এই যুগ ব্রান্ডিংয়ের যুগ। বাংলায় বলতে গেলে, মার্কা লাগানোর যুগ। আইবিএর চেয়ে বড় ব্রান্ড বাংলাদেশে ক্যারিয়ার মার্কেটে নেই। নিজে যদি অন্যকে চাকরি দিতে চান, মানে উদ্যোক্তা জতে চান – তাহলেও এই ব্রান্ড আপনাকে এদিয়ে রাখবে। দাম বেশি, তাই এই ব্রান্ডটা নিজের করে পেতে একটু কষ্ট করা লাগে। এজন্যই প্রিপারেশানটা একটু কষ্টের। আর কষ্ট সবাই করে। কেউ দুদিন আগে, কেউ পরে। যারা স্মার্ট তাঁরা কষ্টটা আগে করে। পরে আর তাঁদের কষ্ট করা লাগে না। আর আপনি অবশ্যই স্মার্ট। স্মার্ট হলেই এই লেখাটা পড়ুন, আমার মত বোকা হলে পড়ার দরকার নেই।আইবিএতে এমবিএর প্রিপারেশান নিয়ে লিখব বলে বলে অনেকদিন অনেককে অপেক্ষায় রেখেছি। তো শুরু করি –
প্রশ্নের প্যাটার্ন এরকমঃ এমসিকিউ ৮০ নম্বরঃ ম্যাথ ৩০, ইংরেজী-৩০, এনালাইটিক্যাল-২০। সেই সাথে ২০ নম্বরের ইংরেজি লিখিত, মানে essay. (আইবিএ প্রশ্নে এগুলোর সুন্দর সুন্দর নাম আছে, আমি অত স্মার্ট নই, সবকিছু সহজ করে দেখতেই ভালবাসি।)
প্রথম কথা হল – আগের বছরের একটা কোয়েশ্চেন বুক নিয়ে নিন। দেখে নিন তাতে যেন অবশ্যই প্রশ্ন সলভ করা থাকে। সলভ করা মানে শুধু উত্তর দিয়ে দেয়া নয় – ডিটেইলস মানে কিভাবে সলভ করেছে সেটা। এজন্য বাজারের মেনটরস বা সাইফুর’স এর প্রশ্ন ব্যাংকেই চলবে। নীলক্ষেতের ফুটপাত থেকে পুরুনোটা কিনলেও হবে। প্রশ্ন দেখে নিজেই বের করুন কি কি সমস্যা। এরপর কোথা থেকে সেগুলো প্রাকটিস করতে হবে সেটা জেনে কিছুদিন নিবিষ্ট মনে পড়তে হবে।
***** ইংরেজী (এমসিকিউ ৩০ নম্বর): মূল চ্যালেঞ্জটা ভোকাবিউলারি। প্রশ্নটা যেভাবেই করুক, ভোকাবিউলারি ভাল না হলে বেশিরভাগ প্রশ্নেরই কোন কিনারা খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই ভোকাবিউলারি শিখতে হবে। ভোকাবিউলারি আমি কিভাবে পড়েছি, সেটা আগে ডিটেইল বলেছি। ইউটিউবে আমার ভোকাবিউলারি টিউটোরিয়াল নিয়ে লিখেছি। এখানে আর বলছি না।
ইংরেজির জন্য আইবিএতে GRE প্রশ্ন ফলো করে। Antonym, analogy, sentence completion – এগুলো মোটামুটি GRE এর মত। এজন্য সবচেয়ে ভাল বই হচ্ছে – GRE Big Book. এটা আসলে GRE এর প্রশ্নব্যাংক, শুধু উত্তর দেয়া আছে, ডিটেইল সলিউশান কিন্তু এতে নেই। তাই যারা জানেন যে, Antonym, analogy, sentence completion –এগুলো কি ধরনের , তাঁরা GRE Big Book দেখতে পারেন। আর যারা মাত্র শুরু করবেন, তাঁরা অন্য কোন GRE বই দেখলে কিভাবে আনালজি সলভ করে, Fill in the Blanks এ কি ধরনের লজিক দেয়, সেটা বুঝা যাবে। ইংরেজির জন্য বইয়ের জন্য আমি পছন্দ করি – Kaplan GRE Verbal. তবে GRE বইগুলো তো ইংরেজিতে লিখা, তাই যারা বাংলায় পড়তে চান বা শুরু করতে চান, তাঁরা সাইফুর’স বা মেনটরস এর গাইডেও এগুলো পাবেন। (এসব বই ফুটপাতের পুরুনোটা কিনলেও একই কাজ দিবে।)
** Antonym/synonym: এ নিয়ে বলার কিছু নেই। ভোকাবিউলারি জানতে হবে। তবে শুধু শব্দ জেনেই বসে থাকলে হবে না। প্রশ্নগুলো কনফিউজিং, জানলেও সঠিকটা খুঁজে পেতে সমস্যা হয়। তাই আগের ১০ বছরের প্রশ্ন প্রাকটিস করুন। আর GRE Big Book – এ হাজারের উপরে আছে।
** Sentence Completion: বড় একটা বাক্যে ১/২ টা গ্যাপ দেয়া থাকে। এই গ্যাপগুলো লজিক্যাল গ্যাপ – মানে বাক্যে শব্দ ব্যবহারের লজিক টেস্ট। একটা উদাহরণ দেই –
His ___was well known but recently he is demonstrating some _____ characteristics.
a). prudence … extravagant, (b). dormant…. regal, (c). decency…. ephemeral, d). circumspection… judicious
বাক্যটা দুবার পড়ুন, মাঝে একটা but আছে, এর মানে হল – ১ম গ্যাপ আর ২য় গ্যাপে দুটি বিপরীত অর্থের শব্দ হবে। এখন আগে দেখুন কোন দুটা শব্দ বিপরীত। সেটি পেলে সেগুলোকে বসিয়ে বাক্যটা আবার পড়ুন। যদি অর্থ মিলে তাহলে এটাই উত্তর। এটার উত্তর (a)। এই কাজটা দ্রুত করতে হবে। এরকম কয়েক ধরনের লজিক টেস্ট করা হয় এই Sentence Completion –এ। এই লজিকগুলো আগে দেখে নিয়ে (উপরে বইয়ের নাম দিয়েছি সেখান থেকে) অনেক প্রাকটিস করতে হবে। প্রাকটিস করার জন্য আগের প্রশ্ন আর GRE Big Book –এ অনেক আছে।
** Comprehension: একটা passage দিয়ে সেটা থেকে কয়েকটা প্রশ্ন করে। এজন্য আমি বলব – শুধু আগের প্রশ্নের comprehension গুলো দেখে নিন। GRE বইতে অনেক বড় বড় passage আছে, আইবিএতে অত বড় দেয় না।
** Analogy: দুই অংশের সম্পর্ক, যেমন – Tiger: Zoology:: Mars: A. astrology B. astronomy C. abstract noun D.material noun, প্রথম দুটার সম্পর্ক দেখে পরের দুটার সম্পর্ক বের করা। এই উদাহরণে Tiger নিয়ে স্টাডি হয় Zoology তে, একভাবে Mars নিয়ে স্টাডি হয় Astronomy তে। এরকম বেশ কয়েক ধরনের সম্পর্ক হতে পারে। এই সম্পর্কগুলো আগে দেখে নিয়ে (উপরে বইয়ের নাম দিয়েছি সেখান থেকে) অনেক প্রাকটিস করতে হবে। প্রাকটিস করার জন্য আগের প্রশ্ন আর GRE Big Book.
** Correction: এটা গ্রামার, GRE তে গ্রামার নেই। আছে TOEFL, GMAT এ। যারা TOEFL, GMAT এর গ্রামার দেখতে চান, সেটা খুব ভাল। তবে সেটা করতে না চাইলে যে কোন গ্রামার বইয়েই হবে। তবে আগের প্রশ্নের ধরন দেখতে হবে, না হলে পরীক্ষা দিতে গিয়ে মনে হবে এটা তো চিনি না।
***** ম্যাথঃ ম্যাথের জন্য আগের ১৫ বছরের প্রশ্ন যথেষ্ট। Arithmetic, Algebra, Geometry থেকে প্রায় সমান প্রশ্ন থাকে। আগের প্রশ্ন দেখে যেখানে সমস্যা, সেগুলোই করতে হবে। এই ম্যাথগুলো আসলে আমাদের স্কুল লেভেলের ম্যাথে কাভার করে না। তবে খুব কঠিন না। তাই বাজারের ম্যাথ গাইড দেখতে পারেন। GRE, GMAT –এর ম্যাথো দেখতে পারেন। আমি তো আগে GRE পরীক্ষা দিয়েছিলাম, তাই Nova’s Gre আমার ছিল। এটা জরুরী না। সাইফুরস, মেনটরস এসব ম্যাথ গাইডেই হবে। Number (যেমন odd, even), Geometry এর ম্যাথ – এসব ভাল করে করতে হবে। আর অবশ্যই ক্যালকুলেটর না নিয়ে দ্রুত করার প্রাকটিস করতে হবে।
****** Analytical: এতে কয়েক ধরনের প্রশ্ন থাকে, যেমন- Puzzle, Critical reasoning, Data sufficiency ইত্যাদি। শুরু করার জন্য বাজারে এগুলোর প্রত্যেকটার জন্য সাইফুরস-এর আলাদা আলাদা ছোট ছোট বই আছে। যেমন Saifur’s Analytical Puzzle, Saifur’s Critical Reasoning এমন। ওগুলোতেই হবে (পুরুনোতেও চলবে)। এগুলো দেখে একটা আইডিয়া নিয়ে আগের প্রশ্ন সলভ করুন। আমি এর বেশি কিছু করিনি। তবে এনালাইটিকাল পার্টে সময় আপনাকে দিতেই হবে। puzzle সলভ করার জন্য খাতায় লিখে বা এঁকে এঁকে আগাতে হবে। পরীক্ষার স্ক্রিপ্টে রাফ করার জায়গা থাকে।
***** ইংরেজি লিখিতঃ ২০ নম্বর, সাধারণত ২ টা অংশ থাকে। একটা short essay আর একটা গ্রামার রিলেটেড। শুধু আগের প্রশ্ন প্রাকটিস করুন। short essay সাধারণত বিজনেস রিলেটেড কিছু দেয়। সেটাকে একটু ডেটা, ইনফরমেশান দিয়ে ভাল ইংরেজি, ভাল ভোকাবিউলারি দিয়ে লিখতে চেষ্টা করুন।
***** টাইম মেনেজমেন্টঃ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আইবিএ তে তিনটা পার্ট (Math, English,Analytical)–এ আলাদা আলাদা পাশ করতে হয়। তাই অবশ্যই সব সেকশান টাচ করতে হবে। আমি আর আমার এক বন্ধু একসাথে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। যতটুকু মনে ছিল, মিলিয়ে দেখেছিলাম দুজনেরই মোটামুটি সমান নম্বর পাবার কথা। অথচ রেজাল্টে দেখলাম – ওর নাম নেই। আলাপ করে বুঝলাম – ও আসলে এনালাইটিকাল ২ টা উত্তর করেছিল। তাই এনালাইটিকালে পাশি করেনি। ও জানত না যে , সবগুলোতে আলাদা পাশ করতে হবে। তাই দেড় ঘন্টায় কিভাবে কি উত্তর করবেন, সেটার প্লান করে ফেলুন। মানে পরীক্ষার হলে গিয়ে সব ম্যাথ উত্তর করতে গিয়ে আপনি এনালাইটিকাল ধরলেনই না, এমন যেন না হয়। আমার পরামর্শ হল – সব গুলো পার্টে পাশ নম্বর আগে নিশ্চিত করুন, তারপর আপনি যেটা ভাল মনে করেন, সেই পার্টে ফিরে যান।
****** ভাইভাঃ ডিসেন্ট ড্রেস। ইংরেজিতে ভাইভা হবে। আইবিএর শিক্ষকরাই ভাইভা নিবেন। তাই ভয় নেই বা ওভার স্মার্ট হবার দরকার নেই। শিক্ষকদের (কারো কারো) ইংরেজি উচ্চারন একটু আমেরিকান ধরনের হতে পারে। প্রশ্ন না বুঝলে বিনীতভাবে আবার জিজ্ঞেস করুন। এক্ষেত্রে আমার অভিজ্ঞতা ছিল এমন – ভাইভা প্রায় শেষ, আমার ব্যাকগ্রাউন্ড, কেন এমবিএ করব, কী কাজে আসবে ক্যারিয়ারে – এসব নিয়ে কথাবার্তাও শেষ। হঠাৎ জিয়াউল হক মামুন স্যার বললেন, ‘What is the capital of Egypt?’ আমি বললাম, কায়রো। পরের প্রশ্ন, “Which Continent does it belong to?” মানে মিশর কোন মহাদেশে? স্যারের উচ্চারণ একটু আলাদা, কন্টিনেন্টকে তিনি কান্টিনেন্ট বলছিলেন, আর শব্দটাও একটু কুইক টেনে যাচ্ছিলেন। আমি শুনছিলাম – কান্ট্রি। ভেবে পাচ্ছিলাম না – কোন দেশ কি তাইলে মিশরকে দখল করে ফেলল নাকি! আমি ৩ বার জিজ্ঞেস করে বুঝেছিলাম যে, ওটা কান্ট্রি না কান্টিনেন্ট। তখন বললাম, স্যার আফ্রিকা। তাই আমার মনে হয়, ভাইভা নিয়ে বেশি ভাবার কিছু নেই।
সবশেষে একটা গোপন কথা – ২৮-তম বিসিএস আমি ৩য় হইছিলাম। সত্যি করে বলতে, আমার বিসিএসের প্রিপারেশান নিয়ে কনফিডেন্ট ছিলাম না। কিন্তু ম্যাথ রিটেন পরীক্ষায় ‘মানসিক দক্ষতা’র ৫০ নম্বরের পরীক্ষা দিয়ে আমার মনে হইছিল – আমি ৯৫% পরীক্ষার্থীদের থেকে এখানে এগিয়ে যাব। আপনারা ২৮-তম বিসিএসের মানসিক দক্ষতার প্রশ্নটা দেখতে পারেন। বিসিএসের ইতিহাসে অত কঠিন ইংরেজী আর এনালাইটিকাল হয়নি। আর ওগুলোই ছিল আমার কমপিটিটিভ এডভানটেজ। সম্ভবত ওই ৫০ এ ৪৮ পেয়েছিলাম। আর এটা সম্ভব হয়েছিল আমি আগে GRE, IBA এসব পরীক্ষা দিয়েছিলাম বলে। তাই যাঁদের সময় আছে – এই কষ্টকর প্রিপারেশানটা নিলে, সেটা কাজে আসবেই।
শুভকামনায়
সুজন দেবনাথ
Leave a Reply