গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম বছরের পথ পরিক্রমা  

মো. ইকবাল হোসেন, বশেমুরবিপ্রবি: মাত্র ৯ বছরেই ৮ টি অনুষদের অধীনে ৩৪ টি বিভাগে প্রায় ১১ হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে আসন সংখ্যায় দেশের ৪র্থ বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)।

৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামীলীগ সরকার  ১২টি বৃহত্তর জেলায় ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। প্রথম পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য ৬টি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয়। এই ৬টির মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ  প্রকল্পটি ছিল অন্যতম ।

১৯৯৯ সালের ১৫ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগের প্রফেসর ড. এম. খায়রুল আলম খানকে প্রকল্প পরিচালক নিযুক্ত করে গোপালগঞ্জে পাঠানো হয়। প্রকল্প পরিচালক গোপালগঞ্জ সদর হতে দক্ষিণে ঘোনাপাড়া সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্বাচন, জমি অধিগ্রহণ (প্রায় ৫৫একর) এবং জমি ভরাটের কাজ সম্পন্ন করেন। ইতোমধ্যে ২০০১ সালের ৮ জুলাই মহান জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণীত হয়। ২০০১ সালের ১৩ জুলাই তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন এবং ১৪ জুলাই  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী  অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে প্রফেসর ড. এম. খায়রুল আলম খানকে নিয়োগের সুপারিশ করেন। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ১৯ জুলাই ২০০১ উক্ত নিয়োগ অনুমোদন করেন।

কিন্তু ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় নির্বাচনে চারদলীয় জোট বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসীন হলে ২০০২ সালের ১৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্পটি সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করে দেয় এবং ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম. খায়রুল আলম খানের নিয়োগ বাতিল করে তাঁকে তাঁর পূর্বতন প্রতিষ্ঠান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়।

পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী  হয়ে ২০০৯ সালের নভেম্বরে স্থগিত প্রকল্পটি পুনর্জীবিত করেন এবং ২০১০ সালের ৫ জানুয়ারি সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রফেসর ড. এম. খায়রুল আলম খানকে আবারও প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করেন এবং সাথে সাথে ২০ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ আইন-২০০১ বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এসআরও জারী করে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনে ১৪ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে  রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান প্রফেসর ড. এম. খায়রুল আলম খানকে পুনরায় ৪ (চার) বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। গত ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে তাঁর মেয়াদ শেষ হলে রাষ্ট্রপতি ২রা ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনকে ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে ৪ (চার) বছরের জন্য নিয়োগ প্রদান করে বশেমুরবিপ্রবিতে প্রেরণ করেন। তাঁর  মেয়াদ শেষ হলে গত  ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখ হতে পরবর্তী ৪ (চার) বছরের জন্য পুনরায় ২য় মেয়াদে ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে তিনি নিয়োগ পান।

২০১১ সালে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসে ৪টি অনুষদ; প্রকৌশল, বিজ্ঞান, ব্যবসা অধ্যয়ন এবং মানবিকে মোট ১৬০ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। নিয়োগ দেয়া হয় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষকদের।  

 অদ্য বছর অবধি বিশ্ববিদ্যালয়টি পাঁচ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন এবং প্রশাসনিক ভবনসহ বর্তমানে ছাত্রদের ৫০০ আসন বিশিষ্ট ৩টি এবং ছাত্রীদের ২৫০ আসন বিশিষ্ট ৩টি হলে ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। ছাত্রদের ৩টি হল যথাক্রমে স্বাধীনতা দিবস হল, বিজয় দিবস এবং শেখ রাসেল হল। ছাত্রীদের হলগুলো যথাক্রমে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল, শেখ রেহেনা হল এবং নতুন ছাত্রী হল।

পাশাপাশি শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ০২টি ডরমিটরি, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী কোয়ার্টার, লাইব্রেরি ভবন, ভাইস-চ্যান্সেলরের বাসভবন, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটারিয়া, কেন্দ্রীয় মসজিদ, মন্দির, সীমানা প্রাচীর এবং প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য একটি পানি শোধনাগার নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।

ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১২টি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড-এর পক্ষ থেকে বাস ২টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৮টি অনুষদের অধীনে ৩৪ টি বিভাগে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম উদ্ভিদ সংগ্রহশালা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশ বিদেশের বিভিন্ন উদ্ভিদের সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসকে সবুজ-শ্যামলে ভরিয়ে তোলা হয়েছে।   

বশেমুরবিপ্রতে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। ১৫ কোটি টাকা নির্মাণব্যয় সম্পন্ন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল কমপ্লেক্স, সম্ভবত  আড়াই কোটি টাকা ব্যয়সম্পন্ন শহীদ মিনার এবং প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়সম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় মেইন গেট ও সাবগেটসহ বেশ কিছু প্রকল্প।

এসকল প্রকল্পের কাজ আগামী ২০২১ সালের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। এমনটাই জানিয়েছেন  বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের উপ-পরিচালক তুহিন মাহমুদ।

তাছাড়া তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার প্লান অনুযায়ী  উন্নয়ন প্রকল্পের অবশিষ্ট ভবনগুলোর জন্য ডিপিপি আনুমানিক ১ হাজার কোটি ৫০ লক্ষ টাকার প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে  প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

শিক্ষার্থী: বাংলা বিভাগ, বশেমুরবিপ্রবি, গোপালগঞ্জ -৮১০০ ।

 





Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*