সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই মানুষের মাঝে নতুন কিছু জানার আর জ্ঞান বুদ্ধির চর্চার প্রয়াস লক্ষ করা যাই। প্রাচিন সমাজ ব্যবস্থায় শিক্ষাটাই মুখ্য হয়ে ওঠেনি হয়তো, এটার একটা কারণ হতে পারে ভাষাগত দুর্বলতা এবং তাদের জীবন পরিচালনার ধরণ, প্রাচিনকালে মানুষের নিজেদের মাঝে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল ইশারা বা আকার ইঙ্গিত, পরবর্তীতে সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে ওঠে ভাষা । ভাষাগত দক্ষতা বিদ্ধির ফলে মানুষের জ্ঞান চর্চার পরিধি এবং সুযোগও বৃদ্ধি পায় ।
তবু একটা সমস্যা জ্ঞান বিস্তৃতির পরিধি টা সঙ্কুচিত করে ফেলে, তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় শিক্ষাটা সার্বজনীন ছিলনা,সমাজের উঁচু শ্রেণীর মানুষের পক্ষেই জ্ঞান চর্চাটা সহজ হতো । পরবর্তী সময় মানুষ উপলব্ধি করতে পারে সভ্যতার ক্রমবিকাশ ত্বরান্বিত করার জন্য শিক্ষা বিস্তারের বিকল্প নেই। এই প্রেক্ষাপটেই জ্ঞানবিজ্ঞানের আঁতুড় ঘর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । আপনাদের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট করে ফেলছি হয়তো । আসুন তাহলে জেনে নিই পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে।
আল-কারাউইয়িন (Al-Qarawiyyin) আরবি (جامعة القرويين) পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় । এটি মরক্কের (Morocco) ফেজে অবস্থিত। ফাতিমা আল ফিহরি নামে এক ধনী সম্ভ্রান্ত মহিলা ৮৫৯ সালে উচ্চশিক্ষায় বিশ্বের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি প্রদানকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। তৎকালীন সময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তিক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হত।
শিক্ষাব্যবস্থাঃ প্রথম থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয় এ ধর্মীয় শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেওয়া হতো যার প্রেক্ষিতে আরবি ব্যাকরণ, ভাষা বিজ্ঞান এবং ইসলামিক আইন সম্পর্কিত বিষয়ের উপর অধ্যয়নের সুযোগ ছিল। এছাড়াও ফার্সি ,ইংরেজি এবং বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিষয়ে অধ্যয়ন করা যেত।
সব থেকে মজার বিষয় জেটা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান প্রক্রিয়া ছিল সনাতন পদ্ধতির শিক্ষার্থীদের উপবিত্তকার ভাবে বসে পাঠ নিতে হতো ।
Al-Qarawiyyin বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান শিক্ষার্থী: এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শুরু হয়েছে আধুনিক উচ্চশিক্ষার পদযাত্রা । এই পদ যাত্রার অগ্রপথিক যারা এখান থেকে অধ্যায়ন করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন আর নতুন প্রজন্মের জন্য রেখে গেছেন অকৃত্তিম প্রেরণা, চলুন জেনে নিই তাদের কয়েক জনের নাম।
১। গার্বার্ট অব অভার্গন –(পরবর্তীতে পোপ দ্বিতীয় সিলভেস্টার হন। বাকি ইউরোপে আরবি সংখ্যা পদ্ধতি ও শূণ্যের ধারণার প্রচলন ঘটনার জন্য তাকে কৃতিত্ব দেয়া হয়)
২। ইবনে খালদুন-( একজন আরব মুসলিম পন্ডিত। আধুনিক সমাজবিজ্ঞান,ইতিহাস ও অর্থনীতির জনকদের মধ্যে তাকে অন্যতম বিবেচনা করা হয়।)
৩। মাইমনিদেয়াস –(বিখ্যাত ইহুদি দার্শনিক)।
৪।মুহাম্মাদ আল-ইদ্রিস (বিখ্যাত ভূগোলবিদ)।
৫। জাঁকব গলিউস –( বিখ্যাত গণিতবিদ)।
এছাড়াও , Muhammad Taqi-ud-Din al-Hilali, Abdullah al-Ghumari, Imam al-Bannani, Leo Africanus, Nicolas Cleynaerts, Abd el-Krim el-Khattabi, Allal al-Fassi এর নাম উল্লেখযোগ্য ।
সুপ্রিয় পাঠক সাধ্যমত চেষ্টা করেছি সঠিক তথ্য গুলো জানানোর তবুও ভুল হলে গঠন মূলক সমালোচন করতে ভুলবেন না , আপনাদের Support ই অনুপ্রানিত করবে আর ভালো তথ্যমূলক লেখার। আমার এই ছোট্ট পরিশ্রম সার্থক হবে যদি আপনাদের জ্ঞানপিপাসু মনের জানালাটা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে।
লেখাটি পূর্বে প্রকাশিত হয়েছে বিডিবন্ধু ব্লগে। আমার এ পোস্টটি পছন্দ হলে আপনাদের ইচ্ছা হলেই ঘুরে আসতে পারেন বিডিবন্ধু ব্লগ থেকে। আমার ফেসবুক পেজ এই লিংকে । অবশেষে আমার পোস্টটি পরার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।
Leave a Reply