। পুরো দল এক হয়ে থাকার জন্য সে সময়গুলোতে বেশ সংগ্রাম করতে হয়। আমার চার বছর আগের ঘটনা প্রায়ই মনে পড়ে। সেবার আমরা অ্যাশেজ হেরেছিলাম। শুধু আমিই নই, পুরো দলটি হতাশায় ডুবে গিয়েছিল। ব্যক্তিগতভাবে অনেক ভেঙে পড়েছিলাম। সেই ঘটনা আমার মনে ভাসে সব সময়। আমি বড় হয়েছি অ্যাশেজ জয়ের স্বপ্নে, সে জন্য এটা নিশ্চয়ই আমার জন্য ভীষণ কষ্টের ছিল।
দল থেকে বাদ পড়া ভীষণ কষ্টের। কিন্তু খেলা খারাপ হলে দল থেকে বাদ পড়তেই হবে। আমি একবার দল থেকে রান না করার জন্য বাদ পড়েছিলাম। মাত্র তিন ম্যাচে ব্যাটিং করে রান না পাওয়াতে আমি বাদ পড়ি। সে সময়টা আমার জন্য বেশ কঠিন ছিল। আমি কাউন্টি খেলায় রান পাচ্ছিলাম। সেখানে ব্যাটিং ঠিকমতোই করতে পারছিলাম। কিন্তু লর্ডসে আমি বাদ যাই। ক্রিকেট খেলা চাপের খেলা। সব সময় এখানে চাপ থাকবেই। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পর্যায়ে চাপের মাত্রা সব সময়ই ভোগ করতে হয়। আপনি যখন এখানে হেরে যাবেন, তখন বেশি চাপ আপনার দিকে আসবেই। আমার ক্ষুদ্র ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে আমরা কোনোই টেস্ট ম্যাচে জিততে পারিনি। এমন সময় নিজেকে ভীষণ একা মনে হবে আপনার। মনে হবে আপনি একাই দলের একমাত্র সদস্য। পরাজয়ের জন্যই এমন অনুভূতি তৈরি হবে আপনার মধ্যে। কিন্তু নিজেকে বদলে দলের জন্য কিছু করাটাই তখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিজের খেলা দিয়ে দলে জায়গা ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে।
খেলার মাঠে নিজেকেই নিজের সুযোগ তৈরি করে নিতে হয়। কিন্তু বাদ পড়ে গেলে সেই সুযোগ আবার তৈরি করা ভীষণ কঠিন। ভালো ক্রিকেট খেলা আর বড় স্কোর দিয়ে দলে নিজের জায়গা ধরে রাখতে হয়। দল থেকে বাদ পড়ার অনুভূতি ভীষণ কষ্টের কিন্তু এর মধ্য দিয়ে আবার সামনে এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ পাওয়া যায়।
সুযোগ পেলে তাকে লুফে নিতে হবে। আমি লর্ডসে ক্রিকেট খেলার সময় এমন সুযোগ পেয়েও লুফে নিতে পারিনি। এক ম্যাচে ৮০ রান করার পর পরপর তিন ম্যাচে কম রানে আউট হই আমি। আমি দুবার বাদ পড়ি। আমার পুরো ক্যারিয়ারে অনেক ম্যাচেই আমি কম রানে আউট হয়ে গেছি। কিন্তু বড় করার সুযোগ পেলেই আমি রান এগিয়ে নিয়ে যাই। আমি ধীরে-সুস্থে ২০ কিংবা ৩০ রান করার পরেই রানকে আরও বড় করার চেষ্টায় মনোযোগ দিই। আমার ক্যারিয়ার পরিসংখ্যান এটাই বলে। আমি রান করতে পারি।
আমি তিন ধরনের ক্রিকেটই মনোযোগ দিয়ে খেলার চেষ্টা করি। আমি পরিপূর্ণ ব্যাটসম্যান হতে চাই। একদিন আমি তিন ধরনের ক্রিকেটেই পূর্ণাঙ্গ ব্যাটসম্যান হবই। এর জন্য আমার অনেক কাজ করতে হবে। সুযোগ তৈরি করতে হবে। টেস্ট ক্রিকেটের পরিপূর্ণ স্বাদ আমি পেয়েছি। আমি ক্রিকেটের খুদে সংস্করণের জন্য নিজেকে তৈরি করছি। আমি আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে পছন্দ করি। এটাই আমার সহজাত খেলা। সামনের পা এগিয়ে নিয়ে আক্রমণ করতেই আমার আগ্রহ বেশি। এর মধ্য দিয়েই আমি ক্রিকেট খেলা সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমার খেলার জন্য আরও পরিশ্রম করতেই হবে। লেগ সাইডের শটের জন্য আরও কাজ করতে হবে। আমি ধীরে ধীরে একদিনের ক্রিকেটের জন্য আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছি।
৩ নম্বরে ব্যাটিং হোক আর যেকোনো জায়গায় ব্যাটিং হোক খেলার মাঠের পরিবেশ আর পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে সব। আমি মাঠে কখনো রান করি, আবার কখনো কঠিন বোলিংয়ের জন্য রান করতে পারি না। ধীরে ধীরে মাঠে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়। সারা বিশ্বের ভালো খেলোয়াড়েরা মাঠের পরিবেশ আর পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেরা মানিয়ে নিয়ে ইনিংস বড় করে। আমিও সেই চেষ্টা করি।
ইসএসপিএন ক্রিকইনফো অবলম্বনে লিখেছেন জাহিদ হোসাইন খান
প্রথম আলোর স্বপ্ননিয়েতে পূর্বে প্রকাশিত
Leave a Reply