ঢাকা মহানগরীর একই ক্যাচমেন্ট এলাকার ভর্তি পরীক্ষা ভিন্ন ভিন্ন দিনে অনুষ্ঠানের নির্দেশনা দিয়ে বেসরকারি স্কুল, স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ঢাকা মহানগরীর স্কুলগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে স্কুল সংলগ্ন ক্যাচমেন্ট এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করতেও নীতিমালায় বলা হয়।
‘ভর্তির কার্যক্রম অধিকতর স্বচ্ছ ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে এ নীতিমালা প্রণয়ন’ বলে উল্লেখ করে ০২ নভেম্বর,সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ নীতিমালা প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের এন্ট্রি শ্রেণিতে এবং আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে সাধারণভাবে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে।
প্রথম শ্রেণির জন্য জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী ভর্তিতে শিক্ষার্থীর বয়স ৬+ হতে হবে। ভর্তির ঊর্ধ্বসীমা প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করবে। তবে বয়স নির্ধারণে জন্ম নিবন্ধন সনদ দিতে হবে।
শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগে কমিটি যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে পরিচালনা কমিটির সভা আহ্বান করে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ও সময় নির্ধারণ করবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়।
‘তবে একই ক্যাচমেন্ট এলাকার ভর্তি পরীক্ষা ভিন্ন ভিন্ন দিনে ও সময়ে অনুষ্ঠিত হওয়া নিশ্চিত করতে ঢাকা মহানগরীর বিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি থানা/উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নির্ধারণ করবেন’।
নীতিমালায় বলা হয়, প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্ব স্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তির কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ভর্তি কার্যক্রম সুষ্ঠু ও স্বচ্ছতার সঙ্গে করতে হবে। এজন্য এক বা একাধিক কমিটি গঠন করতে পারবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।
ঢাকা মহানগরীর স্কুলগুলোতে ভর্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, স্কুলসমূহে ভর্তির ক্ষেত্রে স্কুল সংলগ্ন ক্যাচমেন্ট এরিয়ার শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করতে হবে। অবশিষ্ট আসন পূর্ববর্তী নিয়ম অনুযায়ী সকলের জন্য উন্মুক্ত।
তবে একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে ক্যাচমেন্ট এরিয়ার ৪০ শতাংশ কোটা প্রযোজ্য হবে না। একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একই ক্যাচমেন্ট এরিয়ায় হলে শিক্ষার্থীরা উভয় প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন করতে পারবে।
ঢাকা মহানগরীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটির সহায়তায় প্রত্যেক স্কুলের ক্যাচমেন্ট এরিয়া নির্ধারণ করবেন। ক্যাচমেন্ট এরিয়া নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে থানা/উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিষয়টির সমাধান করবেন। এতেও সমাধান না হলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার আদেশ চূড়ান্ত হবে বলে নীতিমালায় বলা হয়।
এবারও প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবশ্যিকভাবে লটারি করতে হবে এবং অপেক্ষমান তালিকাও তৈরি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শূন্য আসনে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাক্রম অনুসারে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী বাছাই করতে বলা হয়। জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বোর্ডের প্রস্তুত করা মেধাক্রম অনুসারে নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী বাছাই করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আবেদন ফরমের মূল্য ঢাকা মেট্রোপলিটনসহ এমপিওভুক্ত, আংশিক এমপিওভুক্ত এবং এমপিও-বর্হিভূত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ২০০ টাকা।
সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি সর্বসাকুল্যে মফস্বল এলাকায় ৫০০ টাকা, পৌর(উপজেলা) এলাকায় এক হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় দুই হাজার টাকা, ঢাকা ছাড়া অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় তিন হাজার টাকার বেশি হবে না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার টাকার অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতে পারবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং এমপিও বর্হিভূত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য শিক্ষার্থী ভর্তির সময় মাসিক বেতন, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফি’সহ বাংলা মাধ্যমে সর্বোচ্চ আট হাজার টাকা এবং ইংরেজি মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা গ্রহণ করতে পারবে।
উন্নয়ন খাতে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তিন হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না। একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এক ক্লাস থেকে পরবর্তী ক্লাসে ভর্তির জন্য প্রতি বছর সেশন চার্জ নেওয়া যাবে। তবে পুনঃভর্তির ফি নেওয়া যাবে না।
দরিদ্র, মেধাবী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ভর্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যতোদূর সম্ভব মওকুফের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা এবং তাদের পুত্র-কন্যার জন্য ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধীদের জন্য ২ শতাংশ এবং লিল্লাহ বোডিংয়ের শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করতে হবে।
শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, নির্দেশনার ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পাঠদানের অনুমতি বা একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিলসহ প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি বাতিল করা হবে।
ঢাকা মহানগরীর ভর্তি তদারকির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে কমিটি করে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নীতিমালাটি নিচে হুবুহু তুলে দেওয়া হলোঃ
বেসরকারি স্কুল, স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা ২০১৫
[সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা-২০১৫ ডাউনলোড লিংক]
Leave a Reply