নানা বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ত্রয়োদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা। শুক্রবার (১৩ মে) সকাল ১০টায় সারাদেশে একযোগে পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষার্থীদের আগেভাগে না জানিয়েই কেন্দ্র পরিবর্তনের ফলে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন হাজার হাজার শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার্থী। নিবন্ধন অফিস থেকে মোবাইলে পাঠানো মেসেজে বলা হয়েছিল এক কেন্দ্রের নাম কিন্তু প্রবেশপত্র ডাউনলোড করে প্রিন্ট দিয়ে দেখা যায় অন্য কেন্দ্র। নিবন্ধন অফিসের ওয়েবসাইটে কেন্দ্র পরিবর্তনের কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। ফলে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন পরীক্ষার্থীরা।
স্কুল ও কলেজের প্রশ্ন সমাধান ২০১৬
শুক্রবার সকালে ঢাকার কয়েকটি কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে জানতে পারেন তাদের কেন্দ্র পরিবর্তন হয়েছে। শেষ সময়ে ছোটাছুটি আর কান্নার রোল পড়ে যায়। এত কম সময়ে তারা কীভাবে নতুন কেন্দ্রে যাবেন তা ভেবে অনেকেই চোখের পানি ফেলেছেন।
প্রবেশপত্রে লেখা কেন্দ্র অনুযায়ী সকালে ঢাকার আগারগাঁও শেরে বাংলা বালক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে উপস্থিত হন কয়েকশ পরীক্ষার্থী কিন্তু ওখানে গিয়ে জানতে পারেন তাদের কেন্দ্র টিকাটুলি বালিকা মহাবিদ্যলয়। নতুন কেন্দ্রে পৌঁছাতে সাড়ে দশটা বেজে যায় অনেকের।
কেন্দ্র সমস্য্যার বিষয়টি গত রাত থেকে কেন্দ্র সমস্যার বিষয়টি জানাজানি হলেও সমস্যার সমাধানে কর্তৃপক্ষের কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। ক্ষুব্ধ হয়েছেন পরীক্ষার্থীরা।
ঢাকার কয়েকটি পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
পটুয়াখালী শহরের একটি ফটোস্ট্যাটের দোকান থেকে শিক্ষক নিবন্ধনের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার সকালে শহরের সদর রোডস্থ পলাশ কম্পিউটার অ্যান্ড ফটোস্ট্যাট থেকে তাদের আটক করা হয়। তবে আটককৃতদের নাম পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুল ইসলাম জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে তিনজনকে টহল পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে এসেছে। উদ্ধার হওয়ায় প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মূল প্রশ্নপত্র মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১২ মে) সন্ধ্যা থেকে কয়েকজন নিবন্ধন পরীক্ষার্থী ইমেইল ও টেলিফোনে দৈনিক শিক্ষাকে জানান, তাদের প্রবেশপত্রে লেখা রয়েছে এক কেন্দ্রের নাম কিন্তু মোবাইলে মেসেজ এসেছে অপর এক কেন্দ্রর নাম। দুই কেন্দ্রের দূরত্ব ঢের বেশি। এমতাবস্থায় তার দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কোনটাকে প্র্রধান্য দেবেন?
এদিকে পরীক্ষার নতুন তারিখ হওয়ার পর পর কয়েকটি পরীক্ষা কেন্দ্রও বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দৈনিকশিক্ষাকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন নিবন্ধন অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা।
ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থী সারোয়ার হোসেন দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ১২ মে রাত নয়টায় যে প্রবেশপত্র প্রিন্ট করেছেন তাতে লেখা রয়েছে পরীক্ষার তারিখ ৬ মে এবং কেন্দ্র ঢাকার শেরে বাংলা নগর বালক বিদ্যালয় কিন্তু দুপুরে মোবাইলে আসা মেসেজে তার কেন্দ্রের নাম লেখা রয়েছে টিকাটুলির শেরে বাংলা স্কুল। তিনি কী করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না্। আবার প্রবেশপত্রে নিবন্ধন অফিসের ওয়েবসাইটের তথ্যের সর্বশেষ আপডেট ৫ মে, ২০১৬!
সারোয়ারের মতো শত শত পরীক্ষার্থী গভীর রাত অব্দি বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করেও কোনো ফল পাননি।
এদিকে দৈনিক শিক্ষার আর্কাইভে থাকা তথ্যে দেখা যায়, ১২ তম নিবন্ধন পরীক্ষার আগে প্রায় ৭ হাজার প্রবেশপত্র না পাওয়ায় পরীক্ষাই দিতে পারেননি। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের আগস্টে ওই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেন। নিবন্ধন অফিসের সামনেও বিক্ষোভ করেন।
গত ৬ ও ৭ মে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে ইউপি নিবাচনের কারণে পরীক্ষার তারিখ পেছানো হয়।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমে প্রিলিমিনারি তারপর লিখিত ও সবশেষে মৌখিক পরীক্ষা হবে। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণদের আটটি বিভাগীয় শহরে লিখিত পরীক্ষায় বসতে হবে। স্কুল পর্যায়ের পরীক্ষা ১২ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে ১২টা এবং ১৩ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত কলেজের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এই পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতেই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সহকারি শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। তবে, অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আগের পদ্ধতিতেই হবে।
২০০৫ খ্রিস্টাব্দে সরকার নিবন্ধন পদ্ধতি চালু করেন। আইন কার্যকর হয় একই বছরের ২০ মার্চ থেকে। বিধান অনুযায়ী নিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক ছিল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের আবেদন করতে। নিয়োগ পরীক্ষা ও নিয়োগের যাবতীয় ক্ষমতা ম্যানেজিং কমিটির হাতে ছিল। নিবন্ধন সনদ না হলে কেউ নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার আবেদনই করতে পারতেন না। মোট ১২টি পরীক্ষায় প্রায় ৬ লাখ নিবন্ধন সনদ পেয়েছেন।
তব, গত বছর আইনের বিধান পাল্টেছে সরকার। নতুন বিধান অনুযায়ী নিবন্ধন কর্তৃপক্ষকেই প্রার্থী বাছাই করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-কারিগরি প্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষক নিয়োগের কোনো ক্ষমতা পরিচালনা কমিটির হাতে থাকলো না। ১৩ তম পরীক্ষা থেকে নতুন বিধান কার্যকর।
বর্তমান পদ্ধতি অনেকটা বাংলাদেশ পাবলিক সাভিস কমিশনের পরীক্ষা নেয়া ও প্রার্থী বাছাই করে বিভিন্ন ক্যাডার, নন ক্যাডারের শূন্য পদে পদায়ন করার জন্য স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়ার মতো।
Leave a Reply