বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাগিং সংস্কৃতি ও আমাদের নোংরা মানসিকতা

বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিং নামক নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেনা স্বাপ্নিক নবীনেরা। বড় ক্যানভাসে এসেও সঙ্কীর্ণ আচরণ করা এসব ছাত্র নামধারী কিছু পশুর জন্য পরিবার ও রাষ্ট্রের টাকা অপচয় করে সনদ দিয়ে কি হবে? বরং জাতি আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে উচ্চশিক্ষা নেয়া এদের দ্বারা।

-পরিচিত হওয়ার কথা বলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র মিজানকে ডেকে নিয়ে কিছু সিনিয়র তার ওপর চালায় র‍্যাগিং এর নামে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। তাকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া, গুম ও হত্যা পর্যন্ত করে ফেলার হুমকি দেয় সিনিয়রেরা।

নির্যাতন সইতে না পেরে অচেতন হয়ে পরে মিজান, এরপরে এমনই ভীত হয়ে পড়ে যে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে সে। সে তার বন্ধুদের এবং বাবা চাচাকেও চিনতে পারেনা এবং সবার সাথে পাগলের মত আচরণ করা শুরু করে। এখন সে হাসপাতালে আছে।

-ঐ জাবিতেই জুনিয়রদের কারা কারা র‍্যাগ দিতে যাবে এ নিয়ে দ্বন্দ্ব বাঁধে ছাত্রলীগের দু-গ্রুপের মাঝে। যখন তাদের মাঝে আর সমঝোতা হলো না যে, কে কে যাবে জুনিয়রদের সাথে পরিচয় পর্বের নামে র‍্যাগিং চালাতে, তখন তাদের মাঝে মারামারি লেগে যায়। সংঘর্ষে কয়েকজন হাত-পা, মাথা ফেটে নেয়, আহত হয়!

হাউ সেলুকাস!

-রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র ফাহাদ। প্রথম দিনের ক্লাসে সে স্যুট পড়ে গেছে। হেয়ার কাট আধুনিক। একটু ফিটফাট ড্রেস দেখে কিছু সিনিয়র তাকে পরিচিত হওয়ার কথা বলে ডেকে নেয় এবং বেলা ১২ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত র‍্যাগ দেয়। জামা-কাপড় খুলে নেয়, গাঁয়ে হাত দেয়, গালাগালি করে এবং হুমকি দেয়। এরপরের দিনেও চলে র‍্যাগ। তারা তাকে বলে, এই ডিপার্টমেন্টে থেকে তুমি কিভাবে ভালো রেজাল্ট করো তা দেখব। এখানে থাকতে হলে আমাদের কথামতো চলতে হবে।

আতঙ্কে ফাহাদ ক্যাম্পাস ত্যাগ করে তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ চলে যায়। ছেলের এই অবস্থা দেখে ফাহাদের মা অসুস্থ হয়ে পড়ে।

এ তিনটি ঘটনা খুবই সাম্প্রতিক। কত কত যে এরকম ঘটনা ঘটে যাচ্ছে চোখের সামনে অথবা আমাদের আড়ালে তার ইয়ত্তা নেই। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা ছেলে কিংবা মেয়ে যখন প্রথম আসে তখন তার চোখে থাকে স্বপ্নের দ্যুতি, আশার আলো। সবার ছোট তারা, সবার থেকে ভালোবাসা স্নেহ পাবার আশায় থেকে। কিন্তু আমরা তাদের কি দেই? গলিত স্বপ্নের প্রেতাত্মায় পরিণত করি তাদের, তারা শিখে নেয় বড় ক্যানভাস হলেই মানুষ বড় হয়না, অমানুষও হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে মানুষ হতে এসে আমরা অমানুষী আচরণ করছি, শিখছি। লজ্জা!

মানুষের বসবাস করার মতো পরিবেশ চাই ঘরে ও বাইরে। মানবিক সমাজ চাই। ভালোবাসা চাই। র‍্যাগিংএর নামে নবীনের স্বপ্নের মৃত্যু রোধে এগিয়ে আসুক সবাই, এই কামনা।





About Galib afsary 1 Article
কবি, লেখক। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অধ্যয়নরত।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*