ওসমানীয সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠতা এর্তুগ্রুল…

এরতুগরুল গাজীর উত্থান ২য় পর্বঃ
হিজরী সপ্তম শতাব্দীর একেবারে প্রারম্ভে, যখন চেঙ্গিষী মোঙ্গলেরা খুরাসান আক্রমণ করে তখন গায তুর্কদের ঐ সমস্ত লোক খুরাসান ছেড়ে তুর্কমেনিস্তানের মার্ভ অঞ্চলে চলে যায় এবং সেখানে বসবাস করতে থাকে। ঐ গোত্রের নাম ছিল ‘কায়ি’। এদের নেতার নাম ছিল সুলায়মান খান। এরা ছিল খাঁটি মুসলমান। সুলায়মান খানের যোগ্যতা লক্ষ্য করে সেখানে অবস্থানকারী লোকজন তার চারপাশে একত্রিত হতে থাকে, যারা এতদিন দিকভ্রান্তের মত এদিক-সেদিক ঘোরাফেরা করছিল। এভাবে তাদের দল ভারী হতে থাকে। এটা ছিল ঐ যুগ, যখন চেঙ্গিষ খানের দস্যুতার কারণে বিভিন্ন দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা বিপর্যয়ের সম্মুখীণ হয়ে পড়েছিল এবং প্রত্যেক ব্যক্তিকে জান-মালের নিরাপত্তার জন্য নিজ বাহুবলের উপর নির্ভর করতে হচ্ছিল। তখন অত্যাসন্ন বিপদাপদের মুকাবিলা করার জন্য সর্বক্ষণ প্রস্তুত থাকা প্রত্যেক ব্যক্তি ও জনগোষ্ঠির জন্য ছিল অপরিহার্য। সুলায়মান খান সুষ্ঠুভাবে নিজের শক্তি বৃদ্ধি করেন এবং নিজ জনগোষ্ঠি যাতে বিনা প্রয়োজনে কোনরুপ ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। খাওয়ারিজম সাম্রাজ্যের পতন সুলায়মান খানের সামনে সুন্দর সুযোগ এনে দেয়। তিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল সংখ্যক যোদ্ধা ও প্রচুর পরিমাণ যুদ্ধ-সামগ্রী সংগ্রহ করতে সক্ষম হন।
সময়ের সাথে এইসব গোত্রগুলো নিজেদের ঘিরে স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তুলতে শুরু করে। এই রাষ্ট্রগুলো ‘বেইলিক’ নামে পরিচিত ছিল এবং গাজী সমাজ প্রতিষ্ঠা করার ধারণাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল। প্রতিটি রাষ্ট্র একেকজন নেতাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতো যিনি সেই বেইলিক এর গাজীদের পরিচালনা করতেন এবং যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতেন। ১৩ শতকের শেষের দিকে গোটা আনাতোলিয়া জুড়ে অসংখ্য বেইলিক এর অস্তিত্ব ছিল।

ইতিহাসের মোড় ঘুরানো বিস্ময়কর একটি অভিযানঃ
চেঙ্গিষ খান তার মৃত্যুর তিন বছর আগে ৬২১ হিজরীতে (১২২৪ খ্রী) একটি বিরাট বাহিনী সেলজুক সাম্রাজ্য আক্রমণের জন্য প্রেরণ করেন, যার রাজধানী ছিল কুনিয়া। সে সময় কুনিয়ার শাসনক্ষমতায় ছিলেন আলাউদ্দীন কায়কুবাদ সেলজুকী। কালের পরিক্রমায় এক সময়ের পরাক্রমশালী সেলজুক সাম্রাজ্য অনেক দূর্বল হয়ে পড়েছিল। যাইহোক, সুলায়মান খানের কাছে এই সংবাদ পৌছাল যে, মোঙ্গলরা আলাউদ্দীন কায়কুবাদের উপর হামলা চালিয়েছে। তিনি শুনে অত্যন্ত ব্যথিত হলেন। কেননা কুনিয়ার সুলতান ছিলেন মুসলমান, আর মোঙ্গলরা ছিল কাফির। মোঙ্গলরা মুসলিম বিশ্বকে ইতিমধ্যে ধ্বংস করে ফেলেছিল। সুলায়মান খান আলাউদ্দিন কায়কুবাদকে সাহায্য প্রদান এবং এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করাকে শাহাদাত লাভের শ্রেষ্ঠ সুযোগ মনে করে নিজ গোত্রকে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার আদেশ দেন। সুলায়মান খানের এই বাহিনীর সঠিক সংখ্যা জানা যায় নি, তবে সুলায়মান খান এই বাহিনীর যে অংশকে অগ্রবর্তী বাহিনী হিসেবে নিজ পুত্র এরতুগরুলের নেতৃত্বে রওয়ানা করেছিলেন তার সংখ্যা ছিল ৪৪৪ জন। দুনিয়ার বড় বড় এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যেমন প্রায় ক্ষেত্রে আকস্মিকভাবে ঘটে থাকে, তেমনি সুলায়মান খানের এই ঘটনাও আকস্মিকভাবে ঘটেছিল। এদিকে এরতুগরুলের মুজাহিদ বাহিনী যখন অগ্রসর হচ্ছিল ঠিক তখন মোঙ্গল বাহিনী আলাউদ্দিন কায়কুবাদের বাহিনীর সম্মুখে গিয়ে পৌছেছিল। সালজুক বাহিনী ও মোঙ্গলদের মধ্যে তুমুল লড়াই শুরু হয়ে যায়। মোঙ্গল বাহিনী ছিল দুরন্ত ও দুর্ধর্ষ। তারা অতি শীঘ্রই সেলজুক বাহিনীকে কোনঠাসা করে ফেলে। সেলজুক বাহিনী যখন পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে ঠিক তখন এরতুগরুলের বাহিনী সেখানে উপস্থিত হয়। তিনি দু’টি বাহিনী যুদ্ধরত অবস্থায় দেখতে পান। এরতুগরুল জানতেন না, কে কোন পক্ষ। তবে তিনি ততক্ষণাৎ মনস্থির করেন যে, তিনি দূর্বল পক্ষকেই সমর্থন করবেন এবং সাথে সাথে তার ৪৪৪ জন সঙ্গী নিয়ে দূর্বল পক্ষের দিক থেকে সবল পক্ষের উপর সিংহ বিক্রমে ঝাপিয়ে পড়েন। এত দৃঢ়তা ও দুঃসাহসিকতার সাথে এই আকস্মিক হামলা চালানো হয় যে, মোঙ্গলরা শেষ পর্যন্ত টিকতে না পেরে তাদের অসংখ্য লাশ ফেলে রেখে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করে। আলাউদ্দীন সালজুকী কিছুক্ষণ আগেই যেখানে পরাজয় ও ধ্বংসকে অবধারিত মনে করেছিলেন সেখানে অকস্মাৎ এই অকল্পনীয় সাহায্য এবং বিজয় প্রত্যক্ষ করে তিনি যারপর নাই উল্লসিত হন এবং এরতুগরুলকে রহমতের ফেরেশতারুপে মনে করে তাকে জড়িয়ে ধরেন।





About Mohammad Khalilur Qaderi 14 Articles
মুহাম্মদ খলিলুর কাদেরী গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন, সে এখন জতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর অন্তর্ভূক্ত ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ, গাজীপুর। হতে অনার্স (বাংলা বিভাগ) এ অধ্যায়নরত আছেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*