আইইএলটিএস: কী ও কেন?

রধানত যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য আইইএলটিএস অপরিহার্য ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর আমেরিকা অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এ পরীক্ষার স্কোর গ্রহণ করছে। ইউরোপের বেশির ভাগ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইইএলটিএস গ্রহণ করে থাকে। এই পরীক্ষায় সবাই অংশ নিতে পারেন। এর জন্য কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন নেই।

IELTS_Edited

 

 

পরীক্ষাপদ্ধতি
আইইএলটিএস পরীক্ষাটি দুই ধরনের: একাডেমিক ও জেনারেল ট্রেনিং। স্নাতক, স্নাতকোত্তর অথবা পিএইচডি পর্যায়ে পড়াশোনার জন্য একাডেমিক মডিউলে পরীক্ষা দিতে হয়। কোনো কারিগরি বিষয় বা প্রশিক্ষণে অংশ নিতে হলে সাধারণত জেনারেল ট্রেনিং মডিউলে পরীক্ষা দিতে হয়।
আইইএলটিএস পরীক্ষায় দুই ধরনের মডিউলেই চারটি অংশ থাকে। লিসেনিং (Listening), রিডিং (Reading), রাইটিং (Writing) ও স্পিকিং (Speaking)।
লিসেনিং (Listening)
কথোপকথন শুনে বোঝার ক্ষমতা যাচাই করা হয় এ অংশে। ৪০টি প্রশ্ন থাকবে। ৩০ মিনিটে চারটি অংশে এ পরীক্ষা নেওয়া হবে। কোনো বিষয়ে বক্তৃতা, কথোপকথন ইত্যাদি বাজিয়ে শোনানো হয় পরীক্ষার্থীদের। শোনা অংশ থেকেই প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। একটি বিষয় কেবল একবারই বাজিয়ে শোনানো হয়।
রাইটিং (Writing)
পরীক্ষার্থীর ইংরেজি লেখার দক্ষতা যাচাই করা হয় এতে। এ পর্বে সময় বরাদ্দ থাকে এক ঘণ্টা। একাডেমিক বিভাগের পরীক্ষার্থীদের ডায়াগ্রাম দেখে নিজের কথায় উত্তর লিখতে হয়, আর জেনারেল বিভাগের পরীক্ষার্থীদের সুনির্দিষ্ট বিষয়ে নিবন্ধ লিখতে হয়। তাই পরীক্ষার আগে বুঝে নিন কোন মডিউলটি আপনার জন্য প্রযোজ্য।
রিডিং (Reading)
তিনটি বিভাগে ৪০টি প্রশ্ন থাকবে। সময় এক ঘণ্টা। নানা জার্নাল, বই, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন থেকে কিছু অংশ তুলে দেওয়া হবে। সেখান থেকেই বাক্য পূরণ, সংক্ষিপ্ত উত্তর, সঠিক উত্তর খুঁজে বের করা ইত্যাদি থাকবে।
স্পিকিং (Speaking)
তিনটি অংশে মোটামুটি ১১ থেকে ১৪ মিনিটের পরীক্ষা হয়। প্রথম অংশে পরীক্ষার্থীকে কিছু সাধারণ প্রশ্ন করা হয়, যেমন: পরিবার, পড়াশোনা, কাজ, বন্ধু ইত্যাদি। দ্বিতীয় অংশে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে এবং দুই মিনিট কথা বলতে হয়। তৃতীয় অংশে চার থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য পরীক্ষকের সঙ্গে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে কথোপকথন চালাতে হয়।
স্কোর
এক থেকে নয়-এর স্কেলে আইইএলটিএসের স্কোর দেওয়া হয়। চারটি অংশে আলাদাভাবে প্রাপ্ত স্কোর যোগ করে গড় করে চূড়ান্ত স্কোর দেওয়া হয়। ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলে সাধারণত সাত থেকে সাড়ে সাত পেতে হয়। তবে সাড়ে ছয়-এর কম খুব কম বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়।
প্রস্তুতি
শুরুতেই লক্ষ্য ঠিক করে নিন। এ জন্য প্রথমেই কয়েকটা মক-টেস্ট দিয়ে নিতে পারেন। এর স্কোর দেখে বুঝতে পারবেন আপনি কাঙ্ক্ষিত স্কোর থেকে কতটা দূরে অবস্থান করছেন। এরপর শুরু করে দিন প্রস্তুতিপর্ব। প্রতিদিন নিয়ম করে প্রস্তুতি নেওয়া ভালো। একেক জনের একেক রকম সময় লাগে। তবে মাস তিনেক সময় হাতে রাখা ভালো। প্রস্তুতির ক্ষেত্রে স্পিকিং অংশে ভালো স্কোর পেতে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলার অভ্যাস চালু করা বেশ কাজে দেয়।
কেমব্রিজ থেকে প্রকাশিত আইইএলটিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়। আইইএলটিএস পরীক্ষায় ভালো স্কোর পেতে এগুলো সমাধান করা খুব জরুরি। মক-টেস্ট ও প্রস্তুতির জন্য সব সময় ঘড়ি দেখে বা স্টপ ওয়াচ ধরে প্রশ্নপত্র সমাধান অনেক কাজে দেবে। আইইএলটিএস সম্পর্কে যেকোনো তথ্য পেতে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হলো ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং আইডিপি, বাংলাদেশ। ব্রিটিশ কাউন্সিলের লাইব্রেরিতে প্রস্তুতির জন্য অনেক ভালো বই ও ব্যবহারিক উপকরণ পাওয়া যায়। লাইব্রেরির সদস্য হলেই এগুলো ব্যবহার করা যাবে। যেকোনো জায়গা থেকে যেনতেন বই কিনে টাকা নষ্ট না করাই ভালো। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, আইডিপি অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের সরাসরি তত্ত্বাবধানেই আইইএলটিএস হয়। এসব স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকেই সরাসরি প্রস্তুতি সহায়তা নেওয়া সম্ভব হলে বিকল্প বা ছোট প্রতিষ্ঠানের খোঁজ করার কোনো দরকার নেই।
কোথায়, কীভাবে পরীক্ষা
বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং আইডিপির আয়োজনে আইইএলটিএস পরীক্ষা দেওয়া যায়। প্রতি মাসে সাধারনত তিনবার পরীক্ষা নেওয়া হয়। ওয়েবসাইটে অথবা ফোন করে পরীক্ষার তারিখ জেনে নিতে পারেন। দুই সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। পরীক্ষার ফি এখন ১৩ হাজার ৮০০ টাকা। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সাম্প্রতিক সময়ের পাসপোর্ট ও দুই কপি পাসপোর্ট আকারের রঙিন ছবি লাগবে। আইইএলটিএস স্কোরের মেয়াদ থাকে দুই বছর।
বাড়িতে বসেই অনলাইনে ফরম পূরণ করে টাকা জমা দেওয়া যাবে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের নির্দিষ্ট কিছু শাখায়। ব্রিটিশ কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে দেখে নিতে পারবেন কোন কোন শাখায় টাকা দেওয়া যাবে। এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে আপনার পরীক্ষার সময়, স্থান, নিবন্ধন নম্বর ইত্যাদি তথ্য। অনলাইনে পূরণ করা ফরমের প্রিন্ট কপি ও ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার স্লিপ সংগ্রহে রাখুন, এগুলো পরে কাজে লাগতে পারে।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের আয়োজনে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে পরীক্ষা দেওয়া যায়।
ফোন: ঢাকা ৮৬১৮৯০৫, চট্টগ্রাম ০৩১৬৫৭৮৮৪-৬ এবং সিলেট ৮২১৮১৪৯২৫।
ওয়েবসাইট: www.britishcouncil.org/ Bangladesh, www. ielts.org

 





About লেখাপড়া বিডি ডেস্ক 1493 Articles
লেখাপড়া বিডি বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা বিষয়ক বাংলা কমিউনিটি ব্লগ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*