আমার আজকের এই লেখাটা পরীক্ষার্থী ভাইবোনদের জন্য, তবে যারা শিক্ষিত বেকার আছেন তাদেরও আমার পারামর্শ কিছুটা হলেও কাজে লাগতে পারে। সময় নিয়ে একবার পড়ে দেখুন। আশা করি করি উপকার ছাড়া অপকার হবে না।
চলছে এস এস সি পরীক্ষা, শেষ হতে না হতে শুরু হবে এইচ এস সি পরীক্ষা। আবার পরীক্ষা শেষেই শুরু হয় ভর্তি যুদ্ধ। কোথায় ভর্তি হবেন, কোন লাইনে পড়বেন, টেকনিক্যাল নাকি জেনারেল লাইন। এসব নিয়ে যেন মানুষের চিন্তার শেষ নেই। এবার ধরুন, এইচ এস সি পাশ করতে আপনার সময় লাগে মোট ১৫ বছর, এইচ এস সি ২ বছর, এর পর অনার্স ৪ বছর সব শেষে মাস্টার্স ধরলাম ১ বছর। তাহলে মোট সময় গেলো, ২২ বছর। এর পর শুরু হবে চাকরী খোজার পালা। কেউ কেউ মামা চাচার জোড়ে হয়তো ভালো চাকরী পাবেন আবার কেউ বেকারত্বের সাথে দিন পার করতে শুরু করবেন। কেউ কেউ আবার চাকরী না পেয়ে বেছে নেবে নেশা কিংবা সান্ত্রাসী মুলক কাজ। যাই হোক এটা আমাদের নিত্যদিনের রুটিন।
এখন কথা বলব তাদের নিয়ে যারা গত ২২ বছর পড়াশুনা করেও বেকার আছেন। আচ্ছা আমার একটা প্রশ্ন হলো, গত ২২ বছরে কি এমন কোন কাজ শেখেননি যাতে করে চাকরী না পেলেও কিছু একটা করে খেতে পারেন? রিক্সা,অটো কিংবা ঠ্যালাগাড়ি চালানো?
আপনাদের উত্তর- আরে ভাই আমি জমিদার বংশের লোক অথবা এতো পড়াশুনা করে কি ঠ্যালাগাড়ি চালাবো? আজবতো ভাই আপনি। প্যাসটিজ বলতে তো একটা বেপার আছে তাই না। নজরটাকে একটু উন্নত করুন।
আমার কথা- বেকার থেকে চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাসী আর নেশা করার থেকে তো অটো রিক্সা চালানো অনেক সম্মানের তাই না?
আপনাদের উত্তর- আরে ভাই রাখেন আপনার সম্মান, ওসব বুলি বই পুস্তকে হয়, বাস্তবে নয়।
আমার কথা- ওকে ওকে ওকে আমি আপনার সাতে একমত। তাহলে চলুন সম্মানজনক কাজের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। যে কাজগুলো এখন থেকে শিখতে শুরু করলে পড়াশুনা শেষ করে অন্তত বেকার থাকতে হবে না। কারো খোটা শুনতে হবেনা।
হ্যা আপনারা ঠিকই ধরেছেন, আমি আউটসোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিং এর কথা বলছি।
আপনাদের মন্তব্য- শালা বাটপার, এতোক্ষন লোকটাকে ভালো মনে করেছিলাম, এখন দেখি ধান্দাবাজ। মানুষের টাকা হাতিয়ে নেয়ার বুদ্ধি করছে। কতো প্রতিষ্ঠানে কতো টকা দিলাম, কই এক টাকাওতো ইনকাম করতে পারলাম না। অথচ বিজ্ঞাপন দেয়ার সময় বলে শিওর সাকসেস। যত্তসব।
আমার কথা- একটু থামুন, এবার আমাকে কিছু বলতে দেন। আমার কোন প্রতিষ্ঠান নেই, আমি কাউকে অনলাইনে ইনকামের জন্য কাজ শেখাই না। যদি কারো কোন হেল্প লাগে তাহলে বিনামূল্যে দেয়ার চেষ্টা করি। তার মানে আপনাদের ভয়ের কোন কারন নেই। কারো টাকা হাতাবো না। লোভনীয় অফার দেখে যারাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিখতে গিয়েছেন তাদের বেশির ভাগই কোন না কোন ভাবে প্রতারিত হয়েছেন এমন উদাহরন হাজার হাজার দেয়া যায়। তবে আমার প্রশ্ন হলো, তাহলে সকল প্রতিষ্ঠানই কি বাটপার? তবে চলুন কি, কোথায়, কিভাবে কার কাছে শিখবেন তা নিয়ে একটু ধারনা দেই।
ধরুন আপনি আমার কাছে কাজ শিখতে চাচ্ছেন। আমি একজন প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সার। আমি যদি প্রতি ঘন্টা একা কাজ করি তাহলে আমার প্রায় ২০০০ টাকা উপার্জন হয়। যদি আমি দিনে ৪ ঘন্টা কাজ করার সুযোগ পাই তাহলে গড়ে আমার মাসিক ইনকাম ধরলাম ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। এসব উদাহরন মাত্র।
এখন আপনি যদি আমার কাছে কাজ শিখতে চান তাহলে আপনাকে আমার দিনে কম হলেও ২ ঘন্টা করে সময় দিতে হবে। সেই সাথে রিফ্রেস হতে আরো ৩০ মিনিট সময় চলে যাবে তাহলে আপনার পিছনে আমার দিনে মোট আড়াই ঘন্টা সময় দিতে হবে। আমার আড়াই ঘন্টা সময় মানে ৫০০০ হাজার টাকা। যদি আপনাকে আমি মাসে ৩০ দিন সময় দেই তাহলে আপনি যদি আমার কাছে কাজ শিখতে চান তাহলে আমাকে দিতে হবে প্রায় ১ লক্ষা ৫০ হাজার টাকা। বিষয়টা যৌক্তিক কিনা ভেবে দেখুন। যদি আমি ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ১০ জনের ভিতর ভাগ করে দেই তাহলে জন প্রতি পরবে ১৫ হাজার টাকা। এই ১০ জনকে শেখাতে আমার আলাদা ক্লাশরুম নিতে হবে, যেখানে যাওয়া আসা, রেষ্ট নেয়া, আপনাদের পিছনে বক বক করা। ধরলাম, মাসে আপনাদের পিছনে আমার খরচ হবে ৫০ হাজার টাকা। তার মানে আমার নিট প্রফিট ১ লক্ষ্য টাকা।
এবার আপনারাই চিন্তা করুন, যেখানে আমি ঘরে বসে কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই মাসে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারি সেখানে কেনোই বা আপনাদের পিছনে সময় দিয়ে মাসে কেবল ১ লক্ষ টাকা ইনকাম করব? কোনটা বেশি লাভজনক? আপনাদের সময় দিবো নাকি নিজে কাজ করব? একজন বোকাওতো বলবে বাড়তি ঝামেলার দরকার কি? এখন আমি যদি কোন কচিং সেন্টার চালাই তার মানে হলো, অনলাইনে আমার সময় দেয়ার সুযোগ নেই, কিংবা আমার অনলাইনে নিজের কোন ক্যারিয়ার নেই। কোচিং সেন্টারই আমার আসল ব্যবসা। বলতে পারেন একাধিক ব্যাচ করলেই আরো লাভ হবে। আমি বলব, বাড়তি ঝামেলার দরকার কি?
আমি জানি না আপনাদের কিছু বোঝাতে পারলাম কিনা। এখন আজকাল লোভনীয় অফারে দেখেন ৫০০০ টাকায় লক্ষ টাকা ইনকামের অফার দেয়। এখন আপনিই চিন্তা করুন ঐ ব্যক্তি যদি নিজেই লক্ষ টাকা ইনকাম করতে পারতো তাহলে কোচিং সেন্টার খুলে বসার সময় সুযোগ থাকতো না। তার মানে হলো তারাই কোচিং সেন্টার দিয়ে বসে আছে যারা নিজেরাই সফল নয়, তাহলে তাদের কাছে শিখে আপনি কতটুকুই বা সফল হতে পারবেন একাবার ভেবে দেখুন?
তাহলে শিখবেন কোথা থেকে?
আমি কোচিং এর বিরোধিতা করছি না। তবে কোন কচিং এ যাওয়ার আগে তাদের ব্যকগ্রাউন্ট সম্পর্কে একটু জেনে নিন। কারো না কারো কাছে তো কাজ শিখতে হবে। তবে আমার পরামর্শ হলো। ইউ টিউবে হাজার হাজার টিউটোরিয়াল আছে কাজ শেখার জন্য। বিনামূল্যেই শিখে ফেলুন। তবে আমরা বাঙ্গালী, ফ্রি জিনিসের কদর বুঝি না।
কি কি শিখবে?
অবশ্যই প্রথমে কম্পিউটার ব্যবহার শিখবেন। ইন্টারনেট সম্পর্কে ভালো ধারনা নিয়ে নিবেন। কিভাবে সার্চ করে কোন তথ্য বের করতে হবে সেটা সম্পর্কে খুব ভালো ধারনা না থাকলে খুব বেশি দুর এগোতে পারবেন না।
এবার আসি অনলাইনে কাজ করার জন্য আপনার কি শিখতে হবে। আসলে আপনি যে কাজই জানেন না কেন আপনি সেগুলোকে কাজে লাগিয়েই অনলাইনে কাজ করতে পারবেন। তবে আপনি যদি আমাকে প্রশ্ন করেন তাহলে বলব, আপনি এস ই ও শেখেন। কারন হলো আমি এস ই ও এক্সপার্ট। আপনি যদি কোন গ্রাফিক্স ডিজাইনারকে প্রশ্ন করেন তাহলে সে উত্তর দেবে , আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখুন। ইউ টিউব নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের প্রশ্ন করলে উত্তর পাবেন, আপনি ইউ টিউব শেখেন। তার মানে হলো যে যে বিষয়ে এক্সপার্ট বা সফলতা পেয়েছে সে সেই বিষয়ই শিখতে বলবে এটা স্বাভাবিক। অর্থাৎ সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে আপনি কোন বিষয় নিয়ে আগাবেন ।এখন ধরেন আপনি ইউ টিউব নিয়ে কাজ শুরু করলেন। কিছুদিন পরে আমার সাথে পরিচয় হলো, আমি বললাম আমি এস ই ও করে মাসে প্রায় ২ লাখ টাকার মত ইনকাম করি। আপনি আমার কথায় মটিভেটেড হয়ে ইউ টিউব ছেড়ে এস ই ও শেখা শুরু করলেন। এর কিছুদিন পরে দেখলেন আপনার এক বন্ধু এন্ড্রয়েড এপস ডেভলপ করে মাসে হিউজ এমাউন ইনকাম করছে। তখনও আপনি মটিভেটেড হয়ে এন্ড্রয়েড এপস নিয়ে কাজ শুরু করে দিলেন।
একটা সময় দেখা গেলো আপনি কোন কাজই ঠিক মতো শিখতে ও করতে পারেন নি। একটা সময় ডিমটিভেটেড হয়ে সব কাজই ছেড়ে দিলেন কারন আপনি তো কোথাও সফল হন নি। এখন কেউ যদি আপনার কাছে পরামর্শ নিতে আসে তাহলে আপনার উত্তর হবে, অনলাইন থেকে কোন ইনকাম করা সম্ভব নয় ওগুলা সব ফালতু।
তাই আমার পরামর্শ হলো যে কোন একজনকে গুরু মানেন। যে কোন একটা বিষয়ে এক্সপার্ট হন। তাহলে সফলতা খুব দ্রুতই পেয়ে যাবেন। অনলাইনে সফল হতে হলে কারো কথায় কান দেয়া যাবে না। আপনি যে বিষয়ে শুরু করেছেন সেটার শেষ পর্যন্ত আগে দেখুন। গ্যারান্টি দিচ্ছি আপনি সফল হবেনই।
কোন কাজটা শিখবেন?
কিছু কাজের কথা বলছি, এর ভিতর যে কোন একটি বা দুটি বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন।
১। এস ই ও
২। গ্রাফিক্স ডিজাইন
৩। ওয়েব ডিজাইন
৪। ওয়েব ডেভলপমেন্ট
৫। এন্ড্রয়েড এপস্ ডেভলপমেন্ট
৬। ভিডিও ইডিটিং
৭। এনিমেশন
৮। ইউ টিউবিং
৯। ওয়ার্ডপ্রেস
১০। ভার্চূয়াল এসিসটেন্ট
কখন থেকে শেখা শুরু করবেন?
আমার পরামর্শ থাকবে। যে দিন থেকে আপনি বুঝতে শিখবেন তার পর থেকেই শেখা শুরু করে দিন। এখন শিখে এখনই কাজে নেমে পড়তে হবে এমন কোন কথা না। আস্তে আস্তে সময় নিয়ে শিখুন যাতে করে পুরোপুরি শেখা হয়। পড়াশুনার পাশাপাশি দিনে অন্ততপক্ষে ১৫ মিনিট সময় দিন। যারা বেকার বা অল্প বেতনে জব করেন তারাও শিখে নিতে পারেন। অনলাইনে কোন কিছু শেখাই বিফলে যায় না। পড়াশুনার পাশাপাশি যদি মাসে ১০ হাজার টাকাও আসে তাহলে অন্যতপক্ষে আপনাকে আপনার মা বাবার কাছে পকেট মানির জন্য হাত বাড়াতে হবে না।
টাকা আসবে কোথা থেকে কিংবা কে দেবে?
আপনি যে কোন মার্কেট প্লেসে কাজ করতে পারেন। আফ Upwork, Fiverr বর্তমানে বেশ পপুলার মার্কেট প্লেস। এখানে কাজ করে বায়ারকে সাবমিট করবেন। বিনিময়ে বায়ার আপনাকে পেমেন্ট করবে। মার্কেটপ্লেস একটা নির্দিষ্ট খরচ কেটে রেখে বাকি টাকা আপনাকে পাঠিয়ে দেবে।
তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে মার্কেট প্লেসে কাজ করার পক্ষে নয়। আমার কাছে পরনির্ভর মনে হয়। আমি নিজের কাজ নিজে করি। যেমন ধরুন, একটা ওয়েব সাইট করি, ভালো কনটেন্ট লিখি। নিজেই এস ই ও করি। মাসে যে প্রফিট আসে তার ১০০ ভাগই আমার থাকে। আমি এভাবে ইনকাম করি এর মানে এই নয় যে আপনিও আমার মত করে কাজ করবেন। আপনার যেভাবে ভালো লাগে সেভাবে করবেন। তবে আবারো বলছি , সব জান্তা সমশের আলী হওয়ার দরকার নেই। একাধিক গুরু মানার দরকার নেই।
সব শেষে বলব, ইউ টিউবই হলো বর্তমানে শেখার সব থেকে সহজ মাধ্যম। আর যদি কোন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিখতে চান তাহলে বলব, মাসে লক্ষ টাকা ইনকামের জন্য সেখানে যাবে না। সেখানে যাবেন কেবল মাত্র শেখার উদ্দেশ্যে। তারা হয়তো আপনাকে ইট সিমেন্ট দিয়ে কিভাবে বাড়ি করতে হয় সেটা শেখাবে, কিন্তু তাজমহল কি করে বানাতে হবে সেটা কিন্তু আপনাকেই আবিষ্কার করতে হবে।
আর একটা বিষয় মাথায় রাখবেন। অনলাইনে কাজ করতে গেলে অনেক বড় বড় পন্ডিতের সাথে পরিচয় হবে। সে পন্ডিতরা আপনাকে ১৫ দিনেই লাখ দশেক টাকার মালিক বানিয়ে দেয়ার তাবিজ দেবে। ওসব তাবিজ থেকে সব সময় সাবধান থাকবেন। একটা কথা মনে রাখবেন। অনলাইনে ইনকাম যদি এতটাই সহজ হতো তাহলে গরু ছাগল মহিশ সবাইকে দেখতেন ফ্রিল্যান্সার হতে। তবে সৎ ও সঠিক পথে থাকলে সারাজীবন হিউজ এমাউন্ট ইনকাম করতে পারবেন। আর যদি লোভে পড়ে কোটিপতি হতে যান তাহলে প্রথম দিকে বেশ লাভবান হলেও একটা সময়ে বড় ধরা খাবেন। দয়া করে লোভকে পরিহার করুন।
SSC পরীক্ষার্থীদের জন্য আমার বিশেষ আহবান থাকবে, পরীক্ষা শেষ করেই পড়াশুনার পাশাপাশি কোন একটা কাজ শিখে ফেলুন। যাতে করে এই কাজগুলো আপনার ক্যারিয়ার গড়তে সহায়ক হতে পারে। আপনাদের পরীক্ষা প্রায় শেষের দিকে আর কিছুদিনের ভিতরই SSC Result প্রকাশ হবে। সবার জন্য অগ্রিম শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের মতে আমি বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
Leave a Reply