জেনে নিন বিসিএস এর কোন ক্যাডার সবচেয়ে লাভজনক

BCS

এমন একটা সময় ছিল যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়েও এদেশের তরুণরা সিএসপি (বিসিএস এর পূর্ব নাম) অফিসার হতে চাইত । গত ৪০-৫০ বছরে সময় অনেক বদলেছে, দেশে এখন স্মার্ট কর্পোরেট কালচারও শুরু হয়েছে, ঔপেনিবেশিক ধ্যান ধারণা, বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন, পর্যাপ্ত গবেষণার সুযোগের অভাব ইত্যাদি নানা কারণ (কিংবা অজুহাতে) এখন এদেশের সর্বাধিক মেধাবীরা বৈদেশ গমনকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আর যারা দেশের মায়া ত্যাগ করতে পারে না, তাদের অনেকেই আবার থিতু না হবার আশঙ্কা থেকে নব্য কর্পোরেট কালচারে নিজেদের সংমিশ্রন ঘটাতে পারে না, কিংবা আরও নানা জানা-অজানা কারণে দু পয়সার সরকারি চাকুরি করার বাসনা লালন করে , তারা অতি স্বাভাবিকভাবেই বিসিএস এর প্রতি আকৃষ্ট হয়। কাজেই যারা সব বিচার বিবেচনা করে বিসিএস এর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন,বিদেশে নাগরিকত্ব নেয়ার বাসনা বাদ দিয়েছেন,গেটস/জবস/জুকারবারগ সাহেবদের মত হওয়ার কিংবা রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন বাদ দিয়েছেন শুধুমাত্র তারাই নিচের লেখা গুলো পড়বেন , বাকিরা না পড়লেই আন্তরিকভাবে খুশি হব।

বিসিএস দিতে এসে প্রথমেই অধিকাংশ লোক যে ভুলটা করে তা হচ্ছে ক্যাডারগুলো সম্বন্ধে একটি নূন্যতম ধারণা না নেয়া। ব্যক্তিগতভাবে আমি একটা জিনিস বিশ্বাস করি তা হচ্ছে, ” একজন লোক যদি তার কাজকে ভালবাসে আর শ্রদ্ধা করে এবং সে অনুযায়ী সৎভাবে কাজ সম্পাদন করে তবে তার সাফল্য নিশ্চিত, তার কাজ যাই হোক না কেন ।” সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দিয়ে কেউ চাকুরি পেলে তিনি হবেন সিভিল সারভেন্ট, আভিধানিক অর্থ “চাকর” হলেও একজন স্মার্ট বিবেকবান লোক জনগনের চাকর হতে পেরে নিজেকে সর্বদা গর্বিতই মনে করবেন। সিভিল সারভেন্টগণের কাজ হচ্ছে রাজনীতিবিদদের দ্বারা নির্ধারণকৃত নীতিকে জনগনের কল্যাণে প্রয়োগ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন। উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতির অভাবের কারণে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে তাই সিভিল সারভেন্টগণ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দ্বারা অধিক প্রভাবিত। বিগত একবছর যাবত আমি অনেক ক্যাডারে চাকুরীরত কর্মকর্তাগণের সাথে যোগাযোগ করেছি , তাদের অনেকের মাঝে যেমন হতাশা দেখেছি আবার অনেকের মাঝে আত্মতৃপ্তির পরম সুখের বাতাস বইতেও দেখেছি, এগুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সুবিধা/অসুবিধা প্রত্যেকটি ক্যাডারেই আছে। বিসিএস পরীক্ষা বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা এবং কোটা ও রাজনৈতিক প্রভাবের দূষণ এই প্রতিযোগিতাকে আরও কঠিন করে তুলেছে আর তাই এই পরীক্ষায় নিজের মন মত ক্যাডার(প্রথম পছন্দ) খুব কম লোকই পেয়ে থাকেন । এজন্য সবারই উচিত একটি যুতসই পছন্দক্রম তৈরি করা ও নিজের মনকে এমনভাবে প্রস্তুত করা যে, ঐ ক্রমের যেকোন একটি পেলেই চাকুরি করবেন এটা নিশ্চিত করা, তাহলে নিজের কাজকে ভালোবাসা যাবে এবং এতে চাকুরীজীবী নিজে ও দেশ উভয়ই উপকৃত হবে । যাই হোক, কাজের কথায় আসি, ক্যাডার চয়েছ এর শুরুতে প্রত্যেকের উচিত সবগুলো ক্যাডার সম্বন্ধে নূন্যতম ধারণা নেয়া ও নিজের সঙ্গে যায় সে অনুযায়ী একটি পছন্দক্রম তৈরি করা , আসলে চাকুরীতে ঢোকার আগে একটা ক্যাডার সম্বন্ধে সবকিছু (১০০%) জানা সম্ভব নয়, গত এক বছরে আমি বিভিন্ন ক্যাডারের কম করে হলেও ২৫-৩০ জন (নয়া চাকুরীতে ঢোকা/চাকুরীর মাঝামাঝি অথবা শেষ দিকে আছে/অবসরপ্রাপ্ত ) এর সাথে কথা বলেছি, তাদেরকে নানান ধরনের বাস্তবমুখি কিংবা অদ্ভুত প্রশ্নও করেছি ওসব প্রশ্নের আলোকেই সংক্ষিপ্ত আকারে লেখার চেস্টা করেছি ।

১. পররাষ্ট্রঃ

যেদিন থেকে পৃথিবীতে শাসনতন্ত্র শুরু হয়েছে তার পরপরই শুরু হয়েছে কূটনীতি, আর সবসময়ই কূটনীতিক প্রতিনিধিরা সর্বাধিক শিক্ষিত,মেধাবী ও প্রজ্ঞা সম্পন্ন ব্যাক্তিরাই হয়ে থাকেন ।

সুবিধা-অসুবিধা সমূহঃ

এই ক্যাডারে সাধারণত খুব কম খালি পোস্ট থাকে তাই প্রতিযোগিতা সবচেয়ে বেশি;

জয়েন করার পর থেকে ঢাকায় পররাস্ট্র মন্ত্রণালয়ে পোস্টিং , বিদেশে পোস্টিং হতে অন্তত ৬-৭ বছর বা কাছাকাছি লাগে , বিদেশে পোস্টিং হলে কূটনৈতিক সুবিধাসমূহ পাওয়া যায়;

উচ্চ পদে গেলে এলিট জীবন যাপন করা যায় ,বিদেশে পরিবার এমনকি চাকর পর্যন্ত নেয়া যায় এবং পরিবার সদস্যরা কূটনীতিক না হয়েও কূটনীতিকের মত মর্যাদা সুবিধা ভোগ করেন (এমনকি ভৃত্য পর্যন্ত) ;

এই ক্যাডারে প্রমোশন গ্রোথ অনেক ভাল কারণ কম লোক নেয়া হয় আর বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মিশন সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে;

উচ্চ শিক্ষার সুযোগ অনেক ভাল, বর্তমান পররাস্ট্র সচিব একজন হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েট। উচ্চ শিক্ষা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে জাতিসংঘে প্রেষণে (ডেপুটেশনে) যাওয়ার সুযোগ থাকে; বিদেশে ট্যুর আছে প্রচুর ;

কাজের চাপ তুলনামুলক বেশি; সৎভাবে উন্নত জীবনযাপন সম্ভব;

রাস্ট্রদূত হয়ে কোন দেশে জয়েন করলে এরা “গার্ড অব অনার” পান যা সাধারণত প্রেসিডেন্ট/ সরকার প্রধানরা পেয়ে থাকেন । এক ফরেন ক্যাডার (বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে কর্মরত), স্কাইপিতে আলাপকালে হাস্যচ্ছলে আমাকে বলেছিল, ফরেন ক্যাডার এমন এক ক্যাডার যাদের ওয়ালেট ফাঁকা কিন্তু ঐ ফাঁকাওয়ালেট নিয়েই তারা সারাবিশ্ব ঘুরে বেরাতে পারে । তবে দেশের মাটিতে এদের ক্ষমতার ব্যবহার সীমিত, প্রাক্তন রাস্ট্রদূত হারুন-অর-রশিদের মতে, ” Foreign Cadres contribution to the country may not always be fully appreciated by the public in Bangladesh ” ( কারণ তাদের কাজের খুব কম অংশই জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করা হয়ে থাকে )

২.প্রশাসনঃ

নাম থেকেই বোঝা যায় এর কাম (কাজ), ক্যাডার সার্ভিস শুরুই হয়েছে বলতে গেলে এই

ক্যাডার দিয়ে , এরাই মূলত দেশ চালনার মূল হাতিয়ার বলে থাকেন কেউ কেউ । একটা সময় প্রায় ৯০ ভাগ প্রার্থীই নাকি এই ক্যাডার প্রথম পছন্দে দিত(সূত্রঃ একজন অবসর প্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব), এমনকি এখনো প্রায় ৫০-৬০ ভাগ লোক তাই দেয় ।

সুবিধা-আসুবিধা সমূহঃ

মফস্বলে পোস্টিং এর সম্ভাবনা সচেয়ে বেশি তাই জনগনের সাথে কাজ করার সুযোগও বেশি;

চাকুরিতে ঢুকে ডিসি অফিসে কাজ করা লাগে , ( স্বল্প সংখ্যক অ্যাডমিন ক্যাডার অবশ্য মন্ত্রনালয়ে সহকারি সচিব হিসেবেও কাজ করে থাকেন);

মোটামুটি ৭-৮ বছর পর UNO হওয়া যায়, আর একজন UNO কে উপজেলা পর্যায়ের সরকার নিয়োজিত ‘রাজা’ বললে মনে হয় কেউ কস্ট পাবে না , কারণ UNO হলে বাংলো ও গাড়ি সুবিধা পাওয়া যায়,উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠান/সেমিনার/কর্মশালা ইত্যাদিতে গেস্ট/চীফ গেস্ট হিসেবে যাওয়া লাগে, উপজেলা পর্যায়ে ক্ষমতার ব্যবহার ব্যাপক; ডিসি’রা জেলা লেভেলের প্রশাসক , ডিসি’র কাজ ও সুবিধা সমূহ আশা করি সবাই জানেন;

অ্যাডমিন ক্যাডারের সবচেয়ে ভাল দিক হচ্ছে ভ্যারিয়েশন , এই ক্যাডারের লোকজন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কাজ করার সুযোগ পান , এমনকি চাকুরি শেষ হলে যোগ্যতা ও দক্ষতার (ও রাজনৈতিক) ভিত্তিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রেও এরা এগিয়ে (যেমন পিএসসি’র মেম্বার/চেয়ারম্যান ) ;

প্রচুর স্কলারশিপ থাকায় এদের বিদেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ অনেক বেশি, উচ্চ শিক্ষা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সংস্থাতে প্রেষণে (ডেপুটেশনে বিশ্ব ব্যাঙ্ক, জাতিসঙ্ঘ, ইউনেস্কো,এডিবি ইত্যাদিতে) যাওয়ার সুযোগ অন্য সব ক্যাডারের চাইতে অনেক অনেক বেশি, উল্লেখ্য ডেপুটেশনে অনেক উচ্চ বেতন দেয়া হয় (যেমন জাতিসংঘে প্রারম্ভিক P-5 গ্রেড ইকুইভ্যালেন্ট প্রায় ১ লাখ ডলার);

এমনকি, পররাস্ট্র ক্যাডার না হয়েও অনেকে বিদেশে কূটনৈতিক মিশনে কাজ করার সুযোগ পান, এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেস্টা হওয়ার রেকর্ড ও এই ক্যাডারের লোকের আছে;

এই ক্যাডারে অনেক লোক (যেমন এবার ৩০০, ৩০০/৫৮২ = ৫২% ) নেয়ার কারণে প্রমোশন জটিলতা বেশি, তবে মূলত আশির দশকের ব্যাচ গুলো বেরিয়ে গেলে এই ক্যাডারে প্রমোশন অনেক তরান্বিত হবে বলে সবাই আশা করছেন , তখন আর এই জটিলতা থাকবে না ;

একটা ব্যাপার সবাই খেয়াল করবেন, এখন এই ক্যাডারে প্রমোশন জটিলতা আছে বলে আজ থেকে ২০ বছর পরেও থাকবেই থাকবে এমনটা ধারণা করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না ;

এই ক্যাডারে প্রমোশনের ক্ষেত্রে দক্ষতা (উচ্চ শিক্ষা , বৈচিত্র্যময় কাজের অভিজ্ঞতা) সবচেয়ে বড় যোগ্যতা হিসেবে দেখা হয়, আর এই যোগ্যতা না থাকলে রাজনৈতিক প্রভাবে প্রমোশন হয় ,রাজনৈতিক প্রভাব অনেক বেশি ঠিক আছে কিন্তু দক্ষ লোককে প্রায়রিটি দেয়ার উদাহরন ও অনেক আছে (উদাহরনঃ আকবর আলি খান, সাদাত হুসেন ইত্যাদি আরও অনেক);

এই ক্যাডারে একি ব্যাচের লোকের যেমন উপসচিব হয়ে অবসরে যাওয়ার রেকর্ড আছে তেমনি ঐ ব্যাচেরই একজনের কেবিনেট সচিব হওয়ারও রেকর্ড আছে ,সরকারের সচিব বা সচিব পদমর্যাদার পোস্ট গুলোতে অ্যাডমিন ক্যাডাররাই অধিস্টিত হন (কিছু সেক্টর বাদে);

এই ক্যাডারে কাজের চাপ ভালই তবে দায়িত্ব অনুসারে কাজের চাপ নির্ভর করে;

চাকুরির প্রথম জীবনে (৩-৪ বছর) বৈধ/ অবৈধ বাড়তি আয়ের সুযোগ কম;

রাজনৈতিক চাপ অনেক বেশি, তাই ইচ্ছার বিরুদ্ধেও অনেক সময় অনেক কাজ করা লাগতে পারে (উদাহরন হরতালে মোবাইল কোর্ট );

প্রমোশন পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক লবিং অনেক (রাজনৈতিক সরকারের) সময় অনেক বেশি;

আবার রাজনৈতিকভাবে মোহরকৃত (সীল মারা) ব্যাক্তিগণের বিরোধী দল ক্ষমতায় এলে OSD হওয়ার রেকর্ড ও প্রচুর ।

এই ক্যাডারে যারা সাধারণত বেশি দিন চাকুরি করতে পারে(যেমন প্রথম দিকে যারা বিসিএস দিচ্ছেন) তারাই বেশি লাভবান হয় কারণ তাদের উচ্চ পদে (সচিব বা তদূর্ধ্ব ) যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে ,( যদিও প্রমোশন আরও অনেকগুলো প্যারামিটারের উপর নির্ভর করে );

৩.পুলিশঃ

বাংলাদেশের মানুষ সারাদিন পুলিশকে ঠোলা ঠোলা বলে গালি দেয়, অনেকে ঘুষখোর বলে ঘৃণাও করে, কিন্তু দিন শেষে কিংবা রাত পোহালে কোন বিপদে পড়লে এই পুলিশকেই যখন তখন ফোন দিতে বাধ্য হয়, এথেকেই বোঝা যায় পুলিশ আমাদের সমাজে কতটা প্রয়োজন , তারা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ।

সুবিধা-আসুবিধা সমূহঃ

লজিস্টিক সাপোর্ট বেশ ভাল (যেমন রেশন সুবিধা, গাড়ি সুবিধা , কোয়ার্টার সুবিধা); এই ক্যাডাররা একবারে র (Raw) পাওয়ার প্র্যাক্টিস করতে পারে ; কাজের চাপ সবচাইতে বেশি ( ঈদের দিন ও ডিউটি থাকে ); তবে এই ক্যাডারকে রাজনৈতিক সরকার একবারে কনডম হিসেবে ইউজ করার চেস্টা করে ,আর উপরের দিকে (Ad. DIG থেকে IGP পর্যন্ত) পোস্ট কম হওয়ায় প্রমোশন গ্রোথ একটা লেভেলে গিয়ে আটকে যায়, দুর্বল চিত্তের লোকজনের এই ক্যাডারে না আসাটাই বেটার (According to an SP); যাই হোক এই ক্যাডার সম্বন্ধে ইতোমধ্যে একজন মেধাবী ও স্মার্ট পুলিশ ক্যাডার (২৮ তম বিসিএস এ ৪র্থ) মাশরুফ (মাশফি) ভাই (যিনি এই গ্রুপে আগে অনেক বেশি সক্রিয় ছিলেন ) চমৎকার একটি লেখা লিখে ফেলেছেন তাই আমি আর লিখলাম না, আপনারা তার লেখাটা পড়লেই সর্বাধিক তথ্য পাবেন বলে আশা করি।

কাস্টমসঃ

* কাস্টমস ক্যাডাররা অর্থ মন্ত্রণালয়ের IRD এর একটি ডিভিশন NBR এর একটি উইং (কাস্টমস উইং) এর হয়ে কাজ করেন;

* এই ক্যাডারদের অ্যাডমিন/পুলিশ দের মত পাওয়ার প্র্যাকটিসের সুযোগও একেবারে কম ;

* পোর্টে কাজের চাপ অনেক বেশি এমনকি অনেক সময় নিশ্বাস ফেলার জো থাকে না, তবে VAT এ তুলনামূলক(পোর্টের চেয়ে ) কাজের চাপ কম;

* মানসিক চাপও অনেক বেশি থাকে;

* ঢাকার বাইরে পোস্টিং বেশি ;

* বৈধ উপায়ে প্রচুর টাকা কামানোর সুযোগ রয়েছে, যেমন, চোরাচালান ও ফাঁকি ধরতে পারলে সরকারিভাবে মূল্যভেদে ১০- ৪০ % পর্যন্ত পুরস্কার বা Grant of Rewards দেয়া হয়।

* লজিস্টিক সাপোর্ট বেশ ভাল , যেমন গাড়ি ও বাসস্থান সুবিধা ;

* প্রমোশন গ্রোথ অতিরিক্ত কমিশনার হওয়া পর্যন্ত অনেক ভাল , কিন্তু কমিশনার যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার হওয়ায় অনেকেই ডিএস লেভেলে গিয়ে স্থায়ীভাবে মন্ত্রনালয়ে (পুল সিস্টেমের মাধ্যমে) যাওয়ার চেস্টা করে,

* সামনে যতই দিন আসবে এই ক্যাডারে প্রমশন গ্রোথ কমবে কারণ ১৭-২১ বিসিএস এ এই ক্যাডারে লোক নিয়োগ হয় নি , যার কারণে ২১-২৮ বিসিএস এ জয়েন করা ব্যক্তিগন যে সুবিধা সমূহ পেয়েছেন (মিড লেভেলে অনেক খালি পোস্ট থাকায়), ২৯- চলমান বিসিএস গুলোতে জয়েন করা ব্যক্তিগন সেসব সুবিধা সমূহ পাবেন না এমনকি লজিস্টিক সাপোর্টও (শুরুতেই গাড়ি সুবিধা ) কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে;

* আর মজার ব্যাপার হচ্ছে এই ক্যাডারের বস (NBR এর চেয়ারম্যান) আসে সাধারণত অ্যাডমিন ক্যাডার থেকে;

* ভবিষ্যতে দেশের বাইরে কিছু নিয়োগ সম্ভব হলেও হতে পারে ;

* পুলিশের পর এই ক্যাডারের পাবলিক ইমেজ খারাপ (অনেকর কাছে পুলিশের চেয়েও খারাপ ) , কারণ অতিমাত্রায় দুর্নীতি , অনেক কাস্টমস ইন্সপেক্টরদেরই (২য় শ্রেনীর কর্মকর্তা) অবৈধ আয় দৈনিক গড়ে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্তও নাকি হয়ে থাকে , এ থেকে বুঝে নেয়া যায় এখানে সহকারি কমিশনারদের অবস্থা;

* তবে এই ডিপার্টমেন্টে ইন্টারনাল পলিটিক্সের কথাও শোনা যায়, তাই সততার বিকল্প নাই 😀

* যাদের শুধু টাকায় মন ভরে না , পাওয়ার প্র্যাকটিসেরও প্রবল ইচ্ছা আছে, তাদের এই ক্যাডারে না আসাই ভাল;

* যারা চাকুরির বয়স বেশিদিন পাবেন না (যাদের সর্বশেষ বা শেষের আগের বিসিএস) তারা এ ক্যাডার প্রথমেও দিতে পারেন;

ট্যাক্সঃ

* এরাও অর্থ মন্ত্রণালয়ের IRD এর একটি ডিভিশন NBR এর একটি উইং এর হয়ে কাজ করেন;

* লজিস্টিক সুবিধা ভাল তবে শুরুতে(চাকুরির প্রথমদিকে) কাস্টমসের মত নয়;

* প্রমোশন গ্রোথ ভাল তবে কাস্টমসের মত দ্রুত নয়;

* তবে আবার মজার ব্যাপার হচ্ছে NBR এর মেম্বার হওয়ার ক্ষেত্রে আবার কাস্টমস ক্যাডারদের তুলনায় ট্যাক্স ক্যাডাররা এগিয়ে থাকে ;

* চাকুরির প্রথম দিকে ঢাকার বাইরে পোস্টিং বেশি;

* কাজের চাপ সিজনালি কম বা বেশি , (সিজন বলতে আয়কর রিটার্ন এর সময়);

* প্রশাসনিক ক্ষমতা (সাধারণ) অনেক কম, তবে উচ্চ পদে গেলে কর্পোরেট/ ব্যবসায়ী লেভেলে অনেক ক্ষমতা আছে;

* বৈধ উপায়ে বেশ টাকা কামানো সম্ভব, আয়কর ফাঁকি ধরতে পারলে সরকারিভাবে নির্দিষ্ট শতাংশের Grant of Rewards দেয়া হয়;

* অবৈধ উপায়েও আরও অনেক বেশি আয় সম্ভব

ইকনমিকঃ

* ইকনমিক ক্যাডারে ফরেন ক্যাডারের পর সবচেয়ে বেশী বাইরে যাওয়ার সুযোগ ;

* পুরো চাকুরি জীবন বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে (মেইনলি অর্থ/পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ে ) অর্থাৎ ঢাকায় থাকার সুবিধা;

* বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও ট্রেনিং এর অধিকতর সুযোগ;

* প্রোমোশনের গ্রোথ মাঝামাঝি (দ্রুত ও না / ধীর ও না)

* ডেপুটেশনে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায়(UN,WB,UNESCO,ADB etc.) যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া যায়, (এসব সংস্থা’র বেতন অনেক উচ্চ হয় );

* এই ক্যাডারে বস আসে অ্যাডমিন ক্যাডার থেকে কারণ সর্বোচ্চ পদ ডিভিশনাল চীফ হচ্ছেন অতিঃ সচিব;

(অডিট) নিরীক্ষা ও হিসাবঃ

* সরকারি যত হিসাব-নিকাশ ও তদারকির কাজ আছে তা পালন করে থাকেন এই ক্যাডাররা;

* Tax Payers Money ব্যায়ের ক্ষেত্রে সরকারের Accountibility এবং Transparency নিশ্চিত করেন এই ক্যাডাররা;

* কাজের চাপ মোটামুটি ;

* প্রমোশন গ্রোথ ভাল;

* ট্রেনিং ও ট্যুর আছে (অভ্যন্তরীণ ও বহিঃ);

* এই ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদ CAG একটি সাংবিধানিক পদ ;

* অন্য সব ক্যাডাররাই এই কাডারকে সমীহ করে থাকে কারণ অডিট/হিসাব সব প্রতিষ্ঠানেই হয়ে থাকে , অন্য প্রতিষ্ঠানের ভুল-ত্রুটি ধরাই এদের কাজ, এছারাও অন্য ক্যাডারদের বেতন/পেনশনের জন্যও তারা অডিট ক্যাডারদের সমীহ করে থাকে ;

* সাধারণত ডিভিশনাল শহর গুলোতে পোস্টিং , তবে ঢাকায় পোস্টিং বেশি ;

* কোয়ার্টার ও পরিবহন সুবিধা ভাল; উচ্চ পদে গেলে এ সুবিধা অনেক বেশি ভাল ;

* রাজনৈতিক প্রভাব তুলনামূলক কম ;

আনসারঃ

* কাজের চাপ তুলনামূলক কম;

* লজিস্টিক সুবিধা বেশ ভাল, চাকুরির প্রথম থেকেই গাড়ি সুবিধা পাওয়া যায়, এছাড়া বাসস্থান সুবিধাতো আছেই ;

* নিরিবিলি, তুলনামূলক কম ঝামেলাসম্পন্ন দায়িত্ব ;

* সর্বোচ্চ DG পর্যন্ত হওয়া যায়, উপরের দিকে সব প্রতিরক্ষা বাহিনীর(আর্মি) কর্মকর্তারা দায়িত্বে(বস) থাকেন;

* প্রমোশন গ্রোথ মাঝামাঝি ভাল ;

******* খাদ্য , রেলওয়ে , সমবায় , পরিবার পরিকল্পনা ইত্যাদি আরও ক্যাডারসমূহ নিয়ে আরও লেখা হবে

বিঃদ্রঃ এই লেখাটি এখনো শেষ করা হয়নি, আরও অনেক তথ্য সংযোজন করা হবে, তাই এটাকে সম্পূর্ণ বলে ধরার কোন কারণ নেই; বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিসে চাকুরীরত,সিনিয়র কর্মকর্তা (উপসচিব,যুগ্মসচিব পদের বা তার সমমানের অন্য ক্যাডারের, কাস্টমস/ট্যাক্স জয়েন্ট কমিশনার,কমিশনার) ও অবসরপ্রাপ্ত প্রায় ২৫-৩০ জনের সাক্ষাৎকার থেকে এই লেখাটি লেখা, তাই এখানে ভুল ত্রুটি থাকতেই পারে সেগুলি সবাই দয়া করে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । আর পছন্দ না হলে অনর্থক যুক্তিহীন তর্ক করতে আসবেন না,যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে সব ক্যাডারই ভাল;উল্লেখ্য আমি এখনো কোন ক্যাডার সার্ভিসে চ্যান্স পাই নি ,তাই যারা একথা বলে অনর্থক তর্ক করতে চাইবেন যে, ক্যাডার না হওয়া ছেলের কাছ থেকে কোন ক্যাডার কেমন তা জানা বোকামি,আমি আপনাদেরকে সালামের সহিত “গুরু ও বিশেষজ্ঞ” মেনে এই লেখাটি না পড়ার জন্য বিশেষ বিশেষ অনুরোধ করব;

* যুক্তির সহিত যেকোন যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন ক্ষুদ্র জ্ঞান দিয়ে উত্তর দেয়ার চেস্টা করব ;

* নতুন তথ্য দিয়ে এই লেখাটিকে সুন্দর করে সাজানোর অনুরোধ রইল প্রত্যেক ভাই ও বোনের প্রতি

লিখেছেনঃ Farhad Kabir Sohail





About লেখাপড়া বিডি ডেস্ক 1519 Articles
লেখাপড়া বিডি বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা বিষয়ক বাংলা কমিউনিটি ব্লগ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*