বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য’ই চাকরিপ্রাপ্তি ও পদোন্নতির প্রধান বিবেচ্য বিষয়। তাই, চাকরিতে শুধু ভালো পারফরম্যান্স করলেই পদোন্নতি পাওয়া যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিও আস্থা থাকতে হবে।
আর চাকরিতে প্রবেশের সময় দক্ষতা বিবেচনার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আস্থাশীল কিনা তা যাচাই করেই চাকরি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে ‘পাবলিক সার্ভিস (সংশোধন) আইন-২০১৪ চূড়ান্ত করা হচ্ছে শিগগিরই।
অন্যদিকে, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন পদে পদোন্নতি পেতে কর্মজীবনের পরিকল্পনা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। যুগ্ম-সচিবসহ ঊর্ধ্বতন পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে এমন বিধান যোগ করা হবে সংশোধিত আইনে।
পাবলিক সার্ভিস আইনের (সংশোধন) খসড়া চূড়ান্ত করতে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির গত ১৮ সেপ্টেম্বরের সভায় এসব বিষয় সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী কমিটিকে জানিয়েছেন, দ্রুত সংশোধিত আইনের খসড়াটি আগামী সচিব কমিটিতে চূড়ান্ত করে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন নিয়ে সংসদে পাঠানো হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এইচ এন আশিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য না থাকলে তার তো চাকরিই হবে না। কিন্তু চাকরি নেওয়ার সময় কেউ বলবে না, তার আনুগত্য নেই। তাই, বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে চাকরিতে প্রবেশ এবং পদোন্নতির পদ্ধতি উন্নত করতেই সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট সংশোধন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মেধা ও যোগ্যতার পাশাপাশি এ বিষয়গুলো কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, তা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সাবেক উপদেষ্টা, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, সিভিল সার্ভিস শুধুই সিভিল সার্ভিস নয়, সিভিল সার্ভিস অর্থ প্রজাতন্ত্রের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাই, পদোন্নতির জন্য প্রথম কথাই থাকা উচিত- ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আস্থা’। কাজেই পদোন্নতি পাওয়ার ক্ষেত্রে এক নম্বর বিবেচ্য হওয়া উচিত ‘বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য’। এটির পরে আসা উচিত ‘দক্ষতা’।
যদিও কমিটিতে আলোচনা হয়, আনুগত্য না থাকলে চাকরিতে প্রবেশ করারই সুযোগ নেই। আর চাকরিতে প্রবেশের সময় কেউ বলবে না, তার আনুগত্য নেই। তাই, প্রবেশের সময় আনুগত্য নিশ্চিত করাটাই জরুরি। নিয়োগ প্রক্রিয়া উন্নত করা হলে এটা নিশ্চিত করা যাবে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে কর্মজীবনের পরিকল্পনাটাই এ ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশাসনের যুগ্ম-সচিব ও আরো ঊর্ধ্বতন পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কর্মজীবনের পরিকল্পনা বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি সুপারিশ করা হয়। আইনে বিভিন্ন দেশে কর্মজীবনের পরিকল্পনার বিষয়টি রয়েছে; যা ভারতেও রয়েছে। বিষয় আইনে রাখারও সুপারিশ করে সিদ্ধান্ত নেয় কমিটি।
বৈঠকে কমিটির সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীর বলেন, আনুগত্যের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নটি বিবেচনায় রেখে প্রার্থী নির্বাচন, উত্তীর্ণ প্রার্থীদের বিষয় নির্বাচন এবং বিষয়ের ভিত্তিতে সুপারিশ করা উচিত। তাহলে মেধা সম্পর্কে আপত্তি আর থাকবে না।
দ্বিতীয়ত, ক্যারিয়ার প্ল্যানিং সিভিল সার্ভিসে নেই। কর্মজীবনে ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ভালোভাবে দেখা দরকার। মেধা অনুযায়ী, বিশেষায়িত জ্ঞানের ভিত্তিতে যুগ্ম-সচিব ও পরবর্তী পর্যায়ে পদোন্নতির বিষয় পাবলিক সার্ভিস অ্যাক্টের বিধিতে আনা জরুরি।
কমিটির অন্য এক সদস্য বলেন, কর্মজীবনের পরিকল্পনায় একজন চাকরিজীবীর চেতনা ও আদর্শ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে এ বিষয়টি সংশোধিত আইনে নিয়ে আসা সঠিক সিদ্ধান্ত।
সুত্রঃ banglanews24
Leave a Reply