আস্সালামুআলাইকুম।
কেমন আছেন সবাই? আশাকরি ভালো।
আজ আপনাদের সাথে আমাদের বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কিছু কথা শেয়ার করব। আশাকরি পুরোটা পড়বেন।
আপনারা দেখেছেন যে বিগত বছরগুলোতে পাশের হার অন্য যেকোন বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এর কারণ বলা হয় সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতি। আরো বলা হয়ে থাকে সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে একজন ছাত্রের প্রতিভার বিকাশ ঘটে এবং একমাত্র সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতিই পারে একজন ছাত্রকে আদর্শ ছাত্র হিসেবে গড়ে তুলতে। কি? আমি কি ঠিক বলছি না? যাকগে। কাজের কথায় আসি। প্রথমেই সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থার কিছু সুবিধাসমূহ বর্ণনা করা যাক:
১। কোনো শিক্ষার্থীই প্রশ্ন কমন পাবেনা (ফাঁস ব্যতীত)। তাই বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীরা বইয়ের দিকে ঝুকবে। এখন কোথায় যাবে বাবা? পড়তেই হবে।
২। বইয়ের যেকোনো জায়গা থেকে প্রশ্ন হবে। তাই শুধু গাছে চড়ে থাকলেই হবেনা। শিকড় ও লতা-পাতা সবকিছুর দিকেই খেয়াল রাখতে হবে। আর ১০ টা প্রশ্ন পড়ে ৮ টা কমন পাবার উপায় নেই।
৩। এম.সি.কিউ আছে। তার আবার বিভিন্ন ভাগও আছে। তাই শুধু বই পড়ো। বইই পড়ো।
সবকিছু ভালভাবে পড়ার পর পরীক্ষাতে তথাকথিত গোল্ডেন প্লাস পাও। আর তারপরেই ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষায় দলে দলে ফেইল করো।
গোল্ডেন প্লাস পাবার পর মিষ্টি বিলিয়েছেন, ক্রেডিট নিয়েছেন,“ছেলে আমার গোল্ডেন পাইছে রে!” । আর এখন আপনার সন্তানের গোল-ডিম-মার্কা রেজাল্ট দেখে ছেলেকে গালিগালাজ করছেন,“কি পড়িস? চান্স পাস না? ফেল করিস!”
সেই ক্ষারক আর ক্ষারের সংজ্ঞার মতোই বলতে হয়, “সকল গোল্ডেনই ছাত্র, সকল ছাত্র গোল্ডেন নয়”। কারণটা কি? সৃজনশীল তো ছিলো। তারপরেও এ ধরনের গোলযোগ কেনো ঘটলো?
এবার আসুন। একটু সমালোচক হই। সৃজনশীলতার কিছু গঠনমূলক সমালোচনা করি।
১। “কোনো শিক্ষার্থীই কমন পাবেনা” এই বাণীর পরও প্রচুর শিক্ষার্থী প্রশ্নপত্র পায় ফাঁসের মাধ্যমে। কিন্তু তা পরীক্ষার আগের রাতে না। পরীক্ষার আগের আগের রাতে। শুধু কি তাই? উত্তরপত্র সহকারে। আর পরীক্ষার দুইদিন আগে যদি প্রশ্ন পাওয়াই যায় তাহলে সেই বিষয়ে গোল-ডেন কেন, চারকোনা-ডেন পেলেও কেউ অবাক হবেনা।
আর বলবেন না। একটা কম্পিউটার থাকার পরও কেনো আমি একজন পি.এস.সি দেয়া মামাতো ভাইকে প্রশ্নপত্র দিতে পারিনি এজন্য আমাকে অনেক বকাঝকা শুনতে হয়েছে।
তাই, সৃজনশীল করুন আর সিজনশীল করুন প্রশ্নফাঁস ঠেকানো না গেলে যাহা লাউ তাহা কদুই থেকে যাবে। শুনছি এবার থেকে নাকি ফাঁস রোধে ৩২ সেট প্রশ্ন করা হবে। শেষে লটারী করে প্রশ্ন দেয়া হবে। আশা করি সেই লটারীটা যেন বিয়ে বাড়িতে বরের গেট ধরার লটারীর মতো না হয়।
২। “বইয়ের যেকোন স্থান থেকেই প্রশ্ন হতে পারে। তাই বাদ দেয়ার সুযোগ নেই”। অধ্যায়ের প্রাণ বলে কিছু থাকলো না। আমার যতদূর মনে পড়ে যে আগে আমাদের যেকোন অধ্যায়ের যেকোনো নির্দিষ্ট একটা বিষয়ের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে বলা হতো আর সেটা দেয়ার দরকারও ছিলো। আর সেটা না পারলে স্যার মারধরও করতো। এখন আর তা নেই। সবকিছুর উপর গুরুত্ব দিতে বলা হচ্ছে। আপনাকে ১০ টা প্রশ্ন দেয়া হলো আর সবগুলোতেই সমান গুরুত্ব দিতে বলা হলো। আপনি যদি আর দশজনের মতো স্বাভাবিক মানুষ হন তাহলে আপনার ওই ১০ টা প্রশ্নের মধ্যে ৩ টা ভালো করে হবে। ৪ টা মুটামুটি পারবেন আর ৩ পারবেন কোনোমতে। কিন্তু আপনাকে তো সবগুলোর উপরই গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। তাই যে অধ্যায়ের যেটা প্রাণ, তার উপর গুরুত্ব বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই পরবে না। আর তাই যদি সেই কোনোমতে পারা বিষয়গুলো থেকে প্রশ্ন হয় তাহলে আপনিও নির্ঘাত বলবেন যে,“স্যার হিব্রু ভাষায় প্রশ্ন করেছে”।
এভাবে দেখা যেত যে একটা বিষয় একটা ছাত্রের ভালো লাগতো। আর এই ভাললাগা থেকেই সে ছাত্র ওই জিনিসটার উপর গবেষণা শুরু করে দিল। দেখা গেল নতুন কোনো তত্ত্বও বের করতে পারতো। কিন্তু এখন গবেষণা করবে কখন? এরকম কাজ করার সময়ই তো পাচ্ছে না। তাই ছাত্রদেরকে বই যতটা না পড়াতে হবে তার চেয়ে বেশি ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জন করা শিখাতে হবে।
ও, ভালকথা। ছাত্রদের মারার তো আর রেওয়াজ নেই। উল্টো স্যারের বিরুদ্ধে মামলা করবে অভিভাবক। বেত উঠে দেয়া হয়েছে। শিশুদের উপর যাতে চাপ না পড়ে এইজন্য। ছাত্র যাতে গোল্লায় না যায়। খুবভালো কথা। এখন সেইযুগের গোল্লায় যাওয়া ছেলেদের, আর এ যুগের গোল্লায় যাওয়া ছেলেদের কথা চিন্তা করুন। আমার মনে হয় এ যুগেরগুলোর পাল্লাই ভারী হবে। খুব একটা উন্নতি হয়েছে কি? বরং উত্তরার ১৩ নং সেক্টরে পড়াশোনার চাপে দুই সহোদর সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করেছে এমনও টিভিতে দেখেছি।
৩। আমি যদি বলি সৃজনশীলের একমাত্র সফলতা এম.সি.কিউ তাহলে মনে হয় ভুল বলা হবেনা। তবে এক্ষেত্রেও কথা আছে। আপনারা মাঝে মধ্যেই দেখবেন যে বহুপদী সমাপ্তীসূচক MCQ প্রশ্নের উত্তরে ছাত্ররা প্রায়ই এলোমেলো করে রেখে আসে। এর কারন হলো সব শিক্ষার্থীরা একভাবে চিন্তা করতে পারে না। একেকজনের চিন্তাধারা একেকরকম। এটা না থাকলে পৃথিবীর সব মানুষ একইরকম হতো।
৪। আপনারা সবাই জানেন যে পৃথিবীতে ভাল-ছাত্রের সংখ্যা কম আর মিডিয়াম আর খারাপ-ছাত্রের সংখ্যাই বেশি। সে হিসেবে ভালোরা ভালোই করে যাবে। মিডিয়াম বা খারাপ কোয়ালিটির এমনকি অনেক ভালো স্টুডেন্টদের কারো সৃজনশীলের উত্তরপত্র একটু লক্ষ করবেন দেখবেন যে ৫ খাতা, ৫ রকম। আর যে পদ্ধতি সংখ্যাগরিষ্ঠদের মেধা যাচাই করতে পারে না, সে পদ্ধতি কখনোই ফলপ্রসূ হতে পারে না।
৫। আফসোস! মহতী সৃজনশীল পদ্ধতি পড়ানোর মতো শিক্ষক আজ আমাদের দেশে খুবই কম আছে। আর মফস্বল ও পল্লী এলাকাতে তো নেই বললেই চলে। যখন সৃজনশীল প্রথম এলো তখন স্যারের কাছে তো বুঝেছিলাম এইভাবে যে,
১ নং প্রশ্নের উত্তর এক বাক্যে শেষ করতে হবে। আর এখানে স্যারদের ১ এর ভিতর হাফ দেবার সুযোগ নেই।
২ নং প্রশ্নের উত্তর হবে দুই/তিন লাইন যাতে বেশি বড় না হয়।
৩ নং এর ক্ষেত্রে নাকি ১ ও ২ নং এর কিছু অংশ আর আমার কিছু অংশ লিখতে হবে।
৪ নং প্রশ্ন নাকি বেশ বড় এবং বিশ্লেষণধর্মী লিখতে হবে ১,২,৩ ও ৪ এর সমন্বয়ে।
এই ছিল আমার প্রাথমিক সৃজনশীল সম্পর্কিত জ্ঞান। সত্য কথা এই যে ছাত্রদের উপর সৃজনশীল পদ্ধতি প্রয়োগ করার আগে এটা শিক্ষকদের উপর যথাযথভাবে প্রয়োগ করা উচিত ছিলো।
৬। গণিতের ক্ষেত্রে বেঁধেছে বেশি গোলযোগ। আমার চাচাতো ভাইকে একবার ২০ টাইপের মোট ৯৩ টার মতো অংক করিয়েছি। আর টাইপগুলো ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষা দিয়ে সে আমাকে বলে যে, ভাইয়া, একটা নিয়মও কমন পড়েনি।
স্বাভাবিক। এটা তো আগেই বলে দেয়া আছে। তাই বলে গণিত করতে যে বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিত সেগুলো থেকে যদি প্রশ্ন না হয় তাহলে নিঃসন্দেহে একটা ছাত্র আগ্রহ হারাবে। ওর মুখে আরো শুনেছি। যারা স্কুলের শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়েছে তাদের নাকি সব কমন পড়েছে।
এখন শুনি যে, ভাই আমার গণিত পরীক্ষায় জ্যামিতি ছাড়া নাকি কিছুই পড়ে যায়না। কারণ, কমন পড়ে না যে।
৭। যত বিষয় আছে তারমধ্যে বাংলায় সৃজনশীলটাই যথার্থ হয়েছে। কারণ, সাহিত্য-কবিতায় বৈচিত্রতা আছে। আর এগুলো চিন্তা করতে পারে যে কেউই। আর একমাত্র সাহিত্যক্ষেত্রেই মানুষের চিন্তাধারা বিকশিত হয়।
বাংলা ব্যতীত কোন বিষয়েই চিন্তার বৈচিত্রতা পাবেননা।
যেমন রসায়নের কথা চিন্তা করুন। ‘ক্লোরোফর্মকে রঙীন বোতলে রাখা হয় কেন’? এর উত্তর একটাই এবং নির্দিষ্ট যে এটা আলোর উপস্থিতে বিষাক্ত ফসজিন গ্যাস তৈরি করতে পারে। সুতরাং এটা নিয়ে সৃজনশীলতার কিছু নেই। কিন্তু বাংলাতে যদি এরকম একটা প্রশ্ন করা যায় যে, ‘দেশকে দুর্নীতিমুক্ত রাখা উচিত কেন?’ তাহলে দেখুন কত কিছু এসে যায়।
তাই সৃজনশীল এমন বিষয়েই হওয়া উচিত যেগুলোতে বৈচিত্রতা আছে।
৮। গণিত খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর গণিতের একটা নির্দিষ্ট সমাধান থাকে। আগে আমাদের পুরো অংক করে শেষে যদি উত্তর লিখতে ভুল হতো তাহলে পুরো মার্কই স্যার কেটে নিতেন। তাই আমাদের খুব সতর্কতার সাথে অংক করতে হতো। অথচ এখন নাকি গণিতের শেষ নাম্বার প্রশ্নটা না পারলেও তাকে নাকি মার্ক দেয়া হয় এই ভেবে যে,
সে করার চেষ্টা করেছে তো।
আরে ভাই, তাহলে প্রশ্ন করার কি দরকার? এমনিতেই পাশ করে দেয়া হোক। সে পরীক্ষা দিতে এসেছে তো এই ভেবে।
গনিতের ফল একটাই হয়। সেই ফলটা না মিলাতে পারলেও যদি তাকে নাম্বার দেয়া হয় তাহলে গণিত আর বাংলার মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না।
*** এরকম ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পাশ করে বহু শিক্ষার্থীই গোল্ডেন প্লাস পেয়ে পাশ করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে দেখা গেছে যে এভাবে প্লাস-গোল্ডেন পাওয়া শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই ন্যূনতম পাশমার্ক তুলতে পারছে না। বেশভালো কথা।
তবে সমস্যা হচ্ছে কাদের জানেন? যারা দুর্ভাগ্যবশত দুই এক সাবজেক্টে প্লাস পায়নি। BUET, RUET, KUET, CUET এসবে সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়। গড়ে ৫-৬ হাজার। অথচ, আপনার গোল্ডেন পায় প্রায় ২০,০০০ এর মতো। তাই দেখা যায় গোল্ডেন ছাড়া এসব পরীক্ষায় কেউ আবেদন করতে পারলেও বাছাই প্রক্রিয়া শেষে পরীক্ষা দিতে পারে না। শুধু গোল্ডেনরাই পরীক্ষা দেয়। অথচ দেখেছেন তো যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এরকম হাজার গোল্ডেন পাওয়া শিক্ষার্থীরা ফেইল করছে। তাই দেখা যায় ওই ৫-৬ হাজার স্টুডেন্ডদের মধ্যে একটু ভাল করলেই অনেক খারাপ শিক্ষার্থীরও চান্স পাবার সম্ভাবনা থাকছে যারা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ন্যূনতম পাশমার্ক তুলতে পারতো না। তাই নিঃসন্দেহে মেধার সঠিক যাচাই হচ্ছেনা। তবে এবার BUET এ ৬০০ মার্কের পুরোটাই লিখিত নেবার বিষয়টি অনেক ভালো লেগেছে।
আমার কথা শুনে অনেকেই হয়তো ভাবছেন যে এই পাগল তাহলে কোন ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা চায়। শুনুন। আমি একজন খুব সাধারন মানুষ। আমার মতো মানুষের কাছ থেকে সরকার শিক্ষা বিষয়ে জ্ঞান নেবে একথা ভাবা বাতুলতা ছাড়া আর কিছুই না। তারা অনেক বড় বড় চিন্তার অধিকারী। আমার মতে কোনো দেশকে নকল করে নয় শিক্ষা ব্যবস্থাটা নিচের মতো করে গড়ে তোলা উচিত।
প্রাথমিক শিক্ষাঃ
এখানে নির্দিষ্ট কোনো বিষয় থাকবেনা। এখানে থাকবে ছাত্রছাত্রীদের বর্ণমালা শেখানো, প্রচলিত সহজ শব্দ আর বাক্য, প্রাথমিক প্রয়োজনীয় গণনা, আদব-কায়দা, আচার-আচরণ, নিয়ম-কানুন, নিজের কাজ, গৃহস্থালীর টুকিটাকি কাজ, সামাজিক সচেতনতা, আইন-কানুন মেনে চলা, ধর্মানুভূতি এগুলো। কারণ, দেশটা সুন্দর করতে হলে দেশের মানুষকে আগে সুন্দর করে, সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে। আর সেটা ছোট বয়সে যদি শেখানো যায় এর ফল বহুদিন পর্যন্ত পাওয়া যাবে।
আর এক্ষেত্রে একটা প্রবণতা সবার পরিবর্তন হবে যে, আমার বাবা অমুক বলে আমি হোটেলে পার্টটাইম চাকুরী করতে পারবনা, আমি এক-বাপের-এক-বেটা বলে পার্টটাইম রান্না করে তা বিক্রি করতে পারবনা, পার্টটাইম দোকান চালাতে পারব না, শপিং মলে চাকুরী করতে পারবনা। সবাই দেখেই শিখবে।
এক্ষেত্রে শিক্ষকরাও হবে কর্মঠ, বন্ধুসুলভ আর হেল্পফুল। প্রাইভেট পড়া বা পড়ানোর কোনো প্রশ্নই থাকবেনা। আর এরকম হলে শিক্ষকদের কাজে ফাঁকি দেবারও কোনো চিন্তা থাকবে না। স্কুল হবে একটা বাড়ির মতো। সন্তানকে জোর করে স্কুলে পাঠাতে হবে না। দেখবেন সন্তানকে জোর করে বাড়ি পাঠাতে হচ্ছে। আর এই ধাপে বাচ্চাদের ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জনের দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
মাধ্যমিক শিক্ষাঃ
শিক্ষার এই পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ের সাথে পরিচিত করানো হবে। সব বিষয়ে পড়ার সুবিধাও বর্ণনা করা হবে দেখানো হবে। আর এর উপর ভিত্তি করেই যাচাই করা হবে যে একজন শিক্ষার্থী কোন বিষয়ে পড়াশোনার আগ্রহ। কারন, অষ্টম শ্রেণীতেও ইংরেজিতে Narration আছে, আবার একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতেও আছে। যে Narration পারেনা, সে অষ্টম শ্রেণিতেও পারেনা, একাদশ শ্রেণীতেও পারেনা। এরকম ছাত্র প্রচুর দেখতে পাওয়া যায়। এ ধাপের শেষে একজন শিক্ষার্থীর ইচ্ছানুযায়ী বা আগ্রহ অনুযায়ী বিষয় বাছাই করে তাকে র্পূণাঙ্গভাবে সেই বিষয়ে পড়ার জন্য তৈরি করা হবে। আর সেটা অবশ্যই পরীক্ষার মাধ্যমে। এখানেও প্রতিটা বিষয়ের ব্যবহারিক প্রয়োগ আরো বিস্তারিতভাবে দেখানো হবে।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাঃ
এখানে একজন শিক্ষার্থীর মনোনীত বিষয়টি বিস্তারিতভাবে পড়া শুরু হবে। এখান থেকেই একজন শিক্ষার্থী বুঝতে পারবে যে তার জীবনে কি করতে হবে। যে শিক্ষক হতে চায় হতে পারবে, যে ডাক্তার হতে চায় হতে পারবে, ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইলেও হতে পারবে, আবার উন্নত কৃষক হতে চাইলেও হতে পারবে, গায়ক হতে চাইলেও হতে পারবে। শিক্ষা আর যোগ্যতার যথাযথ প্রয়োগ হবে।
আমি তো একটা কাঠামো দিলাম মাত্র। কিন্তু সরকার এ ধরনের একটা শিক্ষাব্যবস্থা যদি বাছাই করে সেটাকে আরো উন্নত রুপ দেয়, তাহলে অবশ্যই দেশের চেহারা নিমেষেই পাল্টানো সম্ভব। আর সরকার চাইলেই সেটা করতে পারে। এরকম একটা শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমার ছোট চিন্তা নিয়ে যতটুকু পারলাম ধারণা দিলাম। আপনারা চিন্তা করলে হয়তো এর চেয়ে আরো ভালো কিছু বেরিয়ে আসবে।
আমার মতো অস্তিত্ত্ব সংকটে পরতে হবে না। অস্তিত্ত্ব সংকট কেনো বললাম তা একটু বুঝিয়ে বলছি। আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থাটা এমন যে, একজন যে বিষয়ে দক্ষ বা যে বিষয়ে সে পড়তে কৌতূহল প্রকাশ করে, সে বিষয়ে সে ভর্তি হতে পারেনা। এজন্য দেখা যায় যে প্রকৃত যোগ্য যে সে তার যোগ্যস্থান পায়না। প্রভিভার মৃত্যু ঘটে।
আমার কথাটা চিন্তা করুন। SSC, HSC দুটোটেই GPA-5.00. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক ইউনিটে ১ম বার পরীক্ষা দিয়ে স্থান করলাম ৭৬২৬। কিন্তু ২য় বার আউট অফ লিস্ট। পরিশ্রম কিন্তু এবার দ্বিগুণ করেছিলাম। লাভ হয়নি। গতবার JnU-9853, HSTU-1345, JU-230(CSE)। কিন্তু এবার JnU. JU কোনোটাতেই হয়নি। দেখি আরো কয়েকটা পরীক্ষা আছে।
আগে থেকেই ইচ্ছা ছিল CSE (Computer Science & Engineering)-তে পড়ার। প্রথমবার JU তে CSE তে ভাল মেধাক্রম দেখে ভাবলাম ২য় বার হয়েই যাবে ইনশাল্লাহ্। কিন্তু এবার সিরিয়ালেও থাকছি না। বুঝতে পারছিনা কি করব। এত চিন্তা করতে হতো না যদি অনেক বড়লোকের ছেলে হতাম। হলে প্রথমবারেই কোনো Private University তে ভর্তি হয়ে যেতাম। কিন্তু ভালো কোনো Private University-তে পড়ানোর মতো অতো ভাল অবস্থা আমাদের না। মধ্যবিত্ত হলে যা হয়। আর চান্স না পেয়ে পেয়ে মস্তিষ্কে সম্ভবত ‘এ্যাডমেশিয়া’ ধরেছে।
‘এ্যাডমেশিয়া’ বুঝলেন তো? স্মৃতি হারালে হয় ‘এ্যামনেশিয়া’ আর এ্যাডমিশন হারালে হয় ‘এ্যাডমেশিয়া’। এ এক জটিল রোগ। আপনি হয়তো ৬ তলায় দাঁড়িয়ে আছেন তখন আপনার মনে হবে যে পেছন থেকে কেউ একজন আপনাকে বলছে যে,‘‘আরে, লাফ দে, হাওয়াতে শরীরটা মেলে দে। দেখবি, কয়েক সেকেন্ড পর তোকে আর এসব ঝামেলা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।’’ এরকম। আমার বেশ কয়েকবার এমন হয়েছে। মামা ৬ তলায় থাকেন তো। খুব ভয় লাগে জানেন তো।
জানেন? আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাটাকে আমার পছন্দ না। বলা হয় এ পদ্ধতিতে নাকি আসল প্রতিভা যাচাই করা সম্ভব। এখন আমি বলি।
আমার কন্ঠের এই গানটি শুনুন: https://db.tt/g5fcTiaf
গানটির প্রতিটা লাইনের মিউজিক আমি আমার নিজ হাতে তৈরি করেছি। প্রিয় একটা গান তো। মাইক্রোফোনে নিজ গলায় রেকর্ড করে পাবলিশও করেছি। যে কেউ আমার FL Studio এর কাজ দেখলে অবাক হয়ে যায়। এরকম অনেকগুলো গানই গেয়ে তৈরি করেছি।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কখনো বলেনি যে,“মেহেদী, আয় আমাদের MUSIC এ ভর্তি হবি তুই।”
আমি পিসিতে অফলাইনে ওয়েব ডিজাইনের কাজ করি (জুমলা,ওয়ার্ডপ্রেস)। প্রোগ্রামিং (HTML, JAVASCRIPT, PHP, VISUAL BASIC) চর্চা করি, শিখি, ব্লগ লিখি।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কখনো বলেনি যে,“মেহেদী, আয় আমাদের CSE এ ভর্তি হবি তুই।”
JU তে ভাইভা দিতে গিয়ে এমন একজন এলিয়েনের সাথে পরিচয় হলো যে আপনাদেরকে না বলে থাকতে পারছি না। বেচারা CSE তে চান্স পেয়ে ভর্তি হয়েছে। ঐদিন শুনতে এসেছে যে ওরিয়েন্টেশন ক্লাস কবে হবে। অথচ এটি ওয়েবসাইটে খুব সুন্দরভাবে উল্লেখ করা ছিল। বললাম,‘ওয়েবসাইটে তো আপলোড করে দেয়া আছে, দেখোনি?’
উত্তরে বলে, ‘আপলোড যেন কি?’
এত খারাপ লাগলো কি আর বলব! এই হলো শিক্ষাব্যবস্থা। যে শুধুমাত্র পরীক্ষার ৮০ নম্বরের জন্য CSE তে ভর্তি হতে পেরেছে আর যাদের ইচ্ছা এটিতে পড়ার, যাদের দরকার এটিতে পড়ার, যাদের যোগ্যতা আছে এটিতে পড়ার, যাদের আগে থেকেই এটিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে যা সহায়ক হবে, তাদের চান্স হয়না। কারণ, পরীক্ষার ফলাফলে তারা একটু পিছে।
জানিনা আমার CSE তে পড়ার ইচ্ছাপূরণ হবে কিনা। হতে পারে এটাই আমার প্রথম ও শেষ পোস্ট। আর হয়তো এভাবে আর পোস্ট করতে পারব না। কারণ, CSE তে পড়তে না পারলে অনলাইনে এভাবে যে সময় ব্যয় করব সেটাই নষ্ট হবে। আপনাদের আরো অনেক কিছু দেবার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু হয়তো আর দিতে পারব না।
চান্স না পেলে ভাবছি একটা ‘ডেইরী ফার্ম’ দেবো। কারণ, বর্তমানে পড়াশোনা করে কিছু করার মতো ধৈর্য্য, সুযোগ, ভাগ্য কোনোটাই হবে না। আর গরুর ব্যবসাটা ভালভাবে করতে পারাটা অনেক লাভজনক। যদি আল্লাহ্ চান তাহলে লাভের টাকা দিয়ে আমাদের এই জায়গাটাতে একটা বাড়ি আর একটা মার্কেট করার ইচ্ছা আছে। আর শেষ ইচ্ছাটা হলো হজ্জ্ব পালন করা। যদি মেধা আমার থেকে থাকে তাহলে তার মৃত্যু হলে এদেশে কিছুই করার নেই। আমরা মানুষকে মূ্ল্যায়ন করতে পারি না।
আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। যেন সামনের পরীক্ষাগুলো ভালভাবে দিতে পারি। পড়াশোনা খারাপ করি না। তারপরও যে কেন এই দশা। কি আর বলব যখন মাত্র ৮০-১০০ টা প্রশ্নে একজন শিক্ষার্থীর জীবন গড়ে ওঠে। জীবনের আরো তো বহু প্রশ্ন পড়ে থাকে। তাইনা?
যাইহোক, এতক্ষণ কষ্ট করে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন।
আল্লাহ্ হাফেজ।
ফেইসবুকে আমিঃ Sandpiper Mehedee
Leave a Reply