শিক্ষা এমন এক অপার শক্তি, যা সংস্কৃতি ও সভ্যতার মূল ভিত্তি। শিক্ষা ব্যক্তির অন্তর্নিহিত সত্তাকে জাগ্রত, বিকশিত, শানিত করে ব্যক্তিকে বাস্তববাদী, আত্মপ্রত্যয়ী এবং স্বাবলম্বী করে তোলে। প্রকৃত শিক্ষার লক্ষ্য হচ্ছে মানবিক গুণাবলির উৎকর্ষ সাধন, গণতান্ত্রিক চেতনা ও দেশাত্মবোধসম্পন্ন উন্নত জীবনযাপন উপযোগী সুনাগরিক তৈরি করা। শিক্ষার সঠিক বিস্তার এবং যথার্থ প্রয়োগের মাধ্যমে পৃথিবীর বহু জাতি সমৃদ্ধি ও সুখ্যাতির স্বর্ণ শিখরে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে। কাজেই একটি উন্নত ও মর্যাদাশীল জাতি গঠনে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। সেজন্যই বলা হয়ে থাকে ‘শিক্ষাই জাতির মেরদণ্ড’।
সুদীর্ঘ কালের ঔপনিবেশিক শাসনামলে শিক্ষার এই মাহাত্ম্য কৌশলে পাশ কাটিয়ে শোষক শ্রেণী কায়েমি স্বার্থে এ দেশে বৈষম্যমূলক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছিল। যে কারণে সৃষ্টির সূচনা থেকেই শোষণের নতুন ক্ষেত্র পাকিস্তানের প্রাচীর ভেঙে বাঙালিদের ইতিহাস-ঐতিহ্যমণ্ডিত একটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠায় নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন যিনি তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর সুদূরপ্রসারী চিন্তা-চেতনা, আপসহীন সংগ্রাম, সীমাহীন ত্যাগ এবং সুদৃঢ় নেতৃত্বে শংকর জাতির বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৯৫২, ’৬২, ’৬৬, ’৬৯ এবং ১৯৭০-এর উত্তাল সংগ্রামের সিঁড়ি বেয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৯৭১-এ মরণপণ মুক্তিযুদ্ধে লক্ষপ্রাণের বিনিময়ে স্বপ্নের আবাসভূমি, লাল-সবুজের বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। জাতির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির জনক হিসেবে সম্পূর্ণ শূন্য হাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠনের গুরুদায়িত্ব গ্রহণ অন্য কথায় দ্বিতীয় মুক্তি সংগ্রাম শুরু করেন। কারণ তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন জাতিকে প্রগতিমুখী, সমৃদ্ধিশালী করার প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে শিক্ষা। কিন্তু উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ঔপনিবেশিক শিক্ষা পদ্ধতি বহাল রেখে জাতি গঠন কখনো সম্ভব নয়। দীর্ঘদিনের পরিকল্পনানুযায়ী তিনি একটি শোষণমুক্ত সমাজ তথা সোনার বাংলা নির্মাণের লক্ষ্যে বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর যুগোপযোগী একটি কল্যাণমুখী শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের কার্যক্রম গ্রহণ করেন যার সার্থক রূপায়ণ প্রখ্যাত ড. কুদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন অর্থাৎ শিক্ষা জাতীয়করণ।
এ উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু শিক্ষার প্রাথমিক স্তর বা ভিত্তি হিসেবে ৩৭ হাজার প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ৬২ হাজার শিক্ষককে জাতীয়করণের ঘোষণা দেন যা ছিল তৎকালীন প্রেক্ষিতে অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও দুঃসাহসিক পদক্ষেপ। তিনি শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের লক্ষ্যে বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দের জন্য অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করে স্বস্তিবোধ করেননি, শিক্ষার বৈষম্য দূরীকরণ এবং ক্রমান্বয়ে একটি সুষম স্তরে উন্নীত করার প্রত্যয়ে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রেও কার্যক্রম গ্রহণ করেন। কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীল ও পরাজিত শক্তি কর্তৃক ১৯৭৫ সালে তার পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে এ মহতী প্রয়াস ধামাচাপা পড়ে। দীর্ঘপথ পরিক্রমায় ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এবং বর্তমান সরকার ২০০৮ সাল থেকে অদ্যাবধি ‘একটি আধুনিকতাশ্রয়ী গণমুখী শিক্ষাব্যবস্থা’ বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বাংলা, ইংরেজি ও আরবি মাধ্যমে প্রাথমিক, মাধমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা ইত্যাদি স্তরের শিক্ষার প্রচলন রয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা অধিকাংশই সরকারি ব্যবস্থায় পরিচালিত হলেও একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষা বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও কিন্ডারগার্টেনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় ৯৭% শিক্ষা এখনো বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে। যদিও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান সরকারি এমপিওভুক্ত হওয়ায় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বৃহদাংশের বেতন ও নির্ধারিত ভাতা সরকার থেকে বহন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর বাংলাদেশে শিক্ষাখাতে ব্যাপক উন্নয়নের লেখচিত্র নিম্নে তুলে ধরা হলো:
এক. একটি সার্বজনীন গণমুখী শিক্ষানীতি প্রণয়ন। শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক, সাংবাদিক, আলেম-ওলামা, পীর মাশায়েখ, সরকারি ও বিরোধীদলীয় সব রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে ২০১০ সালে একটি সার্বজনীন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।
দুই. শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৮ সালে গঠিত সরকারের শাসনামলে ২০০৯ সালে প্রদত্ত পে-স্কেলে বেসরকারি শিক্ষকরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় শিক্ষকদের বেতন ৬৩%-৬৫% বৃদ্ধি পায়।
তিন. ওই সময়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায় বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ২০% মহার্ঘ্য ভাতাও প্রদান করা হয়েছিল।
চার. বেসরকারি শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া ১০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা এবং মেডিকেল ভাতা ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা উন্নীত করা হয় নতুন বেতন স্কেলে বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হয়।
পাঁচ. ১৯৯১-১৯৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকার কর্তৃক বন্ধ করে দেয়া বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারীদের এককালীন অর্থপ্রাপ্তির কেন্দ্রস্থল ‘কল্যাণ ট্রাস্ট’ পুনরায় চালুকরণপূর্বক সংশ্লিষ্টদের যথাযথ সেবা দান। ১৯৯০ সালে কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের সর্বমোট কল্যাণ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে ২৭৯ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০০৯ সাল থেকে গত মেয়াদে প্রদান করেছে ৭২০ কোটি টাকা।
ছয়. বর্তমান সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য প্রশংসিত সাফল্য হচ্ছে বছরের প্রথম দিনে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের বই সরবরাহ করা। যা তৃতীয় বিশ্বে একটি অনন্য উদাহরণ। ২০১৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাক প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৫২ হাজার ৩৭৪ হাজার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৩টি বই প্রদান এবং ২০১৬ শিক্ষাবর্ষে নতুন বছরের প্রথম দিন প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ৪৫০টি রঙিন বই বিতরণ করা হয়েছে যা বিশ্বে এক নজিরবিহীন রেকর্ড।
সাত. ১৭ বছরের পুরনো পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন করে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যুগোপযোগী নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী পাঠ্যসূচি প্রণয়ন।
আট. উপজাতীয়দের জন্য নিজস্ব ভাষায় এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ধরনের বই প্রণয়ন।
নয়. এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা এগিয়ে এনে সুনির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করতঃ সেশন জটের অবসান। প্রতিবছর ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা এবং ১ এপ্রিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ। পরীক্ষা গ্রহণ শেষে ৬০ দিনের মধ্যে ফল ঘোষণা।
দশ. প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের প্রায় ৭৮ লাখ এবং মাধ্যমিক স্তরে প্রায় ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান। অধিকন্তু শিক্ষার্থীদের মায়েদের জন্য ভাতা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অতি সম্প্রতি সংযুক্ত ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ও উপবৃত্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এগারো. শিক্ষার্থীদের মায়েদের ভাতা প্রদানের উদ্যোগ টিকিউআই, এসইএসডিপি প্রকাশের মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদান। বারো. ঢাকায় টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। তেরো. তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা, কাজে প্রয়োগ ও ব্যবহারে প্রভূত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ড়হষরহব ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন, পরীক্ষার ফরমপূরণ, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি, এসএমএসের মাধ্যমে ফল প্রকাশ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সেবা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি। চৌদ্দ. বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডে অনলাইন ব্যবস্থা চালু করা। ক্ষেত্রবিশেষে শিক্ষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিংবা অসুস্থদের ক্ষেত্রে হাসপাতালে গিয়েও কল্যাণ ট্রাস্টের চেক তুলে দেয়া। কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডের ফান্ড সংকট নিরসন কল্পে চলতি বছর ৮৫০ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে। কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার পর বিগত ২৭ বছরে এটাই প্রথম সরকারি অনুদান। পনেরো. উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করা। ষোলো. সরকারি কলেজের ৭০০ জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে সিলেকশন গ্রেড (তৃতীয় গ্রেড) প্রদান। সতেরো. ঢাকা শহরে সরকারি উদ্যোগে নতুন ১১টি স্কুল ও ৬টি কলেজ প্রতিষ্ঠা এবং ২৮৫টি বেসরকারি কলেজকে জাতীয়করণের উদ্যোগ গ্রহণ।
আঠারো. বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়নসহ দুটি প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার জন্য নিয়মিত অর্থবরাদ্দ প্রদান। বাছাই করা ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৬টি গবেষণা উপ-প্রকল্পে ১৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান। এ প্রকল্পের অধীন ইতিপূর্বেও ৯৩টি গবেষণা উপ-প্রকল্পে ১৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। উনিশ. উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ছাত্রীদের পাশাপাশি ছাত্রদেরও উপবৃত্তির প্রদান। বিশ. প্রধানমন্ত্রী কর্র্তৃক এককালীন ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দপূর্বক ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তির জন্য ট্রাস্ট ফান্ড গঠন। শিক্ষাব্যবস্থার আরো উন্নয়ন, আধুনিক বিশ্বমানে উন্নীত করার লক্ষ্যে সুপারিশগুলো: শিক্ষার মান রাতারাতি বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। বর্তমান সরকারের শাসনামলে শিক্ষার মান পূর্বের তুলনায় অনেক বেড়েছে এ কথা বলার কোন অপেক্ষা রাখে না। তবে চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন তথা শিক্ষাকে বিশ্বমানে পৌঁছানোর জন্য আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন মনে করি। (১) অবিলম্বে শিক্ষা আইন বাস্তবায়ন করা।
(২) শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ আরো বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা।
(৩) শিক্ষাঙ্গনের অবকাঠামোর আরো উন্নয়ন এবং শিক্ষা উপকরণের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা।
(৪) শিক্ষকদের আর্থিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা। সরকার ঘোষিত শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল বাস্তবায়ন করা। শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ এ দেশের শিক্ষকদের প্রাণের দাবি। এক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমস্ত আয় সরকারি কোষাগারে জমা নিয়ে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ করা যেতে পারে।
(৫) শিক্ষা প্রশাসন, বিভিন্ন অধিদফতর, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে সৎ, যোগ্য এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কর্মকর্তাদের পদায়ন করা।
(৬) প্রশ্নপত্র ফাঁস, কোচিংবাণিজ্য, বইবাণিজ্য এবং নৈতিকতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
(৭) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে বাণিজ্যকরণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
(৮) মাদরাসা শিক্ষাকে আরো আধুনিকীকরণ এবং যুগোপযোগী করার পাশাপাশি আরবি শিক্ষাকে আরো জোর দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক যে বিশাল কর্মবাজার রয়েছে তা করায়ত্ত করার সুযোগ গ্রহণ করা।
(৯) সাধারণ শিক্ষার্থীরা যাতে কারিগরি শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয় সে জন্য কারিগরি শিক্ষাকে আরো গুরুত্ব দিয়ে এর কোর্স কারিকুলামকে আধুনিকীকরণ এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের অবকাঠামো উন্নয়ন করা। (১০) শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যাগুলো দূরীকরণের মাধ্যমে বিশেষ করে আইসিটি, অর্নাস ও মাস্টার্সের শিক্ষক, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসাসহ এফিলিয়েশনভুক্ত সব স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার নন এমপিও শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা। বেসরকারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল পূর্বের ন্যায় সরকারি স্কেলের প্রধান শিক্ষকদের অনুরূপ একই কোডে উন্নীত, মাদরাসার সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল স্কুলের সহকারী শিক্ষকদের ন্যায় একই স্কেলে উন্নীত, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমস্যা দূরীকরণের ব্যবস্থাগ্রহণ করা। (১১) সরকারি-বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনবৈষম্য দূরীকরণে সরকার, বিত্তবান ব্যক্তি ও বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা।
(১২) বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষাকে বিজ্ঞান প্রযুক্তিভিত্তিক করার বর্তমান সরকারের উদ্যোগকে আরো সম্প্রসারিত করতে করা।
(১৩) মাধ্যমিক শিক্ষার প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের দীর্ঘসূত্রতার অবসানকল্পে পৃথক মাধ্যমিক অধিদফতর প্রতিষ্ঠা করা।
(১৪) কলেজশিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনুপাত প্রথা বাতিল ও অধ্যাপকের পদ সৃৃষ্টিসহ যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি প্রদান।
(১৫) প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাংলাদেশে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ দেশের আলেম সমাজের ৯০ বছরের দাবি বাস্তবায়ন হয়েছে। কওমি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সরকারি অধিভুক্ত করে আধুনিকায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষক সমাজের জীবন ও জীবিকার উন্নয়নে অত্যন্ত যত্নবান ও উদার। তদসত্ত্বেও শিক্ষাব্যবস্থায় সরকারি-বেসরকারি, নানামুখী ও মানের বৈষম্য এখনো বিদ্যমান। এ বৈষম্য ডিজিটাল বাংলাদেশের উন্নয়ন ধারাকে বাধাগ্রস্ত করছে মনে করি। এ বাধা অপসারণের সর্বোত্তম পন্থা শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ। এর বিকল্প নেই।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ ও সদস্য সচিব, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট, শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
Leave a Reply