কেমন আছেন বন্ধুরা? আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি আপনাদের দোয়াই।আজ আপনাদের জন্যে ভিন্ন একটি পোস্ট শেয়ার করতে আসলাম। আর তা হল ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার পরিপূর্ণ টিউটোরিয়াল এবং এর উপর একটি সুন্দর গাইডলাইন তার সাথে আমার মূল্যবান পরামর্শ।
সুপ্রিয় ভাইবোনেরা,
অনেককেই কথা দিয়েছি – ব্যাংক জব প্রিপারেশান নিয়ে লিখব। আমি নিজেও ব্যাংকার ছিলাম। আইবিতে পড়ার সময় ব্যাংকে চাকরি করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালকের এপোয়েন্টমেন্ট কার্ড পেয়েছিলাম বিসিএসে জয়েন করার পর। আবার কয়েকটা ব্যাংক রিক্রুটমেন্ট পরীক্ষার আয়োজনের সাথেও ছিলাম। সেজন্য ব্যাংকিং ক্যারিয়ারের মানুষদের জন্য শ্রদ্ধা ও ভালবাসা সব সময়ই ফিল করি। তাই কথা রাখতে আর ভালোবাসার টানেই লিখতে বসলাম। তবু একটু বলে নেই – ব্যাংক জব প্রিপারেশান নিয়ে অনেক দিন পর এনালাইসিস করতে বসেছি। কিছু ভুল-চুক হইলে ধরাইয়া দিয়েন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের জব পরীক্ষায় তিন ধাপ – প্রিলি, রিটেন, ভাইভা। নতুন কোন পরিবর্তন না করলে, এটাই থাকার কথা। এখন প্রিলির কথা বলছি। আমাকে যারা চিনেন, তাঁরা এতোদিনে জানেন – আমি কোন কিছুরই শর্টকাট দেই না। আমার কাছে শর্টকাট মানে ভাওতাবাজি – মিষ্টি কথায় মনোরঞ্জন – ওতে আসলে কাজ হয় না। আমি যখন যা বলি, সব কিছু ডিটেইলস বলতে চেষ্টা করি – যাতে আপনার কাজে আসে। এখনও সেভাবেই বলছি। অনেক কিছু। আপনি ভয় পাবেন না প্লিস – ধাপে ধাপে শিখবেন। এক/দুইমাস টানা সময় দিলেই সব শেষ হয়ে যাবে।
** সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাঃ যেহেতু রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোর নিয়োগ এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে হবে, তাই প্রিপারেশান বাংলাদেশ ব্যাংকের আগের প্রশ্ন অনুযায়ী নিন। আগের প্রশ্নের সলিউশান সহ যে কোন গাইড। আমি নাম বলতে চাই না। যে কোনটাতেই হবে। যেটাই কিনেন শুধু দেখে নিবেন, যখন কিনছেন ঠিক তাঁর আগের বাংলাদেশ ব্যাংকের পরীক্ষার প্রশ্ন এবং ডিটেইলভাবে সমাধান আছে কিনা। মানে ম্যাথের মাল্টিপল চয়েসগুলো শুধু টিক দেয়া, নাকি ডিটেইলস করে দেয়া আছে। ডিটেইলসভাবে করে দেয়া আছে এমন কোন গাইড কিনবেন। সেই গাইড থেকে আগের ৫ বছরের বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কটা নিয়োগের প্রশ্ন সলভ করুন। সলভ মানে যেটা এসেছে শুধু সেটা শিখা না, একই রকম আর একটা আসলে পারতে হবে। সেভাবে শিখুন। আগের প্রশ্নের যেখানে সমস্যা হচ্ছে, সেটার উত্তর কোথায় আছে, কি ভাবে পড়লে পারবেন – সেটা বের করে শিখতে হবে। এটা করতে পারাটাই প্রিপারেশান। এভাবেই প্রিপারেশান নিন। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশ্ন সলভ হয়ে গেলে অন্যান্য ব্যাংকে যেসব এসেছে সেগুলো দেখুন।
*****ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার পরিপূর্ণ টিউটোরিয়াল *****
এবার বিষয়গুলো নিয়ে বলছিঃ
ম্যাথ: ব্যাংক জবের সবচেয়ে ভাইটাল পার্ট ম্যাথ। অন্য যে কোন চাকরির পরীক্ষার সাথে ব্যাংক জব পরীক্ষার মূল পার্থক্য ম্যাথ। বযাংকে ম্যাথ একটু কঠিন আসে। তাই ব্যাংক জবের পরীক্ষার আগের সময়টা মূলত ম্যাথে দিন।
# ব্যাংক জবে ম্যাথের জন্য সময় ভীষণ ভাইটাল। তাড়াতাড়ি করার অভ্যাস করতে হবে। মুখে মুখে হিসেব করে অল্প জায়গায় শেষ এক/দুই লাইন লিখে ম্যাথ করার অভ্যাস করুন। এটা চাইলেই সম্ভব। আর ব্যাংকের প্রিপারেশানের জন্য এটা করতেই হবে।
# আগেই বলেছি আগের বছরের প্রশ্নের মত ম্যাথ করুন। বাজারের যে কোন একটা চাকরীর ম্যাথ গাইড সলভ করুন – সেটা এমবিএ এডমিশান গাইডও হতে পারে। এখান থেকে জ্যামিতির কিছু ম্যাথ অবশ্যই দেখবেন।
# ক্লাস VIII এর ম্যাথ বই থেকে সুদকষা, শতকরা, লাভ-ক্ষতি আগে দেখুন। চক্রবৃদ্ধি সুদের ম্যাথ গাইড থেকে অবশ্যই দেখে যাবেন। প্রশ্নে ইংরেজীতে দিলে পারতে হবে। এই টপিক থেকেই ব্যাংকে সব চেয়ে বেশি ম্যাথ আসে।
# ক্লাশ ix এর ম্যাথ করুন।
# ব্যাংক জবের ম্যাথ সাধারণত বিসিএস প্রিলির চেয়ে কঠিন এবং সময় থাকে কম। তাই যারা একসাথে বিসিএস আর ব্যাংক জবের ট্রাই করছেন, তাঁরা ব্যাংকের পরীক্ষার আগে ম্যাথ ভালো করে করবেন।
# বাংলাদেশ ব্যাংকের জব পরীক্ষায় ম্যাথ ইংরেজীতে প্রশ্ন করে। এখন অন্য ব্যাংকের জন্য কি করবে – সেটা এি মুহূর্তে বলা যাবে না। তাই ম্যাথের কিছু ইংরেজি প্রশ্ন প্রাকটিস করে নিন।
এবার একটা অপশনাল টপিকঃ
Aptitude Test/Mental Ability/Analytical Ability:
কিছু কিছু ব্যাংক পরীক্ষায় উপরের জিনিসগুলো আসে। উপরের যে নামেই বলা হোক না কেন, জিনিসগুলো কাছাকাছি। এগুলোর জন্য অবশ্যই আগের প্রশ্ন দেখুন। গাইডেই সলিউশন দেখুন। না বুঝলে কারো হেলপ নিন। ইন্টারনেটে এগুলোর অনেক ম্যাটেরিয়াল আছে। সার্চ দিলেই পাবেন। সময় পেলে দেখতে পারেন। আইবিএ এডমিশান টেস্টে analytical ability আসে, যাদের সময় আছে – তাঁরা দেখতে পারেন। GMAT এ Aptitude Test আছে। যারা বিসিএস প্রিপারেশান নিচ্ছেন, তাঁদের মানসিক দক্ষতার প্রস্তুতিতে এগুলো হয়ে যাবে। তবে ব্যাংকে Aptitude Test নামে গ্রাফ, ডাটা সাফিসিয়েন্সি এসব দেয়,। যেগুলো বিসিএসের সিলেবাসে নেই। যাই হোক আগের প্রশ্নেই সব আছে।
*****ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার পরিপূর্ণ টিউটোরিয়াল *****
ইংরেজিঃ
গ্রামারঃ # গ্রামারের জন্য যে কোন ইন্টার মিডিয়েট লেভেলের গ্রামার বইয়েই চলবে। আগে যে বই পড়েছেন সেটিই পড়ুন। আগে যারা P. C. Das, বা Wren & Martin English Grammar এরকম গ্রামার পড়েছেন, তাঁরা অবশ্যই এগুলোই পড়বেন। আর আগে যারা এগুলো পড়েননি, অন্য যেটা পড়েছেন, সেটাই থাকুক। সেটা Chowdhury and Hossain এর Advance Learners এর মত হলেও চলবে। এই গ্রামার বই আপনাকে বেসিক নিয়ম শিখাবে, তাতেই গ্রামারের ৭০% কাজ হয়ে যায়। কিন্তু এইসব গ্রামার বইতে চাকরির প্রশ্নের মত করে নিয়মগুলো অনেক সময়ই দেয়া থাকে না। তাই গ্রামারের নিয়মের জন্য বাজারের যে কোন জব গ্রামার বই (saifur’s, mentors, oracle যা আছে বাজারে- যে কোনটা) দেখুন। “common mistakes in English ” বইটাও ছোটর মধ্যে ভালোই।
# এখন গ্রামারের জন্য আপনাকে প্রশ্ন বুঝতে হবে। কোন চ্যাপ্টারের কোন নিয়ম থেকে এসেছে সেটা বুঝতে হবে। এজন্য গত ৫ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক জব পরীক্ষায় যেসব চ্যাপ্টার থেকে গ্রামার প্রশ্ন এসেছে, সেগুলোর নিয়ম একদম ভালোভাবে বই থেকে বের করুন। সেই নিয়মটা সর্ট করে খাতায় লিখে ফেলতে পারেন। ওই নিয়মের যে কোনটাই যেন পারেন, সেজন্য বই থেকে প্রাকটিস করুন।
# ব্যাংকে idiom & phrases আসে। এটা দেখে যাবেন।
# প্রতিটা নিয়মের কিছু এক্সেপশান থাকে, চাকরির পরীক্ষায় এক্সেপশান বেশি আসে।
# আগের প্রশ্নের পাশে নিয়মটা লিখেও ফেলতে পারেন। তাতে পরের বার প্রাকটিস করার সময় নিয়ম ভুলে গেলেও সময় কম লাগবে।
*****ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার পরিপূর্ণ টিউটোরিয়াল *****
ভোকাবিউলারিঃ
# ব্যাংক জব পরীক্ষায় ভোকাবিউলারি থেকে অনেকগুলো প্রশ্ন আসে। বাজারের যে কোন ভোকাবিউলারি বইতেই চলবে। অবশ্যই আগের ব্যাংক জব পরীক্ষার প্রশ্ন প্রথমে সলভ করবেন। # আর যারা সময় নিয়ে ভোকাবিউলারি পড়তে চান, তাঁরা Word Smart (I &II) পড়তে পারেন।
তাহলে, আমার পরামর্শ হল – কয়েকবার শুনতে হবে আয়ত্ত্ব হতে হলে।ডাউনলোড করে গানের মত শুনলেও কাজে দিতে পারে।ভিডিওর শব্দগুলোকে খাতায় লিখে ফেলতে পারেন।এরপর যেখানে যে ওয়ার্ড পড়বেন সেটা যদি ওই ৩৯ টা গ্রুপের কোনটার সাথে মিলে যায়, সেখানে লিখে ফেলবেন।না মিললে নতুন গ্রুপ করে লিখে ফেলবেন।এভাবে আপনার নিজের একটা ভোকাবিউলারি খাতা হয়ে যাবে।২-৩ সপ্তাহেই দেখবে অনেক অনেক কনফিডেন্ট হয়ে গেছেন।পরে ১৫দিন পর পর পুরা ওয়ার্ড খাতাটা রিভাইস করবেন।ভোকাবিউলারির কোন সাজেসশন হয় না, এক্ষেত্রে কনফিডেন্ট হতে পারাটাই আসল।
# শুধু ভোকাবিউলারি পড়লেই হবে না, আগের ব্যাংক জব পরীক্ষার যেভাবে প্রশ্ন এসেছিল, সেগুলোর মত প্রাকটিস করতে হবে। আগের প্রশ্নে ভোকাবিউলারির ধরন দেখুন – Synonym, Antonym, Analogy, expression in one word (এক কথায় প্রকাশ) ইত্যাদি। যে চারটা/পাঁচটা অপশন আছে, সবগুলো ভোকাবিউলারির অর্থ গাইডের পাশেই লিখে ফেলতে পারেন।
Passage / Comprehension:
ব্যাংক জবের প্রিলিতে অনেক সময় একটা ছোট প্যাসেজ থেকে কয়েকটা প্রশ্ন আসে। এ নিয়ে বলার কিছু নেই। ইংরেজী পড়ে বুঝতে হবে। আগের প্রশ্ন দেখে প্রাকটিস করে নিন।
*****ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার পরিপূর্ণ টিউটোরিয়াল *****
বাংলাঃ
ব্যাকরণ : # ৯ম শ্রেণীর বোর্ড ব্যাকরণ বই। ব্যাংক জবে ব্যাকরণ থেকে বেশি প্রশ্ন হয়।
# গত কয়েক বছরের প্রশ্নে যেসব চ্যাপ্টার থেকে ব্যাকরণ বেশি এসেছে – সমার্থক শব্দ, বিপরীতার্থক শব্দ, শব্দের উৎপত্তিগত শ্রেণিবিভাগ (বিশেষত কোনটা কোন দেশের শব্দ), এক কথায় প্রকাশ, বাগধারা, প্রবাদ, পারিভাষিক শব্দ, বাক্যের প্রকারভেদ (সরল, জটিল, যৌগিক), পদ (বিশেষ্য, বিশেষণের প্রকারভেদ), বানান ইত্যাদি। আগে এগুলো দেখুন। তারপর যতটুকু সম্ভব।
সাহিত্য: ব্যাংকে বাংলা সাহিত্য থেকে প্রশ্ন কম আসে – তাই বিসিএসের বাংলা সাহিত্যের যে কোন ছোট বই যেমন বিসিএস প্রিলি ডাইজেস্ট বা জব সলিউশান মানে আপনার কাছে যেটা আছে, সেটা থেকে বাংলা সাহিত্য দেখলেই হবে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ডিটেইল দেখুন। ছদ্মনাম, উপাধি, পত্রিকা এগুলো দেখুন। অবশ্যই আগের প্রশ্ন দেখে যাবেন। যারা বিসিএস আর ব্যাংক জব একসাথে প্রিপারেশন নিচ্ছেন, তাঁদের জন্য ব্যাংক জবের বাংলা সাহিত্য অনেক সহজ।
*****ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার পরিপূর্ণ টিউটোরিয়াল *****
সাধারণ জ্ঞানঃ
# সাধারণ জ্ঞানের জন্য আপনি যেটা পড়েছেন সেটাতেই হবে। নতুন কিছু কেনার দরকার নেই। যদি এমন কেউ থাকেন, যিনি কোনদিন কোন সাধারণ জ্ঞান বই কিনেননি, তিনি ব্যাংক জবের সাধারণ জ্ঞানের জন্য বিসিএস প্রিলি ডাইজেস্ট বা যে কোন জব সলিউশান দেখতে পারেন। যারা বিসিএসের সাথে প্রিপারেশান নিচ্ছেন, তাদের জন্য বিসিএস গাইডই যথেষ্ট।
# ব্যাংক জবের সাধারণ জ্ঞানে কারেন্ট ইস্যু বেশি আসে। তাই যখন পরীক্ষা তাঁর আগের তিন মাসের কারেন্ট এফেয়ার্স দেখে ফেলতে পারেন।
# ব্যাংক জবে – মুদ্রা, খেলাধুলা, রেমিটেন্স-রিজার্ভ-জিডিপি-মাথাপিছু আয় এসবের সাম্প্রতিক তথ্য, বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম, অর্থনৈতিক সংগঠন বা জোট ইত্যাদি থেকে বেশি প্রশ্ন হয়।
# বাংলাদেশ ব্যাংকসহ কিছু ব্যাংকে সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন ইংরেজিতে হয়। তাই আগের প্রশ্ন ভালোভাবে দেখুন, যেন বাইচান্স ইংরেজিতে প্রশ্ন হলে সমস্যা না হয়।
*****ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার পরিপূর্ণ টিউটোরিয়াল *****
কম্পিউটার/আইটিঃ
# অবশ্যই আগের সকল ব্যাংক (প্রাইভেট ব্যাংক সহ) প্রশ্নে আইটি থেকে যা এসেছে পড়ে ফেলুন।
# বাজারের যে কোন গাইড, সেটা Easy Computer বা এরকম কোনটা হতে পারে।
অনেক কিছু মনে হচ্ছে? হ্যাঁ, জিনিস কম না। কিন্তু আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি – ২ মাস টানা সময় দিলে সব হয়ে যায়। শুধু লেগে থাকলেই হবে। সমস্যা বের করে ধাপে ধাপে আগান – সফল হবেনই।
পরিশেষে আবার বলি – ব্যাংকের পরীক্ষা আসলে ম্যাথ আর ইংরেজির টেস্ট। এগুলোতে সময় দিন। সাফল্য আসবেই।
আপনার সুন্দর জীবনের আগাম শুভেচ্ছায় –
…………………………………………
- তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট এবং আমার ওয়েবসাইট
Leave a Reply