প্রবন্ধের কাঠামাে

রচনার প্রধান অংশ তিনটি- ক , ভূমিকা খ , বিষয়বস্তু গ , উপসংহার ।

এ ধরনের ভাগ এমন হতে হবে যেন ভূমিকা ও উপসংহার মূল রচনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয় । এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালাে হয় ভূমিকাকে সূচনা হিসেবে , মূল অংশকে মধ্যভাগ হিসেবে এবং উপসংহারকে রচনার শেষ ভাগ হিসেবে মনে করা ।

ক . ভূমিকা : ভূমিকা হচ্ছে প্রবন্ধের প্রারম্ভিক বা সূচনা অংশ ।এটি রচনার প্রবেশপথ ।একে সূচনা , প্রারম্ভিকা বা প্রাক – কথনও বলা চলে । এই অংশ অনেকটা রচনার মূল বিষয়ের দরজার মতাে । ভূমিকা হবে বিষয় – অনুগ , আকর্ষণীয় ও হৃদয়গ্রাহী । তাতে যেন অপ্রাসঙ্গিক ও অনাবশ্যক বক্তব্য ভিড় না করে , এবং তার অকারণ বিস্তৃতিও যেন না ঘটে ।

খ . বিষয়বস্তু বা মূল বক্তব্য : বিষয়বস্তু বা মূল বক্তব্যই হচ্ছে রচনার প্রধান অংশ ।
প্রবন্ধের মূল বিষয় বা বক্তব্য এই অংশে সন্নিবেশিত হয় । এই অংশে যেসব প্রসঙ্গ আলােচিত হয় তা আলাদা আলাদা অনুচ্ছেদে বিন্যস্ত করতে হয় । প্রয়ােজনে প্রতিটি অনুচ্ছেদের শুরুতে সংকেত ( point ) নির্দেশ করা যেতে পারে । সংকেত – সূত্রের ক্রমপরাম্পরা রক্ষা করা দরকার । পরম্পরার ধরন অনেক ক্ষেত্রেই বিষয়বস্তুর ওপর নির্ভরশীল । যেমন স্মৃতিকথার মতাে ঘটনা বর্ণনার সময় বা কালগত পরম্পরা রক্ষা করতে হয় । ভ্রমণ বৃত্তান্তের মতাে বিবরণধর্মী রচনায় ভৌগােলিক স্থানগত পরম্পরা রক্ষার প্রয়ােজন পড়ে । কোনাে সমস্যা নিয়ে প্রবন্ধ রচনা করতে গেলে সমস্যাগুলােকে শ্রেণীবদ্ধ করে একে একে সেগুলাের ওপর আলােকপাত করতে হয় এবং সেই সঙ্গে সমস্যার কারণ ও সমাধানের পথ নির্দেশ করারও প্রয়ােজন পড়ে । চিন্তামূলক রচনার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট বিষয় থেকে সাধারণ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার রীতিতেও এক ধরনের পরম্পরা থাকে । তা হলাে সুনির্দিষ্ট থেকে সাধারণে উত্তরণ । একে বিশেষ থেকে নির্বিশেষে উত্তরণও বলা যেতে পারে । এরই বিপরীত পন্থা হচ্ছে সাধারণ থেকে সুনির্দিষ্টে পৌঁছানাে অর্থাৎ নির্বিশেষ থেকে বিশেষে উপনীত হওয়া । মূল অংশ যেভাবেই বিন্যস্ত করা হােক না কেন প্রবন্ধ রচনার আগে তার একটা ছক তৈরি করে নেওয়া ভালাে ।

গ , উপসংহার : বিষয়বস্তু আলােচনার পর এ অংশে একটা সিদ্ধান্তে আসা প্রয়ােজন হয় বলে এটাকে “ উপসংহার ” নামে অভিহিত করা হয় । এখানে বর্ণিত বিষয়ে লেখকের নিজস্ব মতামত বা অভিজ্ঞতার
সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয় । প্রবন্ধের ভাববস্তু বা বক্তব্য শুরু থেকে রচনার মধ্যাংশ পর্যন্ত যে ধারাবাহিকতা বা ক্রমপরমপরা নিয়ে অগ্রসর হয় তা একটা ভাবব্যঞ্জনা সৃষ্টি করে শেষ হয় উপসংহারে এসে । উপসংহারে তাই বক্তব্যের সমাপ্তিসূচক একটা ভাব প্রধান হয়ে উঠলে তাকে সার্থক মনে হয় । এ ছাড়াও উপসংহারে লেখক ব্যক্তিগত অভিমত প্রকাশ করতে পারেন । সংকট উত্তরণের দিক – নির্দেশনার সারাংসার ব্যক্ত করারও সুযােগ থাকে উপসংহারে । তাই ভূমিকা অংশের মতাে উপসংহার অংশও রচনার সার্থকতার পক্ষে বিশেষ গুরুত্ববহ ।





Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*